জিম্মি করা হয় বুয়েটছাত্র ফারদিনকে, সঙ্গের যুবকও নিখোঁজ
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশকে হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত কাউকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে হত্যা রহস্যের জট খুলছে। ডেমরা-রূপগঞ্জ সংলগ্ন চনপাড়া বস্তির একটি সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্র এই হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত বলে তথ্য পেয়েছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। সমকালের একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চনপাড়ায় এক নারীর বাসাসংলগ্ন এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। তাঁর বাসাটি বস্তির ৮ নম্বর ওয়ার্ডে। সেই ওয়ার্ডের মাদক সম্রাজ্ঞী হিসেবে পরিচিত তিনি। মাদক স্পটে গিয়ে ফাঁদে পড়েন ফারদিন। এরপর তাঁকে জিম্মি করা হয়েছিল। ফারদিনের সঙ্গে ছিল আরও এক তরুণ। প্রাথমিকভাবে তাঁর নাম পলাশ বলে জানা গেছে। একটি সূত্র বলছে- তাঁর বাড়ি রামপুরায়। পলাশও হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ ওই দিনের পর থেকে পলাশের খোঁজ মিলছে না।
তদন্ত-সংশ্নিষ্ট একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, ফারদিনের ঘটনায় চনপাড়ার মাদকের চক্রে যাদের নাম পাওয়া গেছে তাদের সঙ্গে ওই নারীর সখ্য দীর্ঘদিনের। ঘটনার রাতে ফারদিন কেরানীগঞ্জ, জনসন রোড, এরপর ডেমরা এবং রূপগঞ্জ-সংলগ্ন চনপাড়ায় ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, মোটরসাইকেলে এসব জায়গায় যেতে পারেন তিনি। আর সেই মোটরসাইকেলের চালক ছিলেন পলাশ।
প্রযুক্তিগত তদন্তে দেখা যায়, ফারদিন তাঁর মোবাইল সেটে দুটি অপারেটরের সিমকার্ড ব্যবহার করতেন। গ্রামীণের সিমকার্ড ৪ নভেম্বর বিকেল ৪টার পর থেকে আর সচল ছিল না। ১১টার দিকে তাঁর রবির সিমকার্ড বন্ধ হয়ে যায়। এরপর পৌনে ২টা পর্যন্ত তিনি মেসেঞ্জারে এক বান্ধবীর সঙ্গে চ্যাটিং করেছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, ওই রাতে ফারদিনের পাশাপাশি এমন কেউ ছিলেন যাঁর ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস থেকে ইন্টারনেট কানেকশন নিয়ে বান্ধবীর সঙ্গে চ্যাটিং করা হয়েছে।
পুলিশের অন্তত দু'জন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ফারদিনের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বুশরার সম্পৃক্ত থাকার ব্যাপারে কোনো তথ্য তাঁরা পাননি। ৪ নভেম্বর রাত সোয়া ১০টার দিকে বুশরাকে রামপুরা ব্রিজ এলাকায় নামিয়ে দিয়েছেন ফারদিন। এরপর বুশরা তাঁর বাসায় চলে যান। ওই রাতে তিনি আর বের হননি। এমনকি তথ্যপ্রযুক্তিগত তদন্তে বুশরার সঙ্গে অন্য কারও সন্দেহজনক ফোনালাপ বা মেসেঞ্জারে চ্যাটিং পাওয়া যায়নি। মামলা দায়ের করার আগে কয়েক দফায় ফারদিনের বাবাকে বুশরার ভূমিকার ব্যাপারে বোঝানো হয়েছিল। তবে ফারদিনের বাবা তাঁকে আসামি করার ব্যাপারে অটল ছিলেন।
আরও পড়ুন: ফারদিন হত্যায় নতুন মোড়, তিন কারণ সামনে রেখে চলছে তদন্ত
চনপাড়া বস্তির একাধিক বাসিন্দা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানান, ঘটনার রাতের বিবরণ দিয়েতাঁরা ঘটনাস্থলে তুমুল হট্টগোল ও হৈচৈয়ের শব্দ শুনেছেন। ওই জায়গাটি নবকিশলয় উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে। সেখানে কয়েকজনকে বসে মাদক সেবন করতেও দেখা গেছে। এরপরই বস্তিসংলগ্ন শীতলক্ষ্যার ৫ নম্বর অফিসঘাট এলাকায় তাদের চলে যেতে দেখেন।
ফারদিনের সেখানে যাতায়াতের সূত্র পাওয়া গেলেও তাঁর পরিবার ও সহপাঠীদের মতে, ফারদিনকে কখনও তাঁরা সিগারেট খেতেও দেখেননি। তথ্যপ্রযুক্তিগত তদন্তে বের করার চেষ্টা চলছে, চনপাড়া এলাকায় কতবার ফারদিনের যাতায়াত ছিল। এ দিকে সর্বশেষ গতকাল শুক্রবারও সেখানে অভিযান চালায় ডিবি পুলিশ। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কিনা, এ ব্যাপারে তারা মুখ খোলেনি।
ফারদিনের ছোট ভাই আব্দুল্লাহ বিন নূর তাজিম বলেন, 'তাঁর ভাইয়ের মাদকের সঙ্গে সংশ্নিষ্টতার প্রশ্নই আসে না। মাদক কেন, সিগারেট খেতেও কখনও দেখা যায়নি তাঁকে। চনপাড়ায় কেন গিয়েছিলেন, এটা পুলিশ তদন্ত করে বের করুক। কেউ তাঁকে অপহরণও করতে পারে। ফারদিনের বন্ধু সাজ্জাদ হোসেন ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, 'নারীদের প্রতি ফারদিনের শ্রদ্ধা ছিল অনুকরণীয়। তাঁর সঙ্গে নারীঘটিত কোনো ঝামেলা থাকার কথা নয়।
গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, মামলাটি ডিবি তদন্ত করছে। হত্যাকাণ্ডের পেছনের ঘটনা এবং রহস্য উন্মোচনে নানা বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডের পেছনে যারাই জড়িত থাকুক তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।