২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭:৫৩

তিনবার রানার্সআপ, এবার কি পারবেন টাইগাররা, সমীকরণ কোন পথে?

২০১২ সালের এশিয়া কাপের স্মৃতি আজও ভক্তদের বুক কাঁপায়  © ফাইল ছবি

এশিয়া কাপ মানেই বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে ভেসে ওঠে অদম্য লড়াই, কান্না আর তিনবার ফাইনালে হারার বেদনার স্মৃতি। কাছাকাছি গিয়েও শিরোপা জয়ের স্বপ্ন পূরণ হয়নি, তবে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এশিয়া কাপই গেঁথে আছে সবচেয়ে বেশি সাফল্যের গল্প নিয়ে।

১৯৮৪ সালে শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ১৬ আসরের মধ্যে ১৫টিতে খেলেছে বাংলাদেশ। শিরোপা ঘরে তোলা হয়নি একবারও, তবে তিনবার রানার্সআপ হওয়ার কীর্তি গড়েছে টাইগাররা। তাই বলা যায়, এই মহাদেশীয় টুর্নামেন্টের সঙ্গে সবচেয়ে গভীর সম্পর্ক বাংলাদেশেরই।

২০১২ সালের এশিয়া কাপের স্মৃতি আজও ভক্তদের বুক কাঁপায়। ঘরের মাঠে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ফাইনালে ওঠে টাইগাররা। শেষদিকে জয়ের সুবাস পাওয়া ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে মাত্র ২ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ। কান্নাভেজা সেই মুহূর্ত সাকিব-মুশফিকের চোখের পানি আজও পোড়ায় সমর্থকদের।

এরপর ২০১৬ সালে প্রথম টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের এশিয়া কাপেও ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ, তবে এবার ভারতের কাছে হারতে হয়। ২০১৮ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আবারও ফাইনাল, প্রতিপক্ষ আবার ভারত। লড়াই করে হেরেছে, তবে অর্জন হয়েছে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মঞ্চে তিনবার রানার্সআপ হওয়ার।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে পরিস্থিতি খুব একটা মসৃণ ছিল না। ২০২২ সালের এশিয়া কাপে গ্রুপ পর্বেই বাদ পড়ে বাংলাদেশ। ২০২৩ সালে পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা যৌথ আয়োজিত আসরে থেমে যায় সুপার ফোরে। তবু লিটন দাসের নেতৃত্বে এবার আবারো সেই ‘সোনার হরিণ’ খোঁজার স্বপ্ন নিয়ে নেমেছে টাইগাররা।

এশিয়া কাপে বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ঘেঁটে জানা গেছে, ১৯৯০ থেকে ২০১০ পর্যন্ত সাত আসরে মাত্র দুটি ম্যাচ জিততে পেরেছিল বাংলাদেশ। যার মধ্যে ২০০৪ সালে হংকংয়ের বিপক্ষে, ২০০৮ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে। তবে ২০১২ সালে সবকিছু পাল্টে যায়। ঘরের মাঠে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে প্রথমবার ফাইনালে ওঠে টাইগাররা। তবে শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ে পাকিস্তানের কাছে ২ রানে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় টাইগারদের। 

২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপেও ফাইনাল খেলে বাংলাদেশ। তবে এবার ভারতের কাছে হেরে রানার্সআপ হয়। ২০১৮ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত আসরে আবারও ফাইনালে ওঠে টাইগাররা। কিন্তু আবারও শেষ হাসি হাসে ভারত। টানা চার আসরে তিনবার ফাইনালে উঠেও শিরোপা জিততে না পারলেও এ অর্জনই এখন পর্যন্ত যে কোনো টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাফল্য।

২০২২ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের এশিয়া কাপে গ্রুপ পর্ব পেরোতেই পারেনি বাংলাদেশ। ২০২৩ সালে পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা যৌথ আয়োজিত আসরে সুপার ফোরে থেমে যায় টাইগাররা। তবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ গোছানো দল বাংলাদেশ। অধিনায়ক লিটন দাসের নেতৃত্বে এবার টাইগাররা নেমেছে ১৬তম এশিয়া কাপ অভিযানে। লক্ষ্য একটাই শিরোপা জয়ের খরা ঘোচানো। তবে কি এশিয়া কাপ দিয়েই শিরোপা খরা ঘুচবে টাইগারদের?

এশিয়া কাপের প্রথম পর্ব খুব একটা ভালো যায়নি বাংলাদেশের। সুযোগ থাকলেও হেসে-খেলে জয় আসেনি, বাড়িয়ে নিতে পারেনি রান রেট। যে ভুলের মাশুল দিতে হয়েছে সমীকরণের মারপ্যাঁচে আটকে। যদিও শেষ পর্যন্ত প্রথম পর্ব কোনোরকমে পেরিয়ে গেছে বাংলাদেশ। যেখানে লিটনদের প্রচেষ্টা থেকেও বড় ভূমিকা ছিল শ্রীলঙ্কার! নিজেদের কাজটা করার পথে বাঁচিয়ে দিয়েছে টাইগারদের স্বপ্ন।

ফলে দু’দিন আগে আধিখ্যেতার কমতি ছিল না শ্রীলঙ্কা দলকে নিয়ে। দ্বৈরথ ভুলে যেন আবদ্ধ হয়েছিল বন্ধুত্বের বন্ধনে। তবে এমনি এমনিই ছিল না, ছিল নিজেদের স্বার্থ। লঙ্কানদের হাতেই যে ছিল বাংলাদেশের ভাগ্য। সমীকরণ এমন দাঁড়ায় যে বাংলাদেশকে সুপার ফোরে উঠতে হলে প্রথম পর্বের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানকে হারাতে হতো শ্রীলঙ্কার। ফলে দ্বৈরথ দূরে ঠেলে সেই ম্যাচে বাংলাদেশের পূর্ণ সমর্থনই পান নিশানকারা।

সমর্থন নিয়ে সেই ম্যাচে আফগানদের ৬ উইকেটে হারিয়ে দেয় শ্রীলঙ্কা। এই জয়ে ‘বি’ গ্রুপের চাম্পিয়ন হয়েই সুপার ফোরে শ্রীলঙ্কা, আর গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে শেষ চারে উঠে বাংলাদেশ। তবে শেষ চারে উঠেই শ্রীলঙ্কার সাথে বন্ধুত্ব ভাঙতে হচ্ছে। শেষ চারের লড়াইয়ে টাইগারদের প্রথম প্রতিপক্ষই যে আসালাঙ্কারা। আজ শনিবার দুবাইয়ে প্রথম ম্যাচ লঙ্কানদের বিপক্ষে খেলতে নামবে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা লড়াই ক্রিকেটেরই সেরা দ্বৈরথের একটি। গেল কয়েক বছর ধরেই চলছে এই ‍দু’দলের মহারণ। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের মতোই ছড়ায় আকর্ষণ। জয়-পরাজয় ছাপিয়ে যেখানে বড় হয়ে দাঁড়ায় সম্মান। নিদাহাস ট্রফি দিয়ে দু’দলের বৈরীতার শুরু, এরপর নানান ঘটনায় বারবার আগুনে ঘি পড়েছে। ভারত বিশ্বকাপের ‘টাইম আউট’ বিতর্ক যেন দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। দু’দলের দ্বৈরথ এখন ক্রিকেটেরই বিজ্ঞাপন।

কিছুদিন আগেই আগেই শ্রীলঙ্কার মাটিতে তাদের বিপক্ষে সিরিজ খেলে এসেছে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে যেখানে ২-১ ব্যবধানে জেতে টাইগাররা। তবে এশিয়া কাপে ঘটেছে উল্টা ঘটনা। প্রথম পর্বে ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচে মুখোমুখি হয় এই দু’দল। যেখানে লঙ্কানদের সাথে পেরে উঠেনি বাংলাদেশ। আবুধাবিতে ৬ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরে যায় টাইগাররা। ১৪০ রানের লক্ষ্য ১৪.৪ ওভারেই পেরিয়ে যায় তারা।

গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচের সব কটিতে জিতে ৬ পয়েন্ট নিয়ে ‘বি’ গ্রুপ সেরা হয়েছে শ্রীলঙ্কা। আর দুই ম্যাচ জেতা বাংলাদেশ ৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপে হয়েছে রানার্সআপ। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার পাশাপাশি ‘এ’ গ্রুপ থেকে সুপার ফোরে উঠেছে ভারত ও পাকিস্তান। এই চার দল নিয়ে সুপার ফোর পর্ব শুরু হচ্ছে আজ। শেষ হবে ২৬ সেপ্টেম্বর। আর টুর্নামেন্ট ফাইনাল ২৮ সেপ্টেম্বর। সুপার ফোরে প্রতিটি দল অপর দলগুলোর সঙ্গে একবার করে খেলবে। অর্থাৎ এই রাউন্ডে সবাই খেলবে তিনটি করে ম্যাচ।

সুপার ফোরে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ আজ , শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুবাইয়ে। একই মাঠে ২৪ সেপ্টেম্বর ভারত ও ২৫ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলবে লিটন দাসের দল। বাংলাদেশের তিনটি ম্যাচই শুরু হবে বাংলাদেশ সময় ৮টা ৩০ মিনিটে।

আজ এশিয়া কাপে দ্বিতীয়বারের মতো মুখোমুখি হচ্ছে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। এবার লড়াইটা সুপার ফোরে। যেখানে বাংলাদেশের সামনে সুযোগ চতুর্থবারের মতো এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠতে। সুপার ফোরের তিন ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ, তাতে অন্তত দুটি ম্যাচ জিততেই হবে। পাশাপাশি রান রেট ভালো রাখতে হবে। আজ যদি শ্রীলঙ্কার সঙ্গে জয়ী হয় বাংলাদেশ, তাহলে সুপার ফোরে এগিয়ে থাকবে টাইগাররা। পরের দুটি ম্যাচের একটি জিতলেই ফাইনালে ওঠার সমূহ সম্ভাবনা থাকবে বাংলাদেশের।