১৬ আগস্ট ২০২৩, ১৮:৫২

প্রতারণার শিকার হয়ে নিজেই প্রতারক বনে যান নজরুল

নজরুল ইসলাম  © ফাইল ছবি

কাস্টমস বিভাগে চাকরি নিতে গিয়ে প্রতারক চক্রের হাতে পড়ে একাধিকবার টাকা খুইয়ে ব্যর্থ হয়েছেন নজরুল ইসলাম (২৯)। এরপর নিজেই ভুয়া কর্মকর্তা বনে গিয়ে একটি প্রতারক চক্র গড়ে তোলেন। কয়েকজন সহযোগীসহ এই প্রতারক চক্রের মূল হোতা নজরুলকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানিয়েছে র‌্যাব।

মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) রাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় র‍্যাব–১০ পরিচালিত এক অভিযানে নজরুল ইসলামসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার এই চক্রে রয়েছেন ওয়ায়েশ করোনী ওরফে সেলিম (৪৭), নাসির উদ্দিন (২৬) ও সৈয়দ মো. এনায়েত (৪৮)। র‌্যাবের অভিযানে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ১টি প্রাইভেট কার, ২টি মোটরসাইকেল ও বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়।

আরও পড়ুনঃ হামলাকারীদের বিচার দাবিতে একাই আমরণ অনশনে আয়াত

প্রতারক চক্রের মূল হোতা নজরুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সফি মিয়ার ছেলে। তিনি স্থানীয় একটি কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করেন। পরবর্তীতে টাকা দিয়ে কাস্টমসে চাকরি নিতে গিয়ে প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে বারবার প্রতারিত হন। বুধবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে কারওয়ানবাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। 

তিনি জানান, প্রথমে ২০১২ সালে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরি পেতে এক প্রতারককে ১১ লাখ টাকা দেন নজরুল। ওই চাকরি না পেয়ে ২০১৩ সালে পুনরায় চাকরির আশায় প্রতারকদের মাধ্যমে নৈশ প্রহরীর আবেদন করে প্রতারিত হন। এরপর আবারও ২০১৭ সালে উচ্চমান সহকারী পদে টাকা দিয়ে চাকরি নিতে গেলে প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েন। কাস্টমসে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সময় বিভিন্ন কর্মকর্তার সান্নিধ্যে এসে এই সংস্থার কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি ভালো ধারণা লাভ করেন।

খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, এরপর সাধারণ মানুষের থেকে অর্থ আত্মসাতের লোভে নজরুল নিজেই গড়ে তোলেন প্রতারক চক্র। এলাকায় নিজেকে তিনি ঊর্ধ্বতন কাস্টমস অফিসার হিসেবে পরিচয় দিতেন। এক সময় তাঁর মাধ্যমে কাস্টমসের পিয়ন, ঝাড়ুদার ও অন্যান্য পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে ৪-৫ জন চাকরি পেয়ে যান। যাদও এসব পদে চাকরি পেতে নজরুলের কোনো হাত ছিল না। কিন্তু চাকরি পাওয়া ব্যক্তিরা নজরুলের মাধ্যমে চাকরি পেয়েছেন বলে এলাকায় প্রচার করতে থাকেন। এভাবে সাধারণ মানুষের বিশ্বস্ততা অর্জন করে তিনি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। গত ২ বছরে ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় ৪-৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় এই চক্র।

কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই অভিযান চালানো হয় বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, প্রায় ২ বছর ধরে এই প্রতারণা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে এই চক্র। প্রতারক চক্রটির মোট সদস্য সংখ্যা ৭ থেকে ৮ জন।

তিনি আরও বলেন, বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে বিদেশ থেকে আসা স্বর্ণ ও মালামাল ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেও প্রতারণা করতেন নজরুল, এভাবে মানুষকে ঠকিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতেন। প্রতারণায় আত্মসাৎকৃত অর্থে তিনি ফ্ল্যাট বুকিং, জমি ক্রয়, বাড়ি ও বিভিন্নভাবে নিজের নামে গড়েছেন অর্থ সম্পদের পাহাড়। 

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে ১৭ জন ভুক্তভোগীর তথ্যে এসেছে। যাদের কাছ থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছে এই চক্র। এলাকায় ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে নজরুল প্রায় ৪-৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জানা গেছে, তবে তদন্তে বাকিটা বের হয়ে আসবে।’