প্রেমিকার পরিবারের মারধরে প্রেমিকের মৃত্যু, খবর শুনে বাবারও মৃত্যু
কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার মধ্যম মাঝিগাছা গ্রামে মাহিন মিয়া (২০) নামে এক যুবককে ডেকে নিয়ে পিটুনি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রেমিকার বাবা ও চাচার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ রবিবার (৭ মে) দুপুরের দিকে মৃত্যু হয় মাহিন মিয়ার।
এদিকে সন্তানের মৃত্যুর কথা শুনে হার্ট অ্যাটাকে তার বাবা হিরন মিয়াও (৫০) মারা যান। এ ঘটনার পর প্রেমিকার বাবা ও চাচাসহ স্বজনরা ঘরে তালা দিয়ে পালিয়ে গেছে।
জানা গেছে, টাইলস মিস্ত্রির কাজ করা যুবক মাহিনের সঙ্গে ওই ছাত্রীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। যে সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি ওই ছাত্রীর বাবা মুজা মিয়া ও চাচা জাহাঙ্গীর হোসেন। গত বৃহস্পতিবার (৪ মে) দিবাগত রাত ১১টার দিকে মাহিন ওই মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে যায়। খবর পেয়ে মেয়ের চাচা ও বাবা মহিনকে মারধর করে আহত করেন। আহত মাহিনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।
সেখানে তিনদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর আজ সকালে কিছুটা সুস্থ বোধ করলে, তাকে রিলিজ দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বেলা ১১টার দিকে হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যান মাহিন। এ অবস্থায় আবার কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে বাবা হিরণ মিয়াও মারা যান। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। এ ঘটনার পর নিজেদের ঘরে তালা দিয়ে পালিয়ে গেছেন ওই ছাত্রীর অভিযুক্ত বাবা ও চাচাসহ স্বজনরা।
ওই স্কুল ছাত্রীর ভাষ্য, গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে মহিন আমার সঙ্গে দেখা করবে বলে জানায়। কিন্তু আমি অসুস্থ হওয়ায় তার আগেই ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে যাই। হঠাৎ শব্দ শুনে জেগে উঠি। দরজা খুলে বাইরে তাকিয়ে দেখি মাহিনকে মারধর করা হচ্ছে। তার নাকেমুখে রক্ত। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
নিহতের ছোট ভাই মো. আলম জানান, তার বড় ভাই মাহিনের সঙ্গে প্রতিবেশী তন্বী আক্তারের এক বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বৃহস্পতিবার রাতে মাহিনকে তন্বীর বাবা মুজা মিয়া ও চাচা জাহাঙ্গীর হোসেন বাড়িতে ডেকে নিয়ে যায়। পরে মাহিনকে বেদম পিটুনি দিয়ে বেঁধে রাখে। পরে গুরুতর আহত মাহিনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য হাফিজ উদ্দিন বলেন, এই পরিবারটি অত্যন্ত নিরীহ। নিহত ছেলেটি টাইলসের কাজের পাশাপাশি স্থানীয় বাজারে ভাতের হোটেলের ব্যবসা করতো। বৃহস্পতিবার রাতে ডেকে নিয়ে ছেলেটিকে পিটিয়ে আহত করে মেয়েটির বাবা মোজাম্মেল ও চাচা জাহাঙ্গীর। এরপর থেকে ছেলেটি কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। মৃত্যুর খবর শুনে হামলাকারীরা বাড়িঘর তালাবদ্ধ করে পালিয়ে গেছে।
মৃত্যুর খবরে ঘটনাস্থলে আসেন কোতয়ালি মডেল থানার ছত্রখিল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম।
এদিকে, বিকালে ঘটনাস্থলে আসেন কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কামরান হাসান। তিনি বলেন, হামলায় নিহত ছেলেটি বর্তমানে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আছে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এ ঘটনায় মামলা হবে। দোষীদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।