টাকা লুটের জন্য সাভারে শিক্ষককে হত্যা, ‘বিভ্রান্ত’ করতে চিরকুট
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২৩, ০৩:৫৪ PM , আপডেট: ২২ আগস্ট ২০২৩, ০৩:৫৪ PM
রাজধানী ঢাকার অদূরে সাভারে সাবেক স্কুলশিক্ষক গোলাম কিবরিয়াকে হত্যায় জড়িত অভিযোগে তিন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। র্যাব বলছে, কিবরিয়ার বাসায় থাকা নগদ অর্থ লুট করতেই তাকে খুন করা হয়। হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিভ্রান্ত করতে লাশের পাশে চিরকুট ফেলে রাখা হয়।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন ইমন খান (২৩), মো. সাগর (২২) ও ছাদেক গাজী (২২)। র্যাব বলছে, তিনজনই কিবরিয়ার পরিচিত। গতকাল সোমবার রাতে যশোর, ঝিনাইদহ ও রংপুর থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
২০ আগস্ট দুপুরে সাভার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ভাটপাড়ার বাসা থেকে কিবরিয়ার হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশের পাশে একটি চিরকুট পাওয়া গিয়েছিল। চিরকুটে কিবরিয়াকে নৈতিক স্খলনের কারণে হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ ছিল। চিরকুটে লেখা ছিল, ‘আমরা ইসলামের সৈনিক’। র্যাব বলছে, এই হত্যার পেছনে কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীর হাত রয়েছে— এমন ধারণা দিতেই খুনিরা চিরকুটে এ কথা লিখেছিল।
গ্রেপ্তার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাবের কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তার ইমন এ হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী। ছয় মাস আগে কিবরিয়ার সঙ্গে ইমনের পরিচয় করিয়ে দেন তার (ইমন) বন্ধু সাগর। সাগরের অটোরিকশায় চড়ে কিবরিয়া বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতেন। এই সূত্রে কিবরিয়ার বাসায় সাগরের যাতায়াত ছিল। পরিচয়ের পর ইমনও কিবরিয়ার বাসায় যেতেন। একপর্যায়ে ইমন ও সাগর জানতে পারেন, কিবরিয়ার বাসায় নগদ টাকা আছে। এই টাকা লুট করতেই কিবরিয়াকে খুনের পরিকল্পনা করেন ইমন।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, স্কুলের শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে কিবরিয়া কয়েক বছর ধরে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়াতেন। পাশাপাশি জমি কেনাবেচার ব্যবসা শুরু করেছিলেন তিনি। তার বাসায় টাকা থাকত। বিষয়টি ইমন জানার পর সাগরকে জানান। পরে তাদের সহযোগী ছাদেককে জানান। ছাদেক ঋণগ্রস্ত থাকায় এই হত্যার পরিকল্পনায় যুক্ত হন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১৯ আগস্ট রাতে কিবরিয়াকে ফোন করে দেখা করার কথা বলেন ইমন। ইমনকে সাভারের ভাটপাড়া এলাকার বাসায় আসতে বলেন কিবরিয়া। রাত পৌনে ১১টার দিকে ইমন ও ছাদেক কিবরিয়ার বাসায় যান। আর সাগরকে অটোরিকশা নিয়ে কিবরিয়ার বাসার আশপাশে থাকতে বলা হয়। কিবরিয়ার বাসায় ইমন ও ছাদেক হালকা নাশতা করেন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়। এ সময় কিবরিয়ার গলা চেপে ধরেন ছাদেক, মুখ চেপে ধরেন ইমন। পরে লুঙ্গি দিয়ে কিবরিয়ার হাত-পা বাঁধা হয়। গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে কিবরিয়ার মৃত্যু নিশ্চিত করেন দুজন।
র্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, কিবরিয়াকে হত্যার পর তার বাসা থেকে টাকা ও মুঠোফোন লুট করা হয়। কিবরিয়ার বিছানার নিচ থেকে চাবি নিয়ে আলমারি খুলে সাড়ে ছয় লাখ টাকা ও চারটি মুঠোফোন লুট করেন ইমন। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে ছাদেক চিরকুট লিখে লাশের পাশে রেখে দেন। কিবরিয়ার বাসা থেকে বেরিয়ে সাগরের অটোরিকশায় চেপে তারা সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যান। সেখানে সাগরকে দেওয়া হয় ৫০ হাজার টাকা। বাকি ৬ লাখের মধ্যে ৩ লাখ টাকা করে ভাগ করে নেন ইমন ও ছাদেক। তারপর তিনজনই আত্মগোপনে চলে যান।