প্রশ্ন ফাঁস: বুয়েট অধ্যাপক নিখিলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
ব্যাংকে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষক নিখিল রঞ্জন ধরের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। একই সাথে যশোরের কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে আগামী ৯ মার্চের মধ্যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত।
রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল ইসলাম এই পরোয়ানা জারি করেন।
এর আগে গত ৩১ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপ-পরিদর্শক শামীম আহমেদ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন ।
তদন্ত কর্মকর্তা চার্জশিটে নিখিল ধরকে ‘পলাতক’ দেখিয়েছেন এবং কোনো আদালত থেকে জামিন না নেয়ায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির জন্য আদালতে আবেদন করেন। গত বছরের ১৬ নভেম্বর এই তদন্ত কর্মকর্তা অধ্যাপক নিখিলকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে চার্জশিট দাখিল করেন।এর আগের চার্জশিটে বাদ দেওয়া হয়েছিলো তাকে।
এদিকে, অধ্যাপক নিখিলের পরিবারের ৬৬ ব্যাংক হিসাবে ৪৭ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পেয়েও অর্থপাচার আইনের মামলায় তাকে আসামি করেনি সিআইডি। তবে, প্রশ্ন ফাঁসের লেনদেনের বিস্তারিত তথ্য-প্রমাণ পেলে চার্জশিটে তার নাম যুক্ত করা হবে, বলছে সংস্থাটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে ৫টি সরকারি ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা হয় ২০২১ সালের ৬ নভেম্বর। পরীক্ষা শেষে একাধিক নিয়োগপ্রার্থী অভিযোগ করেন, ১০০টি প্রশ্নের প্রিন্ট করা উত্তরপত্র ফেসবুকে পাওয়া গেছে।
তদন্তে নেমে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে অভিযান চালিয়ে রাজধানীর আহ্ছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটির একাধিক কর্মচারীসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এদের মধ্যে পিয়ন দেলোয়ার আদালতে জবানবন্দিতে জানান, আহ্ছানিয়া মিশন ছাপাখানায় প্রশ্নপত্র ছাপার দিন সেখানে ছিলেন বুয়েটের শিক্ষক নিখিল রঞ্জন ধর। বের হন প্রশ্নের দুটি কপি নিয়ে।
এক বছরের বেশি সময় তদন্ত শেষে আহছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটির কর্মচারী ও ব্যাংকারসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় গোয়েন্দা পুলিশ। তাতে বলা হয়, ছাপাখানা থেকে প্রশ্ন ফাঁসের পর, উত্তর তৈরি করে ২০০ থেকে ৩০০ জনের কাছে বিক্রি করেছে চক্রটি। কিন্তু, অভিযোগপত্রে ছিল না বুয়েটের শিক্ষক নিখিল রঞ্জনের নাম।
পরে, আদালতের নির্দেশে সম্প্রতি দাখিল করা সম্পূরক অভিযোগপত্রে নাম আসে নিখিলের।
ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, ছাপাখানা থেকে প্রশ্ন ফাঁসের পর, উত্তর তৈরি করে ২০০ থেকে ৩০০ জনের কাছে বিক্রি করেছে চক্রটি।
এদিকে, প্রশ্ন ফাঁসে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অনুসন্ধানে সিআইডির মামলাতেও নেই শিক্ষক নিখিল রঞ্জনের নাম। যদিও এই শিক্ষক ও তার পরিবারের ৬৬টি ব্যাংক হিসাবে ৪৭ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য মিলেছে। তবে প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে এই টাকা উপার্জন হয়েছে কি না, এখনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
সিআইডি বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর জানান, প্রশ্ন ফাঁসের সময় বুয়েটের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান ছিলেন অধ্যাপক নিখিল রঞ্জন ধর। তবে মামলায় নাম আসার পর সরিয়ে দেওয়া হয় সেই দায়িত্ব থেকে।