জঙ্গিবাদের ‘সুপ্ত বীজ’ এখনও আছে: ডিএমপি কমিশনার
গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহত পুলিশ সদস্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছেন, দেশে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এর ‘সুপ্ত বীজ’ এখনও আছে।
শনিবার (০১ জুলাই) গুলশান থানার নতুন ভবনের সামনে সহকারী কমিশনার রবিউল করিম ও পরিদর্শক মো. সালাহউদ্দিন খানের ম্যুরালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন-কালে এসব কথা বলেন পুলিশ কমিশনার গোলাম ফারুক।
তিনি বলেন, সাত বছর আগে হলি আর্টিজানে বিদেশি নাগরিকদের অতর্কিতভাবে জঙ্গিরা জিম্মি করে তাদের হত্যা করে। এসময় তাদের উদ্ধার করতে গিয়ে আমাদের দুইজন সিনিয়র পুলিশ সদস্য শহীদ হন। আজকেও আমাদের মনে এইটা দগ্ধ ঘায়ের মত জ্বলে।
জঙ্গিবাদ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি, আমরা বলব যে এইটা নিয়ন্ত্রণে আছে। জেএমবি, নব্য জেএমবিসহ জঙ্গিবাদ নাই বলেও চলে। তবে জঙ্গিবাদের সুপ্ত বীজ লুকিয়ে থাকতে পারে। নতুন কয়েকটি জঙ্গি সংগঠন তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছিল বলেও জানান তিনি।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, নতুন জঙ্গি সংগঠনের মধ্যে ‘শারক্বীয়া’ (জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া) একটা। এই সংগঠনের ডাকে অনেক তরুণ হিজরত করেছিল, পাহাড়ে ও প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। পুলিশ-র্যাব তাদের অনেককে গ্রেপ্তার করেছে। আবার অনেকে ভুল বুঝতে পারে আত্মসমর্পণ করেছেন।
পুলিশ কমিশনার বলেন, দেশি-বিদেশি আন্তর্জাতিক চক্রান্তে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করতে বিগত ২০১৫ ও ১৬ সালে বিভিন্ন জঙ্গি হামলা ঘটানো হয়। হলি আর্টিজান হামলার পর আমাদের উন্নয়ন সহযোগীরা উন্নয়ন কাজ বন্ধ করে দেশ ছেড়ে চলে যেতে থাকে।
ওই হামলায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই ঘটনায় সিটিটিসি তদন্ত করেছে এবং তদন্ত শেষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। যদিও এ ঘটনার অনেক অভিযুক্ত বিভিন্ন সময় জঙ্গি হামলা করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে মারা যান। আর বাকিদের সাজা হয়ে গেছে। আমরা এখন অনেকটা বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি। আশা করি ভবিষ্যতে জঙ্গিমুক্ত বাংলাদেশ ধরে রাখতে পারব।
তিনি বলেন, এটিইউ, সিটিটিসি ও র্যাব জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অনবরত কাজ করে যাচ্ছে। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহ ও খোঁজ খবর নেওয়া কাজ করছে। এছাড়া জঙ্গিবাদের বিষয়ে মানুষ জনকে সচেতন করার লক্ষ্যে আমরা বিভিন্ন সময় নানা প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছি এবং করেছি।
হোলি আর্টিজেন বেকারিতে জঙ্গি হামলার সাত বছর পূর্তিতে শনিবার নিহতদের প্রতি বাংলাদেশ নিযুক্ত বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তারাও শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ওই বাড়ির অস্থায়ী বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেন করেন ভারতীয় হাই কমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা, জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি। ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে উগ্রবাদী একদল তরুণ গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালিয়ে গুলি করে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে।
হামলা ঠেকাতে গিয়ে প্রাণ দেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার রবিউল করিম ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি মো. সালাহউদ্দিন খান।