‘তাঁদের শুদ্ধ হওয়া দরকার, শপথ নেওয়া দরকার’
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিজের পক্ষে কাজ করতে হাতে কোরআন শরিফ রেখে তাঁদের শপথ করানোর অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে। এ-সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী নিজেই জনপ্রতিনিধিদের শপথ করানোর দৃশ্যটি নিজের মোবাইল ফোনে ভিডিও করছেন।
গতকাল শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ঢাকায় ন্যাম ভবনের নিজের ফ্ল্যাটে বসে গোদাগাড়ীর পৌর মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানদের শপথ করান ওমর ফারুক চৌধুরী। রবিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) শপথ করানোর এই ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর তিনি দাবি করেন, শপথ করতে কাউকে বাধ্য করা হয়নি। তাঁরা নিজেরাই শপথ করেছেন।
এ আগেও নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে প্রায়ই গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। গত বছর গোদাগাড়ীর এক কলেজ-শিক্ষককে নিজের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে পিটিয়েছিলেন তিনি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্তে ওই শিক্ষককে পেটানোর সত্যতাও মিলেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, ওমর ফারুক চৌধুরী টানা তিনবার রাজশাহী-১ আসনের এমপি থাকার কারণে নানা বিতর্কে জড়িয়েছেন। এ জন্য দলের নেতা-কর্মীদের বড় অংশই তাঁর পক্ষে নেই। এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনও ঘনিয়ে আসছে। এখন তিনি জনপ্রতিনিধিদের নিজের পক্ষে রাখতে কোরআন শরিফে হাত রেখে শপথ করিয়েছেন।
ফাঁস হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, সংসদ সদস্য বসে আছেন। তাঁর সামনে টেবিলে রাখা কোরআন শরিফে হাত রেখে একে একে শপথ করছেন ইউপি চেয়ারম্যানরা। সংসদ সদস্য নিজেই সেই দৃশ্য ভিডিও করে রাখছেন। কোরআনে হাত রেখে গোদাগাড়ীর দেওপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেলকে বলতে শোনা গেছে ‘আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিপক্ষে কোনো দিন যাব না। মাননীয় সংসদ সদস্য আলহাজ ওমর ফারুক চৌধুরীর নির্দেশনা অনুযায়ী এলাকায় দলীয় সকল কার্যক্রম পরিচালনা করব।’ এরপর তিনি থেমে গেলে সংসদ সদস্য বলেন, ‘নৌকার সঙ্গে বেইমানি করব না।’ তখন কোরআনে হাত রেখে সোহেলও একই কথা বলেন।
শপথ করার সময় রাজশাহীর চর আষাড়িয়াদহ ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আপনার সঙ্গে কোনো দিন বেইমানি করিনি। করবও না।’ তখন এমপি বলেন, ‘হাতটা দিয়ে বলেন।’ এরপর ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আপনার কাছে আমার একটা অনুরোধ—আমি দল করেছি কোনো দিন, কখনো শপথ করিনি। আজকে যে শপথ করছি, এর পরে আপনিও আমার মাথার ছাতা হয়ে থাকবেন।’
এভাবে একে একে অন্য চেয়ারম্যানরাও শপথ করেন এবং এরপর উপস্থিত ১১ জনের সঙ্গে ছবি তোলেন সংসদ সদস্য। এই ছবিতে গোদাগাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, গোদাগাড়ী পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অয়েজ উদ্দিন বিশ্বাসসহ গোদাগাড়ীর ৯টি ইউপির চেয়ারম্যানদের দেখা যায়।
এদিকে জনপ্রতিনিধিদের শপথ করানোর ভিডিও ফাঁস হলে নিজের ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে গোদাগাড়ীর দেওপাড়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান, জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ-বিষয়ক সম্পাদক আখতারুজ্জামান আক্তার লিখেছেন, ‘একজন রাজনৈতিক নেতা রাজনৈতিকভাবে কতটা দেউলিয়া হলে তাঁর নিজস্ব নেতা-কর্মীকে অনুগত করে রাখার জন্য পবিত্র ধর্মগ্রন্থ ছুঁয়ে শপথ করাতে হয়!’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী জানান, ‘ওরা শপথ করেছে, ওরাই ভালো বলতে পারবে। এটা কি আমি বলতে পারব? কেউ কী বলেছে যে তাদের লাঠি ধরে শপথ করানো হয়েছে? আমি কীভাবে বলব কেন শপথ করেছে! তাদের মন চেয়েছে, তারা করেছে। তাদের মন চেয়েছে সামনের দিনে ঐক্যবদ্ধ থাকবে, দলের সঙ্গে, নৌকার সঙ্গে থাকবে এবং আমার সঙ্গে থাকবে, এটাও বলেছে। কয়েকজন আগে আমার বিরোধিতা করেছেন। সেই জন্যই তাঁরা মনে করেছেন, তাঁদের শুদ্ধ হওয়া দরকার, শপথ নেওয়া দরকার।’ তবে কাউকে জোর করে শপথ করানো হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি।