পাকিস্তানিদের সঙ্গে করমর্দন করেননি ভারতীয় ক্রিকেটাররা, নেপথ্যে কী?
ক্রিকেট খেলায় সাধারণত ম্যাচ শেষে দুই দলের খেলোয়াড়রা সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে একে অপরের সঙ্গে করমর্দন করেন। জয়-পরাজয় যা-ই হোক, যত বৈরিতা থাকুক, এটা ক্রিকেটের ঐতিহ্য। তবে এবার এশিয়া কাপে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। ভারত-পাকিস্তানের খেলা শেষে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের সঙ্গে করমর্দন করেননি ভারতের ক্রিকেটাররা। এটা নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
জানা গেছে, ভারতের ক্রিকেটাররা পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের সঙ্গে করমর্দন না করার সিদ্ধান্ত এসেছিল ‘ওপর’ মহল থেকে। সেদিন ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে ভারতীয় অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদবের কথাতেও মোটামুটি সে ইঙ্গিতই পাওয়া গেছে।
ওই প্রসঙ্গে করা প্রশ্নের উত্তরে সূর্য বলেছিলেন, ‘আমরা এখানে শুধু খেলতে এসেছি। সেটাই ছিল আমাদের সিদ্ধান্ত। কেন্দ্রীয় সরকার ও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের ওই সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমরা একমত।’
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধান শরিক বিজেপি। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রশাসক জয় শাহ ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর ছেলে। ভারতীয় ক্রিকেট দলের হেড কোচ গৌতম গম্ভীর বিজেপির সাবেক সংসদ সদস্য। মোটকথা, বিজেপিই ভারতীয় ক্রিকেটের পরিচালক। স্পষ্টতই, দক্ষিণপন্থী বিজেপি চায়নি, এশিয়া কাপে খেলতে এলেও পাকিস্তানিদের সঙ্গে ভারতীয় ক্রিকেটাররা হাত মেলান।
পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের পর ‘অপারেশন সিঁদুর’ নাম দিয়ে পাকিস্তানে ভারত হামলা চালানোর পর এই প্রথম দুই দেশের মধ্যে ক্রিকেট ম্যাচ খেলা হলো। এশিয়া কাপে দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল আমিরাতে।
এর আগে চীনের তিয়ানজিনে এসসিও শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ হাজির থাকলেও তাঁর সঙ্গে মোদির বাক্য বা সৌজন্য বিনিময় হয়নি।
রবিবার টসের সময় ম্যাচ রেফারি হিসেবে জিম্বাবুয়ের সাবেক ক্রিকেটার অ্যান্ডি পাইক্রফ্ট পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আগাকে নাকি নির্দেশ দিয়েছিলেন সূর্যকুমারের সঙ্গে হাত না মেলাতে। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড এক বিবৃতিতে এই কথা জানিয়ে বলেছে, একই নির্দেশ নাকি দেওয়া হয়েছিল সূর্যকুমারকেও। পাকিস্তান এর প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, এই ব্যবহার ক্রিকেটীয় মানসিকতার বিরোধী।
অথচ ঘটনা হলো, গত মঙ্গলবার প্রতিযোগিতা শুরুর আগে সংবাদ সম্মেলনে আট দলের অধিনায়কেরা একই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। সে সময় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড ও এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মহসিন নাকভির সঙ্গে করমর্দন করেছিলেন সূর্যকুমার।
মহসিন নাকভি শুধু ক্রিকেট প্রশাসকই নন, তিনি পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও। মঞ্চ থেকে নামার পর সূর্যকুমার পাকিস্তানি অধিনায়ক সালমান আগার সঙ্গেও হাত মিলিয়েছিলেন। ওই হাত মেলানো নিয়ে ভারতীয় সামাজিক মাধ্যমগুলোয় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
অতি দক্ষিণপন্থীরা প্রশ্ন তোলেন, ‘অপারেশন সিঁদুর’–এর সময় যিনি ভারতের ওপর পরমাণু হামলার হুমকি দিয়েছিলেন, সেই মহসিন নাকভির সঙ্গে সূর্যকুমারের হাত মেলানোর অর্থ কী?’
নাকভি ও সালমানের সঙ্গে সূর্যকুমারের করমর্দনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর এশিয়া কাপ বর্জনের জোরালো দাবিও উঠেছিল। সূত্রের খবর, তারপরই সরকারি নির্দেশ জারি হয়—ম্যাচের আগে-পরে কেউ যেন পাকিস্তানিদের সঙ্গে হাত না মেলান। সূর্যকুমাররা সেই নির্দেশই পালন করেছেন।
শুধু তা-ই নয়, অতি সাবধানী ভারতীয় ক্রিকেটার ও প্রশাসকেরা ম্যাচের পর ভারতীয় দলের ড্রেসিংরুমের দরজাও বন্ধ করে দেন, যাতে পাকিস্তানের কেউ অভিনন্দন জানাতে না আসতে পারেন।
ম্যাচের পর সূর্যকুমার ওই জয় উৎসর্গ করেন ভারতীয় সেনাবাহিনীকে। পেহেলগামকাণ্ডে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের পাশে থাকার বার্তাও দিয়েছিলেন। সমবেদনা জানিয়ে বলেছিলেন, ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাহস তুলনাহীন।