ড্যান্ডিতে শুরু, গাঁজার টানে শেষ হচ্ছে রাহাতদের সোনালী শৈশব

ড্যান্ডিতে আসক্ত পথশিশুরা
ড্যান্ডিতে আসক্ত পথশিশুরা  © প্রতীকী ছবি

ছোটবেলা থেকেই দূর সম্পর্কের এক খালার কাছে বেড়ে উঠেছে রাহাত। খালাতো ভাইয়ের সাথে হাতাহাতির জেরে বয়স ১০ না পেরোতেই বিতাড়িত হতে হয়েছে সেই খালার বাড়ি থেকেও। পরবর্তীতে স্থানীয় এক ব্যক্তির সহায়তায় ঢাকায়ে এসে কাজ শুরু করেন একটি মেকানিকের দোকানে । বর্তমানে কাজের বাইরে রাহাতের অধিকাংশ সময়ই কাটে মাদকের সংস্পর্শে। প্রতিদিন ফার্মগেট ওভারব্রিজ এলাকায় জমে এ মাদকের আড্ডা। মাদকের এ আড্ডায় রাহাত ছাড়াও থাকে ১০ থেকে ১৫ বছর বয়সী আরো প্রায় ৬-৭ জন কিশোর। তাদের সবাই পথশিশু। 

এ বিষয়ে কথা হয় রাহাতের সাথে মাদকের এ আড্ডায় থাকা হাসান নামের অপর এক কিশোরের সাথে। প্রথমে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও পরবর্তীতে হাসান জানান তিনি প্লাস্টিক কুড়িয়ে দিন কাটান। তার বাবা মায়ের বিচ্ছেদ হয়েছে অনেক আগেই। আগে মায়ের কাছে থাকলেও এখন মা-ও আর খোঁজ খবর রাখেন না। আকবর নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে প্রথম ড্যান্ডি (জুতার আঠা থেকে তৈরি মাদক) নামে এক মাদকের সাথে পরিচয় হয় তার। এর কিছুদিন পর এক মাদকের আড্ডায় প্রথম গাঁজা সেবন করেন তিনি। বর্তমানে মাদক গ্রহণ না করলে অসুস্থ বোধ করেন তিনি।

আরো পড়ুন: ববির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের ভুলে ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা

হাসান বলেন, ‘ড্যান্ডি খাইলে খিদা কম লাগে। শান্তিতে ঘুমাইতে পারি। আর এসব না খাইলে মাথা আউলাইয়া যায়। কাম-কাইজ করতে পারি না।’  মাদকের ভয়াবহ প্রভাব সম্পর্কে জানা আছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে হাসান বলেন, ‘ক্ষতি হয় জানি কিন্তু এ নিয়া ভাবার সময় নাই। যা হওয়ারতো হইবোই।’

শুধুমাত্র রাহাত কিংবা হাসান নন বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের গবেষণা অনুযায়ী পথশিশুদের ৮৫ শতাংশই কোনো-না-কোনোভাবে মাদকাসক্ত। 

সরেজমিনে নগরীর ফার্মগেট, মিরপুর, মগবাজার এলাকায় দেখা যায় দিনভরই বিভিন্ন স্পটে মাদক গ্রহণ করছেন ১০ থেকে ১৬ বছর বয়সী পথশিশুরা। বিশেষত সন্ধ্যা নামলেই মাদক গ্রহণকারী পথশিশুদের সংখ্যা বাড়ে। ১৫ বছরের কম বয়সীদের অধিকাংশই ড্যান্ডি সেবন করেন, এছাড়া ১৫ বা তার বেশি বয়সীদের বেশিরভাগ গাঁজায় আসক্ত। আশেপাশে কোনো লোকজন আসতে দেখলেই দ্রুতগতিতে সেই স্থান ত্যাগ করে এসব মাদকাসক্ত শিশু-কিশোররা।

আরো পড়ুন: রাবিতে ভর্তির চূড়ান্ত আবেদন শুরু কাল

মাদক গ্রহণকারী পথশিশুদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের প্রায় সবাই পরিবার বিচ্যুত। ফ্লাইওভার, মেট্রোরেলের নিচে অথবা ওভারব্রিজের ওপরেই রাত কাটে তাদের। অধিকাংশেরই মাদকের সাথে পরিচয় ঘটেছে বন্ধু কিংবা যাদের অধীনে কাজ করে তাদের সূত্রে। এসব পথশিশুদের একটি বড় অংশ মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কেও অবগত নয়। 

এ বিষয়ে তেজগাঁও জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার  মোঃ মাহমুদ খান বলেন, যারা এসব মাদক বিক্রি করেন আমরা তাদের আটকে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। প্রতি মাসেই তেজগাঁও থানায় ৩০-৩৫ টি মাদক মামলা হচ্ছে। তবে পথশিশুদের মাদকাসক্তি প্রতিরোধে আমরা এককথায় অসহায়। কারণ আমরা তাদের শুধুমাত্র আটক করতে পারি কিন্তু পুনর্বাসনের দায়িত্বতো আমাদের নয়।

আরো পড়ুন: জবির জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের আচরণে স্তম্ভিত সবাই

এসময় তিনি আরো বলেন, খোঁজ নিলে দেখবেন এসব পথশিশুদের প্রায় প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই একাধিক মামলাও আছে। আমরা তাদের আটক করি, দুইদিন পর ছাড়া পেয়ে আবার আগের জীবনে ফিরে যায়। এসব পথশিশুদের প্রয়োজন মূলত রিহ্যাবিটেলেশন যা সমাজসেবা অধিদপ্তরের দায়িত্ব। তারা যদি পথশিশুদের মাদকাসক্তি দূর করার বিষয়ে সক্রিয় হয় আমরা তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবো।

এ বিষয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সামাজিক নিরাপত্তা শাখার পরিচালক উপসচিব ড. মোঃ মোকতার হোসেনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া গেছে। পরবর্তীতে সামাজিক নিরাপত্তা শাখার অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ রবিউল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হন নি।


সর্বশেষ সংবাদ