মে’তে সড়কে প্রাণ গেল ৪৬ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থীর
মে মাসে সারাদেশে ৫৬৪টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সড়কে নিহত হয়েছেন ৪৬৮ জন। এছাড়া ১৮৫ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৮১ জন নিহত ও ১১৪ জন আহত হয়েছেন। সব মিলিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৬৮ জন নিহত ও ৭৬৯ জন আহত হয়েছেন। এ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ৪৬ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থীর।
বুধবার (১৪ জুন) সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
এ মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে ঢাকা বিভাগে ১২১ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১১০ জন নিহত ও ১৫১ জন আহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে সিলেট বিভাগে ২৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৮ জন নিহত ও ৬২ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে একই সময়ে রেলপথে ৫০টি দুর্ঘটনায় ৪৩ জন নিহত ও সাতজন আহত হয়েছেন। নৌপথে ১৮ টি দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত, আহত আটজন ও ১৬ জন নিখোঁজ রয়েছেন। আর এ সময়ে সড়ক, রেল ও নৌপথে মোট ৫৬৪টি দুর্ঘটনায় ৫২৭ জন নিহত ও ৭৭৯ জন আহত হয়েছেন।
সড়কে দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তির মধ্যে ১২ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১৮২ জন চালক, ৯১ জন পথচারী, ৫৫ জন পরিবহন শ্রমিক, ৭৫ জন শিক্ষার্থী, ১৩ জন শিক্ষক, ৭৮ জন নারী, ৬৩ জন শিশু, চারজন সাংবাদিক, পাঁচজন চিকিৎসক, দুইজন মুক্তিযোদ্ধা এবং আটজন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে।
নিহতদের মধ্যে পাঁচজন সেনাসদস্য, ১৩৭ জন বিভিন্ন পরিবহনের চালক, ৮৩ জন পথচারী, ৫৩ জন নারী, ৪৫ জন শিশু, ৩৯ জন শিক্ষার্থী, ৩০ জন পরিবহন শ্রমিক, সাতজন শিক্ষক, চারজন চিকিৎসক, দুইজন সাংবাদিক, দুইজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও পাঁচজন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।
এ সময় সড়ক দুর্ঘটনায় সংগঠিত ৬৮৭ টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে। এতে দেখা যায়, ২৮ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২৪ দশমিক ১৬ শতাংশ ট্রাক-পিকাপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ১৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ বাস, ১৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৩ দশমিক ২০ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহেন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা, ৬ দশমিক ১১ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস সড়কে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।
আরও পড়ুন: ৪৩ ঘণ্টা পর গড়াই নদীতে ভেসে উঠল তানভিরের মরদেহ
সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ গাড়িচাপা দেয়ার ঘটনা, ১৫ দশমিক ৩২ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ বিবিধ কারণে, শূন্য দশমিক ৬০ শতাংশ গাড়ির চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে এবং ১ দশমিক ৪১ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনার ধরণ বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ মাসে সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ২৬ দশমিক ৮১ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৩৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ৩০ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এছাড়া সারাদেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১ দশমিক ৪১ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও ১ দশমিক ৪১ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংগঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ মতে, মে সড়ক দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কারণসমূহ
১. ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহনে অতিরিক্ত যাত্রী বহন ও যাত্রীদের অসতর্কতা।
২. দেশের সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেলের অবাধ চলাচল এবং বেপরোয়া গতি।
৩. ব্যাটারিচালিত ও ইঞ্জিনচালিত তিন চাকার যানের ব্যাপক বৃদ্ধি।
৪. জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কে বাতি না থাকা
৫. মহাসড়কের নির্মান ত্রুটি, যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা।
৬. উল্টোপথে যানবাহন চালানো, সড়কে চাদাঁবাজি, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন।
৭. অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালানো।
৮. রেলক্রসিং-এ দায়িত্বরত ব্যাক্তির গাফেলতি। ফিডার রোড এবং আঞ্চলিক রোড থেকে হঠাৎ যানবাহন উঠে আসা।