ফেলানী হত্যাকাণ্ড: ন্যায়বিচারের জন্য আর কত সময় লাগবে?

ফেলানীর কবরের পাশে তার বাবা-মা
ফেলানীর কবরের পাশে তার বাবা-মা  © ফাইল ছবি

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর অনন্তপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিল বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানী খাতুন। ২০২৩ সালে এসে আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের এক যুগ পরও ন্যায়বিচার পায়নি তার পরিবার। ন্যায়বিচার না পেয়ে হতাশা ও আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন বাবা-মা। তাদের প্রশ্ন, একটি প্রমাণিত হত্যাকাণ্ডের বিচার পেতে এক যুগ ধরে অপেক্ষা করছি, আর কত সময় লাগবে?

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া অতিক্রমকালে বিএসএসের গুলিতে নিহত হয় ১৪ বছরের কিশোরী ফেলানী। তখন দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলে থাকে তার রক্তাক্ত মরদেহ। বিষয়টি গণমাধ্যমসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ভারতের সীমান্ত ‘নীতি’।  তখন আন্তর্জাতিক চাপের মুখে অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের ‘বিচারের’ ব্যবস্থা করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী। বাহিনীটির বিশেষ কোর্টে দুই দফা বিচারিক রায়ে অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে খালাস দেওয়া হয়। সেই রায় প্রত্যাখ্যান করে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টে রিট আবেদন করেন ফেলানীর পরিবার। কিন্তু আজও সে রিটের শুনানি হয়নি। ফলে আড়ালেই থেকে গেল ফেলানী জন্য ন্যায়বিচারের প্রাপ্তি।

আমার মেয়ে হত্যার বিচার কেন হবে না- এমন আক্ষেপ প্রকাশ করে ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম নুরু জানিয়েছেন, কাউকে তো আঘাত করেনি আমার মেয়ে। এরপরও বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ তাকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করলো। বারোটা বছর পার হয়ে গেলো, তার (অমিয় ঘোষের) কোনও শাস্তি হলো না; যার যায় সে সেটা বোঝে। অনেকেইতো বিচার পায়, তাহলে ফেলানী বিচার পাবে না কেন-এমন প্রশ্ন জানিয়ে তিনি বলেন, বিচার পেলে মেয়েটার আত্মা শান্তি পেতো। মরার আগে বিচারটা দেখে যাইতে চাই আমরাও।

নুরুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের সরকার যেন দ্রুত বিচার কেরে দেয়। আমরা অমিয় ঘোষের শাস্তি দেখতে চাই। বিচার করতে আর কতদিন লাগবে? আর ফেলানীর মা জাহানারা বেগম জানান, এক যুগ হয়ে গেলও আজও বিচার পাইনি। দুই দেশের সরকারের কাছে মেয়ে হত্যার বিচারটা চাই। 

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোরে ফুলবাড়ির অনন্তপুর সীমান্তে কাঁটাতারের ওপর দিয়ে মই বেয়ে আসার সময় বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে কাঁটাতারের ওপর মৃত্যু হয় ফেলানীর। দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টা তার নিথর দেহ কাঁটাতাঁরের ওপর ঝুলে থাকে। কাঁটাতারে ফেলানীর ঝুলন্ত মরদেহের ছবি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে। ফলে ফেলানী হত্যার বিচার এবং সীমান্ত হত্যা বন্ধে ভারতের ওপর চাপ বাড়তে থাকে। 

এসব প্রেক্ষিতে, ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহারে জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে ফেলানী হত্যা মামলার বিচার শুরু হওয়ার পর ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর আসামি অমিয় ঘোষকে খালাস দেয় বিএসএফের বিশেষ কোর্ট। এরপর ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুনরায় শুনানি এবং পূর্বের মতো ২০১৫ সালের ২ জুলাই এই আদালত আবারও অমিয় ঘোষকে খালাসের প্রেক্ষিতে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশন করা হয়েছে একই বছরের ১৪ জুলাই। এরপর ওই বছর ৬ অক্টোবর রিট শুনানি শুরু হয়। ২০১৬ ও ২০১৭ সালে কয়েক দফা শুনানি পেছানের পর বিভিন্ন সময়ে তারিখ নতুন ঠিক করা হলেও এখনো শুনানি করতে পারেনি দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।  


সর্বশেষ সংবাদ