আবারও নিখোঁজ মা, আর খুঁজবেন না মরিয়ম
খুলনার মহেশ্বরপাশা থেকে আত্মগোপনে যাওয়ার পর উদ্ধার হয়ে ফের বাড়ি ছেড়ে যাওয়া রহিমা বেগমকে আর খুঁজবেন না বলে জানিয়েছেন তার মেয়ে মরিয়ম মান্নান।
তিনি জানিয়েছেন, মা কোথায় গেছেন জানেন না। ঠিক কবে বাড়ি ছেড়েছেন তাও নিশ্চিত নন। সবশেষ তিনি খুলনা শহরের বয়রায় ছোট মেয়ে আদুরী আক্তারের ভাড়া বাড়িতে ছিলেন।
দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশার বণিকপাড়া থেকে গত ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে প্রথমবার নিখোঁজ হয়েছিলেন রহিমা। প্রতিবেশীদের সঙ্গে জমির বিরোধের জেরে তাকে অপহরণ করা হয়েছে জানিয়ে ফেসবুক, সংবাদমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্লাটফর্মে অভিযোগ করেন মরিয়ম।
এ ঘটনায় মামলাও করা হয়, গ্রেপ্তার হন রহিমার দ্বিতীয় স্বামী ও প্রতিবেশিসহ ৬ জন। ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে একটি বাড়ি থেকে গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে অক্ষত ও স্বাভাবিক অবস্থায় উদ্ধার করা হয় রহিমাকে। আদালতে তিনি অপহরণ হয়েছিলেন বলে জানালেও পরে মরিয়মই জানান, ঘটনাটি অপহরণ ছিল না।
এসব ঘটনা বেশ আলোচনার জন্ম দেয় সারা দেশে। সেটির রেশ কাটতে না কাটতেই ফের লাপাত্তা রহিমা বেগম। মরিয়ম সোমবার দুপুরে ফোনে বলেন, ‘আমার ভাই সাদী আমাকে জানিয়েছিল যে মাকে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে জানতে পারি মাকে পাওয়া যাচ্ছে না। কোথায় গেছে, কেউ জানি না। এবার আর মাকে খুঁজবো না।’
মরিয়ম জানান, ফরিদপুর থেকে উদ্ধার হওয়ার পর আদালত থেকে রহিমাকে আদুরীর জিম্মায় দেয়া হয়। তবে সব ভাই-বোনদের সিদ্ধান্তে রহিমা ও আদুরীকে তিনি ঢাকায় নিয়ে আসেন।
ঢাকায় রহিমার চিকিৎসা চলছিল জানিয়ে মরিয়ম বলেন, ‘মা আদালতে দাবি করেছিল, তাকে অপহরণের সময়ে মারধর করা হয়েছিল। তাই ঢাকাতে নিয়ে তাকে আমরা চিকিৎসকের কাছে যাই। তবে চিকিৎসক জানিয়েছেন তার গায়ে কোনো স্পট নেই। পরে মানসিক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাই। তারা জানিয়েছেন কোনো সমস্যা নাই।
‘তিনি কান্নাকাটি করতেন, বিশৃঙ্খলা করতেন, আমাদের সঙ্গে থাকতে চাইতেন না। পরে গত ১ অক্টোবর ছোট বোন আদুরী ও মাকে খুলনায় পাঠানো হয়। আজ আদুরী জানিয়েছে মা দুই বা একদিন আগে নিখোঁজ হয়েছে। কখন নিখোঁজ হয়েছে, সঠিক টাইম বলতে পারব না।’
রহিমা বদলে গেছেন বলে দাবি করেছেন মরিয়ম। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা ১৩ বছর বয়সে মারা গেছেন। মা আমাদের মানুষ করেছেন। আমরা একটি সুন্দর মাকে চিনতাম। কিন্তু এখন চিনছি না। মায়ের বদনাম করতে পারছি না, তাই আর কিছু মিডিয়াকে বলব না।’
মায়ের বিরুদ্ধ জবানবন্দি দিতে ভাইয়ের আদালতে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি। যদি আদালত থেকে আমাকেও চায়, আমি সব সত্য বলব। আইন-আদালতের ওপর আমাদের আস্থা আছে।’
এদিকে খুলনা পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান জানান, পিবিআই কার্যালয়ে সোমবার দুপুর ১২টার দিকে গিয়ে মায়ের বিরুদ্ধে জবানবন্দি দেয়ার আগ্রহ জানান মরিয়মের ভাই মিরাজ আল সাদী। তাকে সোমবার বিকেলে খুলনা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সরোয়ার আহম্মেদের আদালতে নেয়া হয়। সেখানে তিনি ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
মুশফিকুর বলেন, ‘রহিমা বেগম বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে থেকে মিথ্যা কথা বলেছিলেন। এটা মিরাজের ইগোতে লেগেছে। এ জন্য তিনি স্বেচ্ছায় মায়ের বিচার চেয়ে আদালতে জবানবন্দি দিতে চেয়েছেন।’
রহিমার ফের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ‘আদালত রহিমাকে আমাদের জিম্মায় দেয়নি। তাই তিনি কোথায় আছেন, সেটি আমাদের দেখার বিষয় না। আদালত তাকে তার মেয়ে আদুরীর জিম্মায় দিয়েছিল। তাই তিনি এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।’
আদুরী আক্তারের কাছে তার মায়ের অবস্থান জানতে চাইলে তিনি সরাসরি কোনো জবাব দেননি। পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, ‘এসব আপনাদের কেন বলব?’
রহিমার ছেলে মিরাজ বলেন, ‘মা বোনদের কাছে আছে, নাকি অন্য কোথাও আছে জানি না। সে যদি কোথাও চলে যায় তো যাক। সে মারা গেলেও আমি তাকে খুঁজব না।