২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১:৫০

দুই লঞ্চের সংঘর্ষে নিহত লালমোহনের ৩ জনের পরিবারে শোকের মাতম

নিহত ব্যক্তির স্বজনদের আহাজারি  © টিডিসি

ঘন কুয়াশার মধ্যে মেঘনা নদীতে দুই লঞ্চের ভয়াবহ সংঘর্ষে নিহত চার যাত্রীর মধ্যে তিনজনই ভোলার লালমোহন উপজেলার বাসিন্দা। স্বজনহারা এসব পরিবারে চলছে শোক আর আহাজারির হৃদয়বিদারক দৃশ্য।

নিহতরা হলেন লালমোহন উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাদিরাবাদ বেপারী বাড়ির সেরাজল বেপারীর ছেলে রাজমিস্ত্রি আব্দুল গনি, একই এলাকার গোলাপ খাঁ বাড়ির কালু খাঁর ছেলে মো. সাজু এবং পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের লালমিয়া গাজী বাড়ির মো. হোসেনের স্ত্রী রিনা বেগম। নিহত অপর যাত্রীর বাড়ি অন্য জেলায়।

সরেজমিনে বদরপুর ইউনিয়নের কাদিরাবাদ এলাকায় আব্দুল গনির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্ত্রী লাইজু বেগম ও স্বজনদের আহাজারিতে পুরো এলাকা ভারী হয়ে উঠেছে। একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামীকে হারিয়ে দিশেহারা লাইজু বেগম বারবার বলছেন, ‘আমার তিনটা সন্তানের ভবিষ্যৎ কী হবে?’ তিনি জানান, ঢাকায় কাজে যাওয়ার সময় তিনি স্বামীকে বারবার নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু কাজের তাগিদে তিনি যাত্রা করেন এবং রাতেই মৃত্যুসংবাদ আসে।

পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের কচুয়াখালী গ্রামে গার্মেন্টস কর্মী রিনা বেগমের বাড়িতেও চলছে শোকের মাতম। স্বামী মো. হোসেন ঢাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। প্রায় ৭-৮ বছর আগে সংসারের স্বচ্ছলতার আশায় তারা ঢাকায় চলে যান। তাদের একমাত্র কন্যা সাথী দাদা-দাদির কাছে থাকত এবং স্থানীয় কচুয়াখালী মহিলা মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। মায়ের মৃত্যুসংবাদ শুনে বারবার মূর্ছা যাচ্ছে সাথী। বৃহস্পতিবার বিকেলে বাবা-মা মেয়ের সঙ্গে দেখা করে লঞ্চে ওঠেন এবং যাওয়ার সময় বলেন, ‘রোজার ঈদে আবার আসব।’ কিন্তু সেই রাতেই আসে মায়ের মৃত্যুর খবর। দুর্ঘটনায় বাবা মো. হোসেন গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও যাত্রীদের বরাতে জানা গেছে, ঘন কুয়াশার কারণে বরিশাল রুটের এমভি অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চটি সজোরে ধাক্কা দেয় ঢাকাগামী এমভি জাকির সম্রাট-৩ লঞ্চের মাঝ বরাবর। এতে জাকির সম্রাট-৩ লঞ্চের দ্বিতীয় তলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সংঘর্ষের সময় এক নারী যাত্রী ঘটনাস্থলেই মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারান। অপর তিনজন গুরুতর আহত অবস্থায় মারা যান।

যাত্রীরা জানান, সংঘর্ষের সময় লঞ্চের পাশ দিয়ে অনেক যাত্রী ঘুমাচ্ছিলেন। ধাক্কার তীব্রতায় অনেকে নদীতে পড়ে যান। কয়েকজন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। উদ্ধারকাজ চলমান থাকায় হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্থানীয় জেলে ও নৌযান শ্রমিকদের সহায়তায় আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

দুর্ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্ত জাকির সম্রাট-৩ লঞ্চটি মাঝনদীতে ডুবো অবস্থায় ভাসতে থাকলে ভোলা থেকে ঢাকাগামী এমভি কর্ণফুলী-৯ লঞ্চ দ্রুত এগিয়ে এসে বহু যাত্রীকে উদ্ধার করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পরে নৌ-পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার ও তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন।

লালমোহন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. অলিউল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাটি আমাদের এখতিয়ারভুক্ত এলাকায় না হলেও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সহায়তা চাইলে যথাযথ সহযোগিতা করা হবে। মরদেহ এলাকায় এলে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহে পুলিশ উপস্থিত থাকবে।’

 বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেলে চরফ্যাশন উপজেলার ঘোষেরহাট এলাকা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা এমভি জাকির সম্রাট-৩ লঞ্চের সঙ্গে রাত আনুমানিক ২টার দিকে চাঁদপুরের হাইমচর ও হরিণা এলাকার মাঝামাঝি স্থানে সংঘর্ষ হয় এমভি অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চের। এ ঘটনায় ঘটনাস্থলেই একজনসহ মোট চারজন নিহত এবং অন্তত ১৫ জন আহত হন।

চাঁদপুর নৌ-পুলিশ অঞ্চলের এসপি সৈয়দ মুশফিকুর রহমান শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।