মাঠেই ক্রিকেটের রোমাঞ্চে শিশু-কিশোররা, স্বপ্ন বড় কিছু…
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বসে বাংলাদেশের ম্যাচ উপভোগ করছে অসংখ্য শিশু-কিশোর। বয়স বড়জোর ৭ থেকে ১২ বছরের মধ্যে। কেউ পরিবারের সঙ্গে, কেউ অন্য কোনো মাধ্যমে, এসেছে মাঠে খেলা দেখতে। চোখে-মুখে কৌতূহল, সঙ্গে উচ্ছ্বাস, প্রিয় ক্রিকেটারদের একঝলক দেখতে ব্যাকুলতা। কারও হাতে পতাকা, আবার কারও গায়ে লাল-সবুজের জার্সি। বল মাঠে গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই চিৎকার, বাঁধভাঙা উল্লাস আর স্লোগান; সব মিলিয়ে এক উৎসবের আমেজ।
অবশ্য কেবল খেলা দেখাই নয়, মাঠ আর গ্যালারির এপ্রান্ত-ওপ্রান্ত থেকেই দেশের হয়ে গলা ফাটানো এই শিশু-কিশোরদের হৃদয় মন্দিরে তৈরি হচ্ছে ভবিষ্যতের ক্রিকেটপ্রেম। সেই সঙ্গে দেশপ্রেমও।
শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধিতে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ। খেলাধুলা তরুণ এবং যুবসমাজকে সব খারাপ কাজ থেকে দূরেও রাখে। রাজধানীর বাইরের শিশু-কিশোররা খেলাধুলার সুযোগ পেলেও ঢাকা ও দেশের বিভাগীয় শহরগুলোর অধিকাংশই চার দেয়ালে বন্দি। মা-বাবা, পরিবার শিশু-কিশোরদের সঙ্গে খেলাধুলা কিংবা কোয়ালিটি টাইম তো দূরেই থাক, বরং মোবাইল-ফোনের স্ক্রিনেই ব্যস্ত রেখেই নিজেদের দায়বদ্ধতা থেকে নিস্তার পাওয়ার চেষ্টা করেন।
অবশ্য ব্যতিক্রমও আছে; এমনই কিছু দৃশ্য ৩০ আগস্ট সিলেটের ক্রিকেট বধ্যভূমিতে দেখা গেল। বল বাই বল দেখছেন তারা। চোখে পলকও পড়ছেন অনেকের। তবে এসব কোমলমতি শিশু-কিশোরদের চোখে-মুখে যে উত্তেজনা, তা কেবল খেলার জন্য নয়; এ যেন নিজের দেশ, নিজের দলের জন্য মাঠে নেমে পড়ার মতো অনুভূতি।
৮ বছরের আয়ান বাবা-মার সঙ্গে এসেছেন। পরনে বাংলাদেশের জার্সি। বাবার সঙ্গে উল্লাসও করছেন। ক্রিকেটের ব্যাকারণ সেভাবে বুঝেন না। তবে ঠিক গলা ফাটাচ্ছেন। বললেন, তাসকিন (ভাই) বল করলেই আওয়াজ করি, আজ তিনি ৪ বার উইকেট নিয়েছেন, মনে হচ্ছিল আমিই খেলছি আর উইকেট নিয়েছি।
খানিকটা দূরেই ৬ বছরের আঞ্জমান ও ৮ বছর বয়সী রুমেল। তারাও বাবা-মার সঙ্গেই এসেছেন। রুমেল জানালেন, আজ ক্রিকেট খেলা দেখলেও তিনি রোনালদোর ভক্ত (ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো)। তবে দেশের ফুটবল নিয়ে সেভাবে বলতে পারলেন না। অবশ্য, হামজা চৌধুরীর নাম শুনেছেন।
এসব শিশু-কিশোরদের মধ্যে অধিকাংশই জীবনে প্রথমবার কোনো আন্তর্জাতিক খেলা মাঠে বসে দেখছে। তাদের চোখে, প্রতিটি মুহূর্তই যেন নতুন এক রঙিন অধ্যায়।
অভিভাবকরা বলছেন, শুধু আনন্দ বা বিনোদনের জন্য নয়, বরং ‘দেশ দেশ, সাবাস বাংলাদেশ’ (কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবরের গান) ছন্দে দেশপ্রেম আর ক্রিকেট মাঠের গল্পগুলো সন্তানদের মধ্যে খেলাধুলার প্রতি ভালোবাসা ও দেশাত্মবোধের বীজ বুনে দেয়। এজন্যই সময় করে সন্তানদের নিয়ে আসার চেষ্টা করেছেন।
তবে কারো কারো কণ্ঠে আক্ষেপও ঝরল। ক্রিকেটপ্রেমী আবির অনিক জানালেন, ছেলেবেলায় ক্রিকেট থেকে ডাংগুলি, সবই খেলতাম। তবে এখন মাঠ নেই। খেলার পরিবেশও নেই। আর গ্রামীণ অনেক খেলাই এখন গুঁড়িয়ে যাওয়ার পথে।
এজন্য ক্রীড়াঙ্গনের রাজনীতিকেই দায়ী করলেন ফেনী থেকে বাংলাদেশের ম্যাচ দেখতে আসা আহমেদ আলী। তার ভাষ্যমতে, ক্রিকেট মাঠে এখন রাজনীতি ঢুকে গেছে। একে অন্যের দিকে কাঁদা ছোড়াছুঁড়িতে ব্যস্ত। ক্রিকেটাররাও মাঠের খেলা রেখে, বাইরের দিকেই বেশি মনোযোগী। সরকারও দায়িত্ব নিয়ে মাঠ রক্ষা করতে পারছে না। ফলে, ক্রমেই কমছে মাঠের সংখ্যা।
তবে ঘটনা যাই-ই হোক, দিনশেষে তাঁরায় তাঁরায় সেজে উঠুক দেশের ক্রীড়াঙ্গন, শিশু-কিশোররা মাঠে গন্ধে রোমাঞ্চিত হোক, সংশ্লিষ্টদের কাছে এমনটাই চাওয়া মাঠে আসা দর্শক-সমর্থকদের। সেই সঙ্গে বিশ্বমঞ্চে শিরোপা উল্লাসের স্বপ্ন জাকের আলী অনিক-লিটন দাসরা দ্রুতই বাস্তবায়ন করবেন, এমন প্রত্যাশা ১৬ কোটি বাঙালির।