১৬ মে ২০২৩, ০৯:৫৬

মেরিনের ছাত্র ফারদিনকে দাফনের পর জানা গেল, বাবাও মারা গেছেন

বাবার সঙ্গে ফারদিন আরাফাত স্বাধীন  © সংগৃহীত

নাবিকের ওপর তিন বছরের ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করেছেন ফারদিন আরাফাত স্বাধীন (২৫)। আগামী জুনে মামার সঙ্গে ব্রাজিলের একটি জাহাজে যাওয়ার কথা ছিল তার। সব প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন। এর আগে বাবার সঙ্গে দেখা করার জন্য বরিশালে জাহাজে গিয়েছিলেন। সেখানে দুর্ঘটনার ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিনি।

পরিবারের একমাত্র ছেলে ফারদিনের জানাজা শেষে বাড়ি ফেরেন স্বজনেরা। কান্নার আওয়াজে তখন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কুমিরা কাজিপাড়া এলাকা শোকে স্তব্ধ। এরইমধ্যে রোববার রাত ৩টার দিকে পরিবেশ আরও ভারী হয়ে। কারণ তখন ঢাকা থেকে খবর আসে, ফারদিনের বাবা মোহাম্মদ কুতুব উদ্দিন ভাসানীও (৫৯) মারা গেছেন।

বরিশালের কীর্তনখোলা নদীতে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের জাহাজ এমটি এবাদি-১ ইঞ্জিন রুমে বিস্ফোরণে চিফ ইঞ্জিন ড্রাইভার কুতুব উদ্দিন দগ্ধ হন। চার দিন পর রোরবার রাতে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

একই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ফারদিন (২৫)। এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন পাঁচজন। বার্ন ইনস্টিটিউটে লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন (৫২)। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে তার বাড়ি।

দুর্ঘটনার আগে ফোনে ফারদিন মা’কে বলেছিলেন, ‘আম্মু আমাকে যদি বিয়ে করাতে, তাহলে তোমাকে দেখার মতো মানুষ পেতে।’ কে জানতো, এটিই সন্তানের শেষ কথা মায়ের সঙ্গে। ফারদিনের কোনও ভাই নেই, তিন বোনের বিয়ে হয়েছে। মাকে দেখার মতো কেউ থাকলো না। ৩৩ বছর জাহাজটিত কর্মরত ছিলেন কুতুব উদ্দিন। চলতি বছর অবসর নিয়ে স্ত্রী-সন্তানের পাশে থাকার চিন্তা ছিল তাঁর।

ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরিবারের সঙ্গে কুতুব উদ্দিনের শেষ কথা হয়েছিল। তাঁর আকুতি ছিল, ফারদিনকে তার দাদির কবরের পাশে যেন দাফন করা হয়। চারদিন পর সন্তানের কবরের পাশে তাকেও দাফনের সিদ্ধান্ত নিলো পরিবার। ছেলে ও স্বামীকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ তাহমিনা আক্তার। তাঁকে দেখার জন্য পরিবারে পুরুষ সদস্য নেই। স্বজনেরা তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছেন।

শনিবার রাতে সীতাকুণ্ডের কুমিরায় দাদির কবরের পাশে দাফন করা হয় ফারদিনকে। মামা মোহাম্মদ নিয়াজ মোর্শেদ বলেন, তারা কোনও মামলা করবেন না। মালিকপক্ষের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে তাদের। হাসপাতালের সব খরচ বহন করেছে। তবে এমন দুর্ঘটনা মানা যায় না।