জিমে গোপনে নারীর ভিডিও ধারণ, ছাত্রলীগ নেতা বহিষ্কার
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যায়ামাগারে (জিম) দুই নারীর গোপনে ভিডিও ধারণসহ তিন জনকে আটকে রেখে মারধরের ঘটনায় জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি হাবিবুল্লাহ ভূঁইয়াকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়েছে জেলা ছাত্রলীগ।
গতকাল রবিবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল ও সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন শোভন স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। হাবিবুল্লাহ ভূঁইয়া জেলা শহরের মৌলভীপাড়ার ‘বিএস ফিটনেস ক্লাব’ নামের একটি ব্যায়ামাগারের পরিচালক।
একইসঙ্গে তাকে সংগঠন থেকে কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করার জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে সুপারিশ করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এর জবাব লিখিত আকারে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে জেলা ছাত্রলীগের দফতর সেলে সশরীর উপস্থিত হয়ে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আজ সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল বলেন, সংগঠনের নীতি ও আদর্শ পরিপন্থি কার্যকলাপে লিপ্ত থাকায় হাবিবুল্লাহকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়ে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কমিটির সহসভাপতি হাবিবুল্লাহ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে সংগঠনের নীতি ও আদর্শ পরিপন্থি কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠায় সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হলো। সেই সঙ্গে তাকে সংগঠন থেকে কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করার জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে সুপারিশ করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এর জবাব লিখিত আকারে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে জেলা ছাত্রলীগের দফতর সেলে সশরীর উপস্থিত হয়ে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো।
আহত ব্যক্তিদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, গৃহবধূ ও তাঁর বোন ওই ব্যায়ামাগারে নিয়মিত ব্যায়াম করেন। সেখানে মেয়েদের ব্যায়াম করার আলাদা ব্যবস্থা ও পুরুষদের যাওয়ার অনুমতি না থাকায় দুই বোন কয়েক মাস আগে সেখানে ভর্তি হন। দুই দিন আগে তাঁরা নিশ্চিত হন মিতু গোপনে তাঁদের ভিডিও ধারণ করছেন। গত বুধবার বিকেলে ওই গৃহবধূ ও তাঁর বোন ভিডিও ধারণের বিষয়ে মিতুকে জিজ্ঞেস করেন। এ নিয়ে মিতুর সঙ্গে তাঁদের বাগ্বিতণ্ডা হয়। মিতু একপর্যায়ে বিষয়টি হাবিবুল্লাহ ভূইয়াকে জানান। খবর পেয়ে হাবিবুল্লাহ ব্যায়ামাগারে পৌঁছে মিতুকে সঙ্গে নিয়ে ওই দুই বোনের কাছে যান। এ সময় মিতু চুলের মুঠি ধরে ওই গৃহবধূ ও তাঁর বোনকে মারধর শুরু করেন। খবর পেয়ে তাঁদের বাঁচাতে এক স্বজন ব্যায়ামাগারের ভেতরে যান। হাবিবুল্লাহ ও তাঁর সহযোগীরা লোহার রড দিয়ে ওই স্বজনকে বেধড়ক মারধর করে আটকে রাখেন। বিষয়টি জানতে পেরে তাঁদের পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে পৌঁছান। কিন্তু ফটক তালাবদ্ধ থাকায় তাঁরা কেউই ব্যায়ামাগারের ভেতরে ঢুকতে পারেননি। কয়েকজন ভিডিও করে ঘটনাটি ফেসবুকে শেয়ার দেন। সেখান থেকে গৃহবধূর ভাসুর এবং মো. ফয়সাল নামের এক ব্যক্তি ৯৯৯–এ ফোন করে পুলিশের সহায়তা চান। পাশাপাশি গৃহবধূর ভাসুরসহ অন্যান্য লোকজন ঘটনাস্থল থেকে ফোন করে বিষয়টি সদর থানা–পুলিশকে জানান। সন্ধ্যায় সদর থানা–পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মারধরের শিকার ওই দুই বোন ও আহত স্বজনকে উদ্ধার করে।
ঘটনাস্থল থেকে হাবিবুল্লাহ, মিতু ও সাইমকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। গুরুতর আহত হওয়ায় ওই গৃহবধূ, তাঁর বোন ও আহত স্বজন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।
মামলার এজাহারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, ভুক্তভোগী গৃহবধূ ও তার বোন ওই জিমে নিয়মিত ব্যায়াম করেন। গত বুধবার বিকালে তারা দেখেন গোপনে তাদের ভিডিও ধারণ করছেন মিতু। ভিডিও ধারণের বিষয়টি জানতে চাইলে তাদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান। তখন মিতু বিষয়টি হাবিবুল্লাহকে জানান। হাবিবুল্লাহ জিমে এসে মিতুকে সঙ্গে নিয়ে তাদের মারধর শুরু করেন। খবর পেয়ে তাদের বাঁচাতে এক স্বজন এলে তাকেও পিটিয়ে আটকে রাখেন। পরে সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের উদ্ধার করে। সেইসঙ্গে হাবিবুল্লাহ, মিতু ও সাইমকে আটক করা হয়।