মামা-ভাগ্নের প্রতারণার ফাঁদ!
মামা যুবদল নেতা আর ভাগ্নে ছাত্রলীগ নেতা। দেশের দুই প্রভাবশালী দলের অঙ্গসংগঠনের নেতা হওয়ার কারণে এলাকায় প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করেন তারা। চাঁদা দিতে না চাইলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুক্তভোগীকে ‘ট্যাগ’ করে প্রকাশ্যে হুমকিও দেন তারা।
এমনই অভিযোগ উঠেছে ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ থানার কৈলাইল ইউনিয়নের তেলেঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা ও ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মিঠু মোল্লা এবং তার ভাগ্নে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের অন্তর্গত শেরে বাংলা থানা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সম্রাট হোসাইন তন্ময়ের বিরুদ্ধে। এ সংক্রান্ত যাবতীয় প্রমাণাদি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের হাতে এসেছে।
জানা যায়, গত ২৩ মার্চ বিকেলে সম্রাট হোসাইন, মিঠু মোল্লাসহ তাদের বেশ কয়েকজন সহযোগী নবাবগঞ্জ থানার কৈলাইল ইউনিয়নের তেলেঙ্গা গ্রামের মৎস্য খামারী আব্দুর রাজ্জাক হিরুর মৎস্য খামারে গিয়ে তার নাম ধরে জোরে জোরে ডাকাডাকি করেন। ভুক্তভোগী খামারী ডাক শুনে অফিস থেকে বের হয়ে আসলে অভিযুক্তরা তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন এবং হিরুর কাছে পাঁচ লাখ চাঁদা দাবি করেন। ওই মূহুর্তে হিরু জানান তার কাছে অতো টাকা নেই। এটা শুনে তারা তাকে মারতে তেড়ে আসে এবং পিস্তল বের করে হুমকি দেন। প্রাণ ভয়ে ওই খামারী তৎক্ষণাত ৫০ হাজার টাকা দেন এবং বাকি টাকা পরে দিতে চাইলে অভিযুক্তরা পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে টাকা দেওয়ার বলে চলে যান। এরপর বিষয়টি জানাজানি হলে এবং চাঁদার টাকা না পেয়ে মিঠু মোল্লা তার ফেসবুক আইডি থেকে আব্দুর রাজ্জাক হিরুকে ট্যাগ করে হুমকি দিয়ে একটি পোস্ট দেন।
সেই পোস্টে মিঠু মোল্লা লিখেন- ‘আমি কিন্তু আমার মতো চলি, আমি কারো মতো চলি না, আমার মটকা গরম হলে কাউকে চিনি না, সতর্কবানী।’ মিঠু ফেসবুকে হুমকি দেওয়ার তার ভাগ্নে সম্রাট একাধিকবার ওই মৎস্য ব্যবসায়ীর সঙ্গে ফেসবুক মেসেঞ্জারে বার্তা দিয়ে কথা বলতে চান। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে মিঠু এবং সম্রাটের লোকজন আইন শৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীকে এই বিষয়ে জানালে তাদের ক্ষতিসাধন করবেন বলেও হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। এই ঘটনায় হিরু এর প্রতিকার চেয়ে মানববন্ধনও করেন। স্থানীয় গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
ভুক্তভোগী আব্দুর রাজ্জাক হিরু বলেন, আমি নবাবগঞ্জ উপজেলা হইতে পুরষ্কারপ্রাপ্ত হিরু মৎস খামারের সত্ত্বাধিকারী এবং ৪৬ নং তেলেঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি। মিঠু, সম্রাটসহ তাদের সহযোগীরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উপলক্ষে আমার কাছ থেকে চাঁদা দাবি করে। আমিও ভয়ে তাদের বিভিন্ন সময় কখনো নগদ ২০ হাজার টাকা, কখনো ১০ হাজার টাকা এবং বিকাশের মাধ্যমে বিভিন্ন পরিমাণে চাঁদা দিয়ে নিজেকে রক্ষা এবং ব্যবসা পরিচালনা করতাম। প্রাণের ভয়ে কখনো বিবাদীদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাইনি। তারা পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবির পর আমি একাধিকবার নবাবগঞ্জ থানায় অভিযোগ ও সাধারণ ডায়েরি করলেও কোনো প্রতিকার পাইনি। মিঠুর বাড়ি ইউনিয়নের পাড়াগ্রাম সিরাজপুর হাটের কাছেই তাদের বাড়ি। তাদের ভয়ে সেখানে আমরা যাই না।
অভিযোগ রয়েছে, চাঁদাবাজি ছাড়াও ছাত্রলীগ নেতা সম্রাট প্রতারণার সঙ্গেও যুক্ত। তিনি তার এলাকার উজ্জ্বল মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে দেড় লাখ টাকা নেন। চাকরি দিতে না পারায় তিনি অগ্রণী ব্যাংকের শ্যামলী বাজার শাখার আমিনুল ইসলাম নামে এক অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের চেকের পাতা ইস্যু করেন। ভুক্তভোগী উজ্জ্বল জানান, তিনি ব্যাংকে গিয়ে চেক ক্যাশ করতে গেলে ব্যাংক থেকে জানানো হয় যে, ওই একাউন্টে টাকা নেই।
অ্যাকাউন্ট হোল্ডার আমিনুল ইসলাম জানান, করোনাকালে সম্রাট মেসে ওঠেন। একদিন তিনি আমার বাসার লকার ভেঙে এই চেকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র চুরি করেন। এ বিষয়ে থানায় জিডিও করেছি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের হাতে আসা বিভিন্ন ছবি ও নথিপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সম্রাট গত বছরের ১ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের পদ পান। তবে এর কয়েক মাস আগে তিনি সাদিয়া আফরোজ নামে এক নারীকে সাত লাখ টাকা মোহরানা দিয়ে বিয়ে করেন। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার এবং মিঠুর মাদক গ্রহণের ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অন্যদিকে, সম্রাটের ভাই তামিম আহম্মেদ পাবেল ঢাকা জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
অভিযোগের বিষয়ে মিঠু মোল্লা বলেন, এটা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার। পূর্ব বিরোধের জের ধরে বরং আব্দুর রাজ্জাক হিরুই আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি কোনো ধরনের চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত নই।
অভিযোগ অস্বীকার করে সম্রাট হোসাইন বলেন, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ। যিনি অভিযোগ করেছেন, তিনি আমার চাচা হন। আমাদের পূর্ব বিরোধের জের ধরে তিনি আমাদের নামে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছেন। বরং তিনি ভূমি দস্যু।
কাবিননামার বিষয়ে তিনি বলেন, কাবিননামাটি ভুয়া। আমার এক মেয়ের সঙ্গে আংটি বদল হয়েছিলো। কিন্তু বিয়ে হয়নি। কাবিননামায় যার সঙ্গে বিয়ে দেখানো হয়েছে, সেটি ভুয়া।