মেডিকেল ভর্তি প্রতারণায় সাবেক অতিরিক্ত সচিব, হাতিয়েছেন লাখ টাকা
মেডিকেলে ভর্তি নামে প্রতারণায় স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সদ্য সাবেক এক অতিরিক্ত সচিবের সম্পৃক্ততার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার নাম নিতিশ চন্দ্র সরকার। তিনি স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ছিলেন। এস এম আনিস নামে এক দালালের মাধ্যমে তিনি মেডিকেল ভর্তিচ্ছুদের থেকে টাকা নিয়ে প্রতারণা করে আসছিলেন।
এর আগে, শুক্রবার মনিপুরি পাড়া থেকে আনিসকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে ২০২৩ সালের চলমান এমবিবিএস পরীক্ষার অনেকগুলো প্রবেশপত্র, বিভিন্ন ব্যাংকের শতাধিক চেক, পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরিপ্রার্থীদের প্রবেশপত্র, বিভিন্ন লিখিত ও অলিখিত নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, একাধিক প্যাড, পাঁচটি ডিজিটাল ও সনাতন স্ট্যাম্প, সিল এবং একটি মুঠোফোন উদ্ধার করেছে ডিবি।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, সর্বশেষ এক শিক্ষার্থীকে বেসরকারি একটি মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়ে দেয়ার নাম করে ৬ লাখ টাকা নিয়েছেন এই অতিরিক্ত সচিব। তবে এ পর্যন্ত কতজন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করাতে পেরেছেন সে তথ্য এখনও জানা যায়নি। মেডিকেলে ভর্তি করিয়ে দেয়া ও টাকা লেনদেনের বিষয়ে এই অতিরিক্ত সচিব ও আনিসের কথোপকথনের একাধিক রেকর্ডও পাওয়া গেছে।
তবে আনিসের সঙ্গে পরিচয় থাকার কথা স্বীকার করলেও প্রতারণায় জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন নিতিশ চন্দ্র সরকার। তিনি বলেন, মেডিকেল কলেজে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে আনিস তার সাহায্য চেয়েছিলেন। তিনি কয়েকটি মেডিকেলে ফোন করে ওই শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য অনুরোধ করেছিলেন। তবে প্রতারণার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেননি।
গ্রেপ্তার আনিসের বরাত দিয়ে ডিবির উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, আনিস এএসসি পাস। তিনি একসময় জুট মিলে কাজ করতেন। রাজধানীর ফার্মগেট ও গ্রিন রোড এলাকায় ভর্তি পরীক্ষার ফরমও বিক্রি করেছেন। একপর্যায়ে তিনি মেডিকেলে ভর্তি প্রতারণায় জড়িয়ে যান। আনিস ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব ছাড়াও জাহিদ নামের আরেক ব্যক্তির জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি বর্তমানে লন্ডনে আছেন।
আরও পড়ুন: রবি অথবা সোমবারে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফল
এদিকে, দেশের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হতে পরীক্ষা দিয়েছে এক লাখ ৩৯ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। সারা দেশের ১৯টি কেন্দ্রে ৫৭টি ভেন্যুতে শুক্রবার সকাল ১০টায় এ পরীক্ষা শুরু হয়। এক ঘণ্টা সময়ের মধ্যে ১০০ নম্বরের এমসিকিউ প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে পরীক্ষার্থীদের।
এবার মেডিকেলে ভর্তির জন্য আবেদন জমা পড়ে এক লাখ ৩৯ হাজার ২১৭ জনের। দেশের ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজের আসন রয়েছে চার হাজার ৩৫০টি। এই হিসাবে প্রতিটি আসনে ভর্তির জন্য লড়েন ৩২ জন শিক্ষার্থী।
ডিবি সূত্র জানায়, মেডিকেলে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার নামে প্রতারণার উদ্দেশ্যে সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে একটি কনসালট্যান্সি ফার্মও খোলেন আনিস নামের ওই ব্যক্তি। তার আগে থেকে এই প্রতারণা করে আসছিলেন জাহিদ। তার মাধ্যমে আনিসের সঙ্গে সাবেক অতিরিক্ত সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ হয়।
আনিস গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন, নিতিশ চন্দ্র সরকার অতিরিক্ত সচিব থাকা অবস্থায় অন্তত ৩০ বার বিভিন্ন কাজে তিনি মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলেন। মন্ত্রণালয়ে প্রবেশের জন্য আনিসকে পাসের ব্যবস্থাও করে দিতেন তিনি।
আনিসের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে ডিবি জানিয়েছে, তিনি মূলত শিক্ষার্থী সংগ্রহের কাজটি করতেন। আর ভর্তির জন্য সংশ্লিষ্ট বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে ফোন করে বলে দিতেন এসব মেডিকেল কলেজের তদারকির দায়িত্বে থাকা ওই অতিরিক্ত সচিব।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, আনিসের নেতৃত্বাধীন প্রতারণা চক্রে সদ্য অবসরে যাওয়া সরকারি একজন কর্মকর্তার নাম এসেছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছি। মেডিকেল কলেজে ভর্তি ছাড়াও বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় দালালি ও প্রতারণা-বাণিজ্য করে আনিস ইতিমধ্যে দুটি হোটেল এবং রাজধানীর মনিপুরি পাড়ায় একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন।