২২ জুলাই ২০২৫, ২১:৫২

পাকিস্তানের বিপক্ষে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ, প্রথমবার সিরিজ জয় টাইগারদের

পাকিস্তানের-বিপক্ষে-ইতিহাস-গড়ল-বাংলাদেশ-প্রথমবার-সিরিজ-জয়-টাইগারদের  © সংগৃহীত ছবি

পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি জিতে দীর্ঘ ৯ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই জয় ছিল সম্ভাবনার সূচনা। এবার টাইগাররা এগিয়ে গেল আরও এক ধাপ—দ্বিতীয় ম্যাচেও দাপুটে জয় তুলে নিয়ে গড়ল ইতিহাস। এই জয়ে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ নিজেদের করে নিল বাংলাদেশ। বিশ্বমানের প্রতিপক্ষের বিপক্ষে এমন সাফল্য ক্রিকেট ইতিহাসে বাংলাদেশের জন্য এক গর্বের অধ্যায়।

পাকিস্তানের স্কোর ৩০/৬, অভিনব এক ঘটনার সাক্ষী বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা। মনে হচ্ছিল, নিজেদের ইতিহাসে সর্বনিম্ন রানেই গুটিয়ে যাবে পাকিস্তান। তবে ফাহিম আশরাফ ও অভিষিক্ত ধানিয়ালে অপেক্ষা বাড়ে টাইগারদের। রীতিমত কাঁপন ধরাচ্ছিলেন এই জুটি। কিন্তু শেষমেষ এমন কিছু হয়নি। প্রত্যাশিত এক জয়ই পেয়েছে বাংলাদেশ। এতে প্রথমবারের মত পাকিস্তানকে কোনো দ্বি-পাক্ষিক টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারাল স্বাগতিকরা। 

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) মিরপুরে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৩৩ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। জবাবে ইনিংসের ৪ বল বাকি থাকতেই গুটিয়ে যায় পাকিস্তান। এতে এক ম্যাচ হাতে রেখেই ২-০ ব্যবধানে তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতল বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের ১৩৩ রানের জবাবে ইনিংসের প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় সফরকারীরা। মেহেদীর করা ওভারের শেষ বলে রানআউট সাইম আইয়ুব (৪ বলে ১)। পয়েন্টের দিকে ঠেলে ১ রান নিতে চেয়েছিলেন। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। পারভেজ–রিশাদের হাত ঘুরে আসার পর লিটনের গ্লাভসে ভাঙে উইকেট। 

এরপর দ্বিতীয় ওভারে আউট মোহাম্মদ হারিস। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যর্থ হারিসকে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেন শরীফুল। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি প্রথম বলেই আউট হওয়া হারিস।

খানিকক্ষণ পর ফখর জামানও ৮ বলে ৮ রান করে ফেরেন। বাঁহাতি পেসার শরীফুলের বলে উইকেটকিপার লিটন দাসকে ক্যাচ দেন ফখর জামান।

এরপর নিজের প্রথম ওভারে পরপর দুটি ডেলিভারিতে হাসান ও মোহাম্মদ নেওয়াজকে ফিরিয়ে পাকিস্তানের স্কোরটাকে ১৫/৫ বানিয়ে ফেলেন তানজিম হাসান। দুই নেওয়াজকেই উইকেটকিপার লিটন দাসের ক্যাচ বানিয়ে ফেরান তিনি। হাসান ৬ বলে ও মোহাম্মদ নেওয়াজ ১ বল খেলে রানের খাতা স্পর্শ করতে পারেননি। ১৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে লজ্জার রেকর্ডও গড়ে দ্য গ্রিন ম্যানরা। এর আগে, ১৬/৫ ছিল পাকিস্তানের রেকর্ড, গেল বছর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। 

শুরুর ধাক্কা সামলে নেওয়ার আগেই অধিনায়কের উইকেট খুইয়ে ফেলে সফরকারীরা। মেহেদীর বলে লং অনে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে হৃদয়ের মুঠোবন্দী হয়ে ফেরেন ২৩ বলে ৯ রান করা আগা সালমান। 

দলীয় হাফ-সেঞ্চুরির আগেই খুশদিল শাহর উইকেট হারিয়ে ফেলে পাকিস্তান। জীবন পেয়ে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি খুশদিল। মেহেদীর বলে এলবিডব্লু হয়ে ১৩ রানে ও দলীয় ৪৭ রানে ফেরেন তিনি।

আব্বাস আফ্রিদিকে (১৩ বলে ১৯) বোল্ড করে টাইগারদের অষ্টম উইকেট এনে দেন শরীফুল। অবশ্য ওভারের শেষ ডেলিভারিতেও সুযোগ তৈরি করেছিলেন এই পেসার। তবে ফাহিমের তোলা ক্যাচ ফেলে দেন তানজিম। 

৮ উইকেট হারিয়েও টাইগার শিবিরে কাঁপন ধরিয়েছিল পাকিস্তান লেজের সারির ব্যাটাররা। 'জীবন' পাওয়া ফাহিম ও অভিষিক্ত ধানিয়াল জুটিতে জয়ের দারপ্রান্তেই ছিল সফরকারীরা। তবে শেষ দুই ওভারে ২৮ রানের সমীকরণ মেলাতে পারিনি দ্য গ্রিন ম্যানরা। শেষমেশ ৮ রানে জয় ছিনিয়ে নেয় লাল-সবুজেরা। 

এর আগে, ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি স্বাগতিকদের। ৭ বল খেলে মাত্র ৩ রান যোগ করে ফেরেন তানজিদের জায়গায় সুযোগ পাওয়া নাঈম। ফাহিম আশরাফের বলটি উইকেটকিপারের মাথার ওপর দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ঠিক মতো টাইমিং করতে না পারায় ক্যাচ তুলে দেন সরাসরি উইকেটরক্ষকের হাতে।

সতীর্থ নাঈমের দেখানো পথেই হাঁটেন। সালমানকে উড়িয়ে ডিপ মিডউইকেটে খেলতে চেয়েছিলেন লিটন। তবে টাইমিং না হওয়ায় হাসান নেওয়াজের ক্যাচ হয়ে ফেরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ৯ বলে ১ চারে ৮ রান করে বিদায় নেন উইকেটকিপার এই ব্যাটার। 
এরপর রানআউটে কাটা পড়েন তাওহীদ হৃদয়। মিড অফে বল ঠেলে একটি রান চুরি করতে চেয়েছিলেন হৃদয়। কিন্তু সরাসরি থ্রোয়ে ননস্ট্রাইকিং প্রান্তের উইকেট ভেঙে দেন সালমান আলী। ৪ বলের মধ্যে ২ উইকেট হারানো সালমান মির্জার ওভারটিতে কোনো রান নিতে পারেনি স্বাগতিকরা। 

পাওয়ার প্লে’তে ইমনের উইকেটও হারায় বাংলাদেশ। কিছুটা রয়েসয়ে উইকেটে থিতু হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি। ১৪ বলে ১৩ রানে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তিনি। মাত্র ৩ রান ব্যবধানে ৩ উইকেট হারানো টাইগার শিবিরকে টেনে তুলছিলেন মেহেদী ও জাকির জুটি। পঞ্চম উইকেট জুটিতে ফিফটিও তুলে ফেলেন তারা। তবে এরপরই বিদায়ঘণ্টা বাজে মেহেদীর।

মোহাম্মদ নেওয়াজকে ছক্কা হাঁকানোর পরের বলেই আউট এ অলরাউন্ডার। লং অফে তার ক্যাচ নেন হাসান নেওয়াজ। এতে ৫৩ রানের পঞ্চম উইকেট জুটিও। ২৫ বলে ৩৩ রান করে ফেরেন মেহেদী। দলীয় সেঞ্চুরির আগে শামীমের উইকেটও হারায় স্বাগতিকেরা। ওভারের প্রথম বলে আহমেদ দানিয়ালকে ছক্কা হাঁকান জাকের। এরপর এক রান নিয়ে শামীমকে স্ট্রাইক দেন। কিন্তু এই অলরাউন্ডারকে বোল্ড করে ‘প্রতিশোধ’ নেন অভিষিক্ত এই পেসার। ৪ বল খেলে মাত্র ১ রান করেন বলটিকে উইকেটে টেনে আনা শামীম।

আগের বলে সালমান মির্জাকে চারে মেরে দলের সংগ্রহ ১০০ রানে পৌঁছে দেন তানজিম সাকিব। তবে পরের বলেই ছক্কা মারতে গিয়ে এক্সট্রা কভারে ফখর জামানের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হন এ পেসার। দ্রুত রান তুলতে গিয়ে রিশাদও বেশিক্ষণ উইকেটে থিতু হতে পারেননি (৪ বলে ৮ রান)। অবশ্য শেষদিকে জাকেরের লড়াকু ফিফটিতেও বড় সংগ্রহ পায়নি বাংলাদেশ।