০২ জুলাই ২০২৫, ১৯:৫১

পটিয়ায় বৈষম্যবিরোধীদের সঙ্গে কী হয়েছিল, কেন এত প্রতিক্রিয়া?

পটিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ  © সংগৃহীত ও সম্পাদিত

চট্টগ্রামের পটিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাতে থানার সামনে সংঘর্ষ, আন্দোলন, সড়ক অবরোধ এবং প্রশাসনের প্রতি তীব্র প্রতিক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে এ ঘটনা এখন সারাদেশে আলোচনার কেন্দ্রে। ছাত্রদল, ছাত্রশিবির সহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন, শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মগুলো এ ঘটনায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছে।

জানা যায়, মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাত সাড়ে ৮টার দিকে পটিয়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে একটি প্রোগ্রাম শেষে ফেরার পথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা রাঙ্গামাটি জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি দীপঙ্কর তালুকদারকে দেখতে পান। তাদের দাবি, দীপঙ্করের মোবাইল চেক করে ছাত্রলীগের অন্তত পাঁচটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে তার সম্পৃক্ততা খুঁজে পাওয়ার পর তারা তাকে পটিয়া থানায় নিয়ে যায় এবং পুলিশের কাছে তাকে আটক করার অনুরোধ করে।

তবে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দীপঙ্করের নামে কোনো মামলা না থাকায় তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব নয়। এই অবস্থানে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, যা একপর্যায়ে সংঘর্ষে রূপ নেয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবি, থানা প্রাঙ্গণে পুলিশ তাদের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা চালায়, যাতে অন্তত ২০-২৫ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, ঘটনার প্রথম দফার পর ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীরাও থানার সামনে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভে যোগ দেন। 

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি শান্ত রাখতে পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবি- ওসিকে প্রত্যাহার, হামলাকারী পুলিশ সদস্যদের বিচারের আওতায় আনা এবং আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তি।

অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করছেন, ছাত্রলীগপন্থীদের রক্ষার উদ্দেশ্যেই ওসি পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছেন এবং এই ঘটনায় পুলিশ অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছে। 

এ ঘটনার পর রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক নেতারা কড়া প্রতিক্রিয়া জানান। এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, ‘এই প্রতিক্রিয়া কোনো মব নয়, এটা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধ।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি রিফাত রশীদ জানান, ‘ওসিকে কেবল ট্রান্সফার করে দায় শেষ করা যাবে না। আমরা তার বিচার চাই।’

এদিকে আজ বুধবার (২ জুলাই) সকাল থেকে পটিয়া থানা ঘেরাও করে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়। পরে সকাল সাড়ে দশটায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করে দেয় আন্দোলনকারীরা। এতে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। বিকেলের দিকে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। তারা শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণভাবে সরে যেতে অনুরোধ করে।

বিকেলে ছাত্রদের একটি প্রতিনিধি দল চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। জেলা পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, আলোচনা শেষে ডিআইজি যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তা সবাইকে মেনে নিতে হবে। অন্যদিকে আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, দাবি পূরণ না হলে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন এবং প্রয়োজন হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।


সূত্র: বিবিসি।