বাঙলা কলেজে ছাত্রলীগের নির্যাতনে আহত শিক্ষার্থীর পা ভেঙে গেছে
রাজধানীর মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের এক শিক্ষার্থীকে শিবিরকর্মী আখ্যা দিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। নির্যাতনে ওই ছাত্রের পায়ের পাতার হাড় ভেঙে গেছে। মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কলেজটির ইংরেজি বিভাগের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় অনেকে উপস্থিত থাকলেও কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেনি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর।
মারধরে আহত শিক্ষার্থীর নাম হেদায়েতুল্লাহ আল হাদী। তিনি ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। নতুন করে ক্লাসে ফিরলে আবার মারধরের শিকার হওয়ার আশংকা করছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
হেদায়েতুল্লাহ আল হাদী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমি এখন ঢাকা মেডিকেল থেকে বাসায় এসেছি। আমার পায়ের পাতার হাড় ভেঙে গেছে। দু’মাসের মতো হাটতে পারব না।’
ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শিবির সন্দেহে বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগের কর্মীরা আমাকে মেরেছে। আমি কোনো দলের সদস্য নই। একজন সাধারণ শিক্ষার্থী। ছাত্রলীগ কর্মীরা আমাকে মারল, পা ভেঙে ফেলল নিষ্ঠুরভােবে মেরে। আর বারবার তাদেরকে প্রশ্ন করেছি, কেন আপনারা আমাকে মারছেন?’
ভুক্তভোগী এ শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘প্রথম বর্ষের ছেলেদের কয়েকজন সিনিয়র আমাকে মেরেছে। তারা আমাকে ইংরেজি বিভাগের সামনে থেকে ডেকে নিয়ে যায়। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই অতর্কিত আক্রমণ করে। এ হামলায় ১৪-১৫ জন অংশ নেয়। তাদের মধ্যে অন্যতম সজীব ফরাজি। এ সময় লাকী নামে এক শিক্ষিকা এগিয়ে আসেন। তিনি বাধা দিলেও তারা কোনো কথা শোনেনি। এরপর ধাওয়া দিয়ে ভবনের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আরেক দফা পেটানো হয়। এতে পায়ের নিচের হাড় ভেঙে যায়। আহত হাদীকে বাঁচাতে এগিয়ে আসা এক সহপাঠীকে নির্যাতন করেন ছাত্রলীগের কর্মীরা।’
এ ঘটনার পর হাদীর বন্ধুরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন। সেখানে তাঁর পায়ের ভাঙা অংশজুড়ে ব্যান্ডেজ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বাঙলা কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষিকা লাকী আকতার গণমাধ্যমে বলেন, ওই সময় তাঁর কোনো কিছু করার ছিল না। তিনি বলেন, ‘তারা কেন তাকে মারছিল সেটা বুঝতে পারিনি। তবে সেই ছেলে অনিরাপদ ফিল করলে বিভাগে এসে জানাতে পারে। আর এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কি ব্যবস্থা নেবে জানি না। এটা তাদের বিষয়।’
মারধরে নেতৃত্বদানকারী বাঙলা কলেজের পদার্থ বিভাগের ছাত্র সজিব ফরাজির ব্যাক্তিগত ফোন নাম্বারে কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে তিনি এর আগে গণমাধ্যমে বলেন, এ ঘটনায় তাঁর সম্পৃক্ততা নেই। তিনি ঘটনার সময় ছিলেন না। বিষয়টি ফেসবুকে জেনেছেন। প্রতিপক্ষ তাকে ফাঁসাতে এমন কথা বলেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাঙলা কলেজের ছাত্রলীগের পদহীন এ নেতা কলেজটির আবাসিক হলে থাকেন। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলায়। এর আগেও একাধিক ছেলেকে শিবির ও ছাত্রদল আখ্যা দিয়ে মারধর করেছে।
শিক্ষকদের সামনে শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের বিষয়ে জানতে কলেজটির অধ্যক্ষ প্রফেসর জাহাঙ্গীর হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।