০৮ জুলাই ২০২৫, ২২:২৫

অভাবনীয় ব্যাটিং ব্যর্থতায় বাংলাদেশের স্বপ্নভঙ্গ

বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ   © সংগৃহীত

ব্যাটিং নিয়ে দুশ্চিন্তা বাংলাদেশ দলের বেশ পুরোনো। ভয়ঙ্কর ব্যাটিং ধসে অনেক সময় লজ্জার রেকর্ডও গড়েছে টিম টাইগার্স। এবার শ্রীলঙ্কার মাটিতে ইতিহাস গড়ে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের সুযোগ থাকলেও চরম ব্যাটিং ব্যর্থতায় মুখ থুবড়ে পড়েছে দলটি। এমন মহাগুরুত্বপূর্ণ সুযোগের ম্যাচে ৯৯ রানে হেরেছে মেহেদী হাসান মিরাজের দল। এতে ২-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজও হারল বাংলাদেশ।

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) পাল্লেকেলেতে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৮৫ রানের সংগ্রহ পায় শ্রীলঙ্কা। জবাব ১৮৬ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।

রেকর্ড লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শুরুতেই বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। ৬ বলের মধ্যেই প্যাভিলিয়নে ফেরেন ওপেনার তানজিদ তামিম এবং তিনে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত। 

ইনিংসের তৃতীয় ওভারের শেষ বলে ফেরেন তামিম। দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে এই ওপেনারের (১৩ বলে ১৭) স্ট্যাম্প গুঁড়িয়ে দেন আসিথা ফার্নান্দো। তিনে নেমে পুরোপুরি ব্যর্থ শান্ত-ও। ‘ডাক’ খেয়ে বিপদ আরও বাড়ান টপ-অর্ডার এই ব্যাটার। দুশমন্ত চামিরার বলে স্ট্যাম্প বাঁচাতে পারেননি। তার বিদায়ে ২০ রান তুলতেই দুই উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

এরপর দলের হাল ধরেন ইমন ও হৃদয়। তাদের সাবলীল ব্যাটিংয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিল সফরকারীরা। তবে উইকেটে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি ইমন। ধৈর্য হারিয়ে সাজঘরে ফেরার আগে ৪৪ বলে ২৮ রান করেন এই ওপেনার।

ইমনের বিদায়ে মিরাজকে সঙ্গে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন হৃদয়। টাইগার দলপতিও ভালো শুরু পেয়েছিলেন। তবে হঠাৎ-ই এক বাজে শটে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন। ২৫ বলে ২৮ রান করেন মিরাজ।

ছয়ে নেমে শামীম পাটোয়ারীও আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি। হাসারাঙ্গাকে এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হন এই অলরাউন্ডার। এক বাউন্ডারিতে ১২ রানে সাজঘরে ফেরেন তিনি।

তবে সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মিছিলে একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন তাওহীদ হৃদয়। খানিকটা ধীরগতির ইনিংসে ৭৫ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন মিডল-অর্ডার এই ব্যাটার। অবশ্য হাফ-সেঞ্চুরির পর বেশিক্ষণ উইকেটে থিতু হতে পারেননি। চামিরার দুর্দান্ত এক ইন-সুইংয়ে বোল্ড হয়ে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে ৭৮ বলে ৫১ রান এসেছে।

এরপর লেজের সারির ব্যাটারদের নিয়ে লড়াই চালিয়েছিলেন জাকের আলি। তবে তার এক ছক্কা ও ২ চারে ২৭ রানের ইনিংস কেবলই ব্যবধান কমায়। শেষমেশ ৯৯ রানে হেরেছে বাংলাদেশ।

এর আগে, নতুন বলে শুরুটা ভালোই করেছিলেন তাসকিন আহমেদ ও তানজিম সাকিব। তাদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে শুরুতেই চাপে পড়ে স্বাগতিকরা। সেই চাপ আরও বাড়িয়ে ইনিংসের চতুর্থ ওভারেই প্রথম ব্রেক-থ্রু এনে দেন সাকিব। তার অতিরিক্ত বাউন্সড ডেলিভারি মাদুস্কার ব্যাটের কানা ছুঁয়ে স্লিপে নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ধরা পড়ে। মাত্র ১ রানে প্যাভিলিয়নে ফেরেন এই ওপেনার।

তিনে নেমে উড়ন্ত শুরু করেন কুশল মেন্ডিস। আরেক প্রান্তে পাথুম নিশাঙ্কাও খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। এতে প্রথম পাওয়ার প্লেতে ৫১ রান তুলে নেয় স্বাগতিকরা।

দ্বিতীয় উইকেটে ক্রমেই বড় হতে থাকা এই জুটি ভাঙেন তানভীর ইসলাম। ১৫তম ওভারে পাথুম নিশাঙ্কাকে সাজঘরে ফেরান বাঁহাতি এই স্পিনার। ইমনের হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে ৪৭ বলে ৩৫ রান করেন এই ওপেনার।

১৯তম ওভারে প্রথমবারের মত আক্রমণে আসেন মিরাজ। নিজের দ্বিতীয় ওভারেই কামিন্দু ও মেন্ডিসের ৩৮ বলে ৩১ রানের জুটি ভাঙেন টাইগার দলপতি। মিরাজের অফ স্ট্যাম্পের ওপর গুড লেংথের ডেলিভারিতে এলবিডব্লু হয়ে ২০ বলে ১৬ রান করে সাজঘরে ফেরেন কামিন্দু।

দলীয় ১০০ রানে তৃতীয় উইকেট হারানোর পর আসালঙ্কাকে সঙ্গে নিয়ে বড় জুটি গড়েন কুশল মেন্ডিস। তাদের সাবলীল ব্যাটিংয়ে মাঝের ওভারগুলোতে বেশ চাপে পড়েছিল বাংলাদেশ। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে দ্রুত ফিফটি স্পর্শ করেন আসালাঙ্কা। ৮ চারে মাত্র ৬০ বলে এই মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। তবে ফিফটির পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। এতে ভাঙে তাদের ১১৭ বলে ১২৪ রানের জুটি। ৫৮ রান করে ফেরেন আসালাঙ্কা।

অন্যপ্রান্তে ৯৫ বলে সেঞ্চুরি ছুঁয়ে ফেলেন কুশল মেন্ডিস। ওয়ানডেতে এটি তার ষষ্ঠ সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয়। তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করার পর আরও বেশি আগ্রাসী হয়ে উঠেন টপ-অর্ডার এই ব্যাটার। তবে কুশলের দুর্দান্ত ইনিংসের সমাপ্তি হয় শামীমের বলে। ১১৪ বলে ১৮ চারে ১২৪ রান করে টাইগারদের পার্টটাইম এই বোলারকে ফিরতি ক্যাচ দেন তিনি।

দুই অঙ্ক ছোঁয়ার আগেই তাসকিনের বলে শামীমের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন দুনিথ ভাল্লালাগে (৬)। মাঝে ইনিংসের ৪৫তম ওভারের শেষ বলে হিট উইকেট হন জানিথ লিয়ানাগে। সাজঘরে ফেরার আগে ১৭ বলে ১২ রান আসে তার ব্যাট থেকে।

শেষদিকে লড়াই জিইয়ে রেখেছিলেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। ১৪ বলে ১৮ রান করে অপরাজিত ছিলেন হাসারাঙ্গা। এছাড়া ১০ রানে তাকে সঙ্গ দেন চামিরা।

বাংলাদেশের হয়ে তাসকিন আহমেদ ও মেহেদী হাসান মিরাজ দুটি করে উইকেট নেন। এছাড়া তানভীর ইসলাম, শামীম হোসেন পাটোয়ারী এবং তানজিম হাসান সাকিব একটি করে উইকেট শিকার করেন।