বাবার পর ঢাবিতে মাকে হারিয়ে স্কুলছাত্র রোহান এখন একা
স্কুলছাত্র আরাফাত রহমান খান বাবা মাহবুবুর রহমানকে হারিয়েছে দুই বছর আগে। তাকে নিয়ে তেজগাঁওয়ের বাড়িতে থাকতেন মা রুবিনা আক্তার (৪৫)। তবে তিনিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। ফলে তাঁদের একমাত্র সন্তান রোহানের আর কেউ রইলো না।
বাড়িভাড়ার টাকা আর স্বজনদের সহযোগিতায় রোহানের পড়াশোনা চলছিল। হাজারীবাগে বাবার বাড়ি প্রয়োজনে ছুটে যেতেন রুবিনা। শুক্রবার বিকেলে দেবর নুরুল আমিনের মোটরসাইকেলে সেখানে যাওয়ার সময় মৃত্যু হয় তার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনের সড়কে পেছন থেকে মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয় প্রাইভেট কার। এতে নুরুল আমিন ও রুবিনা রাস্তায় পড়ে যান। রুবিনার কাপড় বাম্পারে জড়িয়ে আটকে যান প্রাইভেটকারের চাকার মাঝখানে। ওই অবস্থায় গাড়িটি দ্রুত টিএসসির দিকে চলে যায়। নীলক্ষেত মোড় পার হয়ে পলাশীর রাস্তায় ঢুকতেই তাঁর পথ আটকায় লোকজন ও টহল পুলিশের গাড়ি।
রুবিনাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। সেখানে জরুরি বিভাগের সামনে আহাজারি করছিলেন তার দুই বোন সুলতানা লিপি ও রোকসানা আক্তার। বলছিলেন, রুবিনার ছেলেটার এখন কী হবে? তাঁকে কে দেখে রাখবে?
আরো পড়ুন: ঢাবিতে নারীকে টেনেহিঁচড়ে নেওয়ার ঘটনাটি ‘হত্যাকাণ্ড’: পুলিশ
তারা জানান, স্বামী মারা যাওয়ায় রুবিনা প্রায়ই বাবার বাড়িতে যেতেন। সুলতানা লিপি বলেন, সকালে রুবিনা বলছিল, বোন আমার শরীরটা ভালো নেই। দুপুরের পর বাসায় আসব। সে আর এলো না। রোকসানা আক্তার বলেন, ছেলেটা তো এতিম হয়ে গেল। রোহানের আর কেউ রইল না। তুই এখন কাকে মা বলে ডাকবি?
তেজগাঁওয়ের একটি স্কুলে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র রোহান। রুবিনার ভাই জাকির হোসেন বলেন, দেড় কিলোমিটার টেনে না নিলে রুবিনা মারা যেত না। চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তিনি। চালক ছিলেন মোহাম্মদ আজহার জাফর শাহ। তাকে পিটিয়ে আহত করেছেন লোকজন। তিনি এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন তবে ২০১৮ সালে তাঁকে চাকরিচ্যুত করে প্রশাসন।