২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫:২৯

ভারত-পাকিস্তানের খেলায় ক্রিকেটীয় ঝাঁজ নেই, এখনও কি বলবেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী?

ক্রিকেটে ভারত-পাকিস্তানকে এখনও “চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী” বলা কি আদৌ ঠিক হবে?  © ফাইল ছবি

সুরিয়াকুমার ইয়াদাভ প্রেস কনফারেন্সে সম্প্রতি বললেন, ভারত-পাকিস্তান প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে প্রশ্ন করাই বন্ধ হওয়া উচিত। কারণ বাস্তবে এখানে আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই নেই। সংখ্যাগুলোই যেন তার সাক্ষী। টি-টোয়েন্টিতে এ পর্যন্ত দুই দলের ১৫ লড়াইয়ে ভারতের জয় ১২টি, পাকিস্তানের মাত্র ৩টি।

একসময় কিন্তু দৃশ্যপট ছিল পুরোপুরি ভিন্ন। নব্বইয়ের দশকজুড়ে পাকিস্তানই ভারতকে শাসন করত। সেই ধারাবাহিকতা ছিল এই শতাব্দীর শুরুর দিকেও। ২০০৫ সাল পর্যন্ত ওয়ানডেতে দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে পাকিস্তানের জয় ছিল ৬২টি, ভারতের মাত্র ৩৫টি। কিন্তু ২০০৬ থেকে পাল্টাতে শুরু করে ছবি। পরিসংখ্যান বলছে, এরপর থেকে ওয়ানডেতে ভারতের জয় ২৩টি, পাকিস্তানের ১১টি। নিষ্পত্তি হওয়া সর্বশেষ ছয়টি ওয়ানডেতেই ভারত সহজে জিতেছে—যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতার চেয়ে একতরফা খেলা।

সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলিও এই বাস্তবতাকে সামনে আনেন। গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের পর তিনি বলেছিলেন, “ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে এখন আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই। আমি সবসময় বলি, আমরা এখনও পাকিস্তানকে বিচার করি ওয়াকার ইউনিস, ওয়াসিম আকরাম, জাভেদ মিয়াঁদাদ বা সাঈদ আনোয়ারের মতো কিংবদন্তিদের দিয়ে। কিন্তু পাকিস্তানের সেই অবস্থা আর নেই। এখন পুরোপুরি উল্টো। সম্মান রেখেই বলছি, পাকিস্তান কোনো তুলনাতেই আসে না ভারতের সঙ্গে।”

সত্যিই তো, দুই দেশের মধ্যে “চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী” শব্দটা আসলে মূলত রাজনৈতিক বৈরিতার কারণে। ক্রিকেটে অ্যাশেজের মতো শতবর্ষী প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইতিহাস নেই ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে। রাজনৈতিক উত্তেজনার আবহই এই লড়াইকে আলাদা করে তুলে ধরে, মাঠের ক্রিকেটে রোমাঞ্চের উপাদান এখন কমে গেছে অনেক।

তবুও টিআরপি, বাণিজ্য, দর্শক আগ্রহ—সব মিলিয়ে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ এখনও বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। দেড়শ কোটি মানুষের আবেগ, জাতীয়তাবাদ আর গর্বের প্রতীক এই লড়াই। তাই প্রতিবারই কোটি কোটি দর্শক উপভোগ করে প্রতিদ্বন্দ্বীর স্বপ্ন ভেঙে দেওয়া, কান্না আর উল্লাসের নাটক। এই আবেগের দামই তো ক্রিকেট বোর্ডগুলো কোটি কোটি ডলারে পরিমাপ করে।

কিন্তু মাঠের খেলা? এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বে যেমন ভারত হেসেখেলে জিতেছিল, সুপার ফোরেও একই ছবি—পাকিস্তানকে অনায়াসে হারিয়েছে ভারত। ভারত-পাকিস্তানের ৭৩ বছরের ক্রিকেট প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবার এক অনন্য ঘটনা ঘটল। অতীতে কখনোই কোনো দল অপর দলকে টানা পাঁচ ম্যাচের বেশি হারাতে পারেনি। তবে, এশিয়া কাপের ১৭তম আসরের সুপার ফোরে ভারতের কাছে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে সেই রেকর্ড এবার ভেঙে দিল পাকিস্তান। সর্বশেষ টানা ৬ ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে হারল দ্য গ্রিন ম্যানরা, যা দ্বৈরথের ইতিহাসে পাকিস্তানের জন্য এক লজ্জাজনক অধ্যায়।

পরিসংখ্যান আর সাম্প্রতিক ফর্ম বলছে, ক্রিকেটে ভারত-পাকিস্তানকে এখনও “চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী” বলা কি আদৌ ঠিক হবে? নাকি সেই তকমা এখন কেবল ইতিহাস আর রাজনীতির পাতায় মানায়?