স্ত্রীকে খুনের আগে-পরে পরকীয়া নিয়ে ফেসবুকে যা লিখেছেন ছাত্রলীগ নেতা
ঝালকাঠিতে পরকীয়ার জেরে স্ত্রী সায়মা পারভীন তানহাকে খুনের আগে-পরে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আলী ইমাম খান অনু। আজ সোমবার (১৫ মে) সকাল ১১টার দিকে ঝালকাঠি ইকো পার্কে এই খুনের ঘটনা ঘটে।
গতকাল রবিবার (১৪ মে) স্ত্রী তানহা ফেসবুকে অন্য এক যুবকের সঙ্গে কথা বলতেন, এমন অভিযোগে অনু নিজের ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন।
তিনি লিখেছেন, সুদীর্ঘ সাড়ে চার বছরের ভালবাসা ছিল আমাদের। আলহামদুলিল্লাহ মুসলিম শরীয়াহ অনুযায়ী আমরা দুজন বিবাব বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলাম, ভেবেছিলাম সারাজীবন হয়তো একসাথে থাকব।
কিন্তু বড়ই আফসোস ও পরিতাপের বিষয় হল আমাদের সম্পর্কের মাঝে তৃতীয় ব্যক্তির আবির্ভাব হয়। অতঃপর আমার বউ ধীরেধীরে আমার সাথে দূরত্ব বজায় রেখে আমাকে কেমন জানি এড়িয়ে যেতে থাকে। একদম হুট করেই কোনও প্রকার কোনও অপরাধ ছাড়াই আমাকে ছেড়ে চলে যায়।
তিনি আরও লিখেছেন, আমার বউটা তার মামাতো ভাইয়ের (আসিফ ইকবাল) সাথে সারারাত চ্যাটিং করত। সে আমার বউয়ের সাথে যত প্রকার অশালীন আলাপ-আলোচনা বলেন সব কিছু সবার অগোচরে চালিয়ে গেছেন।
বাংলায় একটা প্রবাদ আছে জানেন তো? চোরের দশদিন আর গেরস্তের একদিন! আমাদের বেলায়ও ঠিক ঘটেছে, তাই আমার বউ আমার চোখ ফাঁকি দিতে পারেনি।
সন্দেহের বশবর্তী হঠাৎ ১৩/০৫/২০১৩ তারিখে সন্ধ্যার অনেক পরে বাসায় আসতে দেখি সামনে দাঁড়িয়ে তার পথ আটকিয়ে তার হাত থেকে ফোন নিয়ে যাই। তারপর সে আমাকে চোরের মতো বার বার অনেক কসম করে অনেক অনুনয় বিনয় করে আমার কাছে ফোন ফেরত চায়। আর বলে যে সে নাকি ম্যাসেজ ডিলেট করবে না! ব্যাপারটা আমি মোটেও বিশ্বাস করলাম না তাকে বাসায় যেতে বলে আমিও বাসায় চলে এলাম বিশ্বাস করেন ভাইয়েরা আমার সারারাত একফোটাও ঘুমাতে পারিনি আমার বউয়ের পরকীয়া প্রেমিকের অশালীন ম্যাসেজ দেখে আর বউয়ের সুড়সুড়ি জাগানিয়া রিপ্লাই দেখে।
পরে ছাত্রলীগ নেতা আলী ইমাম আজ সোমবার ঝালকাঠির ইকোপার্কে তার স্ত্রীকে ডেকে কুপিয়ে খুন করেন এবং পরে খুনের দায় স্বীকার করে ফেসবুকে পোস্ট দেন।
ফেসবুকে তিনি লিখেন, আমার বউ সব সময় আমার সামনে হুজুর সেজে থাকত, এমন আচরণ করতো মনে হয় যেন সে ভাজা মাছটাও উলটে খেতে পারেনা। কিন্তু আজ হঠাৎই আবিষ্কার করলাম আমার বউয়ের আসল ফুটফুটে চরিত্র।
আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছি তুমি তোমার বুকে ওড়না ছাড়া তোমার মামাতো ভাইকে ছবি দিয়েছ কেন? জবাবে সে বলে, খোদার কসম আমি এমনিই দিয়েছি! তারপর আমি যখন তাদের ফ্রিলি কথাবার্তা বলার টপিক সম্পর্কে একটা প্রশ্ন প্রশ্ন করতে থাকি তখন সে তার কোনও উত্তর দিতে পারেনা, বলে আমার সাথে নাকি তার সম্পর্ক অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে! এরপর হঠাৎ করেই দেখি সে তার আইডির পাসওয়ার্ড চেইঞ্জ করে ফেলেছে!
তিনি আরও লিখেন, তারপর আমিও আবার রিকভারি দিয়ে আইডিতে ঢুকি ততক্ষণে সে অনেক ছেলেদের সাথে গুরুত্বপূর্ণ অনেক চ্যাটিং ডিলেট করে ফেলেছে। আমি যেন তার কিছুই না দেখতে পারি সেজন্য কিন্তু সে অন্য সবার ম্যাসেজ ডিলেট করতে গিয়ে সে তার নতুন প্রাণ ভ্রমরার ম্যাসেজ ডিলেট করতে পারেনি। তার আগেই আমি আইডি রিকভারি করতে সক্ষম হয়েছি এবং স্ক্রিনশট রাখতে সক্ষম হয়েছি। কিছুক্ষণ পর সে তার মায়ের নাম্বার থেকে আমাকে হুমকি দিয়ে বলে নারী নির্যাতন আইনে আইসিটি আইনে সে নাকি আমার জীবন ধ্বংস করে দিবে। আ আ আ ওমা একি বলে ...? এতো দেখছি নির্ঘাত চোরের মায়ের বড় গলা!
পরে ছাত্রলীগ নেতা হত্যার কথা উল্লেখ করে লিখেন, অনেক ভেবেচিন্তে আমিও সিদ্ধান্ত নিলাম বিশ্বাসঘাতক বেঈমানের এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোনও অধিকার নেই এজন্য নিজেই নিজের হাতে বউটাকে পরম করুণাময়ের কাছে চিরতরে পাঠিয়ে দিলাম। পরপারে ভাল থেকো বউ, পরকীয়ার মজা এইবার অন্তত বুঝলা।
এছাড়া তিনি আরেক স্ট্যাটাসে লিখেন, আমার বউ পরকীয়ায় আসক্ত। তাই আমি নিজে খুন করেছি। এর জন্য আমি ছাড়া কেউ দায়ী নয়।
এ ঘটনায় ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মহিতুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পরপরই অনু পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। তার দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী কলেজছাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় অনুকে আটক করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, নিহত সায়মা পারভীন ঝালকাঠি সরকারি মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। তার বাবা দিলদার হোসেন শহরের ফকির বাড়ি সড়কের বাসিন্দা। আর জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আলী ইমাম খান অনু নিহতের প্রতিবেশি এবং জেলা শহরের দলিল লেখক দিলদার খান হোসেনের ছেলে।