টাইগারদের এশিয়া কাপ আজ শুরু, হংকংকে উড়িয়ে শুভসূচনার প্রত্যাশা
দুদিন আগেই পর্দা উঠেছে এবারের এশিয়া কাপের। বাংলাদেশের এশিয়া কাপের মিশন অবশ্য শুরু হবে আজ। সংযুক্ত আরব আমিরাতে গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে হংকংয়ের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ।
গ্রুপ বি এর ম্যাচে আজ রাত ৮.৩০ মিনিটে আবুধাবিতে মুখোমুখি বাংলাদেশ-হংকং। টুর্নামেন্টে এটি বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ হলেও হংকং মাঠে নেমেছিল উদ্বোধনী দিনেই। সেই ম্যাচে আফগানদের কাছে হেরেছিল তারা। আজ বাংলাদেশের বিপক্ষে হারলেই বিদায় ঘণ্টা বেজে যাবে হংকংয়ের। অন্যদিকে, বাংলাদেশ নিজেদের স্বাভাবিক সেরা খেলাটা খেলতে পারলেই উড়ে যাবে হংকং, এ প্রত্যাশা টাইগারদের।
১৯৮৪ সালে এশিয়া কাপের যে বীজ বপন হয়েছিল, তখন দর্শক কেবলই বাংলাদেশ। অবশ্য, ২ বছর পর মাঠে নামার সুযোগ হয়েছিল। কিন্তু শুরুর গল্পটা কেবলই অন্ধকার গলির মতো। যেখানে প্রতিটি ম্যাচে হার, প্রতিপক্ষের বিজয়োল্লাস, আর সমর্থকদের মুখে নীরব দীর্ঘশ্বাস বাংলাদেশের।
কিন্তু অনিশ্চিত এই নাট্যশালায় কেউই আজীবন দর্শক না। ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জয়ে ওয়ানডে স্ট্যাটাস পায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কাব্যে যোগ হয় নতুন অধ্যায়। অবশ্য, এশিয়া কাপে প্রথম জয়ের জন্য আরও ৭টি বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল টাইগারদের। সবমিলিয়ে ১৮ বছর অপেক্ষা ফুরোয় ২০০৪ আসরে শ্রীলঙ্কার মাটিতে। সেবার কলম্বোতে হংকংয়ের বিপক্ষে প্রথম জয়ের দেখা পায় টিম টাইগার্স। হংকংকে ১১২ রানে হারায় টাইগাররা।
যদিও সেই জয়ের ধারায় পরে কখনো প্রবল স্রোত, কখনো ক্ষীণতার ছোঁয়া লেগেছে। ২০২৩ সাল পর্যন্ত এই টুর্নামেন্টে ৪৮ ম্যাচ খেলে ৯টি ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে এশিয়ার মঞ্চে বাংলাদেশের দলীয় সর্বোচ্চ রান ৩৩৪। ২০২৩ আসরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৮৯ রানে ম্যাচটি জিতেছিল টাইগাররা। অবশ্য, সেবার ওয়ানডে ফরম্যাটে গড়িয়েছিল মহাদেশীয় এই টুর্নামেন্ট। এবার টি-টুয়েন্টি সংস্করণে। এর আগেও দুটি আসর ছোট সংস্করণে হয়েছিল।
২০১১-১২ মৌসুমে প্রথমবার এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠে বাংলাদেশ। মার্চের সেই সন্ধ্যায়, মিরপুর স্টেডিয়ামে তখন হাজারো কণ্ঠে একটাই স্বপ্ন—শিরোপা। কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষে মাত্র ২ রানে হেরে সেই স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছিল। ২০১৬, ২০১৮—দুইবার আরও ফাইনাল, কিন্তু লাল-সবুজের দিকে ভাগ্য যেন হাসেনি। দুবারই ভারতের কাছে হেরে শিরোপা স্বপ্ন ভেঙে যায় টাইগারদের।
২০১৮ সালের দুবাইয়ের সেই ফাইনাল—শেষ বল পর্যন্ত দারুণ লড়াই, কিন্তু শেষ হাসি ম্যান ইন ব্লু’দের। তিনবার ফাইনালে উঠেও কাঙ্ক্ষিত ট্রফি স্পর্শ করা যায়নি; ঠিক যেন ক্লোজ-আপ লেন্সে স্পষ্ট হয়ে ওঠা স্বপ্ন, যা কেবলই হৃদয় ছুঁয়ে দেখা যায়, কিন্তু ধরা যায় না।
মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে ব্যাট হাতে ইতিহাস লিখেছেন মুশফিকুর রহিম। তার ব্যাট থেকে ৮৩০ রান এসেছে; এক আসরে সর্বোচ্চ ৩০২ রান মুশির, যা ২০১৮ সালে করেছিলেন। কিন্তু এবারের মঞ্চে নেই তিনি। সাকিব আল হাসানও তালিকায় আছেন; তবে তিনি কেবল রান নয়, বল হাতেও আধিপত্য দেখিয়েছেন। ৫৭৫ রানের পাশাপাশি আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে ২২ উইকেটের কাকতালীয় গৌরব ভাগাভাগি করেছেন।
এবারের আসরের প্রথম ম্যাচটি আবুধাবিতে, এখানেও প্রতিপক্ষ হংকং—যাদের বিপক্ষেই প্রথম জয় এসেছিল। ১১ সেপ্টেম্বর খেলতে নামবে বাংলাদেশ। পরের দুই প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান বড্ড চেনা।
এশিয়া কাপে এখন পর্যন্ত টাইগারদের জয় মাত্র ৯টি। তবে, সংখ্যাই সব নয়। কিছু কিছু দল ইতিহাস ভাঙার জন্যই গড়া, বাংলাদেশ ঠিক তেমনই এক গল্প—যার প্রতিটি অধ্যায়ে কষ্ট, সাহস আর অদম্য স্বপ্ন; এবারের ক্যাপ্টেন্স ডেতে এমনটাই ইঙ্গিত করেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাস। স্বপ্নের ডানায় ভর করে আরও একবার ময়দানে টাইগাররা। নতুন গল্পের সূচনা হবে কি এবার? নাকি বাড়বে শিরোপার অপেক্ষা? উত্তর জানে, শুধু সময়।