নবম শ্রেণির ছাত্রের ছুরিকাঘাতে দশম শ্রেণির ২ ছাত্র নিহত
পটুয়াখালীর বাউফলে শরীরে পা লাগাকে কেন্দ্র করে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ছুরিকাঘাতে দশম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। এসময় ছুরিকাঘাতে আরেক শিক্ষার্থী আহন হন।
আজ বুধবার (২২ মার্চ) সন্ধ্যায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। এর আগে বুধবার বিকেলে উপজেলার ইন্দ্রকুল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাশে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলো- পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার ইন্দ্রকূল এলাকার বাসিন্দা মিরাজ মোস্তফা আনসারীর ছেলে নাফিজ মোস্তফা আনসারী (১৪) ও একই এলাকার বাবুল হাওলাদারের ছেলে মারুফ হাওলাদার (১৪)। তারা উভয়েই উপজেলার ইন্দ্রকুল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েকদিন আগে উপজেলার পাঙ্গাশিয়া গ্রামে ওয়াজ মাহফিলে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ইন্দ্রকুল উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র মো. মারুফ, মো. সিয়াম, মো. এনামুল ও মো. নাফিসের সঙ্গে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রায়হান, নাইম, হাসিবুলসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর কথা–কাটাকাটি হয়।
আজ বুধবার বিকেল চারটার দিকে বিদ্যালয় ছুটি হলে মারুফ, সিয়াম, এনামুল ও নাফিস বাড়ি ফিরছিল। এসময় বিদ্যালয়ের উত্তর পাশে পাঙ্গাশিয়া সেতুর কাছে পৌঁছালে তাদের ওপর হামলা চালায় নবম শ্রেণির ওই শিক্ষার্থীলা। এ সময় তারা পিটিয়ে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মারুফ, সিয়াম, এনামুল ও নাফিসকে গুরুতর জখম করে।
আরও পড়ুন: ‘আজ গেস্ট রুম থেকে ওর লাশ বের হবে’- কর্মীকে মারধরের পর ছাত্রলীগ নেতা
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান জানান, বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ক্লাস শেষ করে বিকেল ৪টার দিকে তিনি লাইব্রেরিতে গিয়ে বসেন। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ করে দুই শিক্ষার্থী এসে জানায়- নাফিজ, মারুফ ও সিয়ামকে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণের বাইরে একটি ব্রিজের ওপর মারধর করছে দুর্বৃত্তরা। তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, ওই তিন শিক্ষার্থীকে পাশের একটি ফার্মেসিতে নেওয়া হয়েছে।
মিজানুর রহমান বলেন, সেখানে গিয়ে নাফিজ ও মারুফের পেটে গজ-কাপড় পেঁচানো দেখে দ্রুত বাউফল হাসপাতালে নিয়ে যাই। হাসপাতালের চিকিৎসক সিয়ামকে ভর্তি রেখে বাকী দুজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত বরিশাল নিতে বলেন। বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরী বিভাগের চিকিৎসক নাফিজ ও মারুফকে মৃত ঘোষণা করেন।
শেবাচিম হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক মোহাম্মদ কবির আহম্মেদ বলেন, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাদের মৃত্যু হয়েছে।
আরও পড়ুন: বিয়ের দাবিতে ছাত্রলীগ নেতাকে জনসম্মুখে গণধোলাই দিলেন প্রেমিকা
নিহত মারুফের মা আসমা বেগম বলেন, ওর সঙ্গে কারও বিরোধ রয়েছে বলেও জানতাম না। আমি এ হত্যার বিচার চাই। এদিকে, সন্তান হারানোর শোকে আহাজারিতে বার বার মূর্ছা যেতে দেখা যায় নাফিজের মা নার্গিস বেগমকে। নিহত নাফিজের স্বজন আনিসুর রহমান হাওলাদার বলেন, নাফিজ ও মারুফের পেটে এমনভাবে ছুরি মেরেছে যে পেটের ভেতরে হাত ঢুকে যায়!
বিষয়টি নিশ্চিত করে পটুয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, দুদিন আগে পায়ে পা লাগাকে কেন্দ্র করে ইন্দ্রকুল স্কুলের নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে চড়-থাপ্পড়ের ঘটনা ঘটে। এর জেরে বুধবার স্কুল ছুটির পর সংলগ্ন ব্রীজের কাছে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রায়হান, নাইম, হাসিবুলসহ বেশ কয়েকজন অপেক্ষায় থাকে। এসময় দশম শ্রেণির মারুফ, সিয়াম এবং নাফিস সেখান দিয়ে যাওয়ার পথে তাদের ওপর আক্রমণ এবং ছুরিকাঘাত করা হয়। এতে ওই তিনজন গুরুতর আহত হয়।
এদের মধ্যে দুজনকে হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তাদের মৃত্যু হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে বলেও জানান তিনি।