সেই দীপু দাসের পরিবারের পাশে ১৮ সদস্যের মানবাধিকার দল, ন্যায়বিচার দাবি
ময়মনসিংহের ভালুকায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগে দীপু চন্দ্র দাসকে (২৮) পিটিয়ে এবং আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় নিহতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে শোক প্রকাশ করেছেন ১৮ সদস্য বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মীদের একটি প্রতিনিধি দল। এ সময় তারা পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে রাষ্ট্র এবং সরকারের কাছে ন্যায়বিচার দাবি করেছে।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) বেলা একটায় জেলার তারাকান্দা উপজেলার মোকামিয়াকান্দা গ্রামের দীপু দাসের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তারা সমবেদনা জ্ঞাপন করে। এ সময় প্রতিনিধি দলের সদস্যরা দীপু চন্দ্র দাসের স্ত্রী মেগনা রাণীর সঙ্গে কথা বলে আর্থিক অবস্থানসহ পরিবারের খোঁজখবর নেন।
পরিবারটির যে কোনো প্রয়োজনে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের মানবাধিকারকর্মী মো. শহিদুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ ঘটনায় আমরা ক্ষুব্ধ, মর্মাহত, দুঃখিত। অপবাদ দিয়ে বিনা প্রমাণে একটা মানুষকে শুধু হত্যা করা হলো না। লাশকে পুড়ানো হলো, অসম্মান করা হলো- এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আমরা এসেছি ন্যায়বিচারের আশায়। আমরা ন্যায়বিচার আদায় করে ছাড়ব। সমাজের কাছে এবং সরকারের কাছে দাবি শুধু ন্যায় বিচার না, বরং এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে সে ব্যবস্থা নেওয়া। সত্যিকার অর্থে আমরা যেন বৈষম্যহীন বাংলাদেশ দেখে যেতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমারা মনে করি দীপু চন্দ্র দাসের পরিবার ও সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। তবে আমরা এই পরিবারের যে কোনো প্রয়োজনে পাশে থাকব।’
এ প্রতিনিধি দলে আরও উপস্থিত ছিলেন নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত, লেখক ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের সাবেক সদস্য ফিরোজ আহমেদ, মানবাধিকার কর্মী দীপায়ন খীসা, লেখক ও নৃবিজ্ঞানী রেহনুমা আহমেদ প্রমুখ। এ ছাড়া জাতীয় আইন সহায়তা কেন্দ্র ব্লাস্ট, এএলআরডি, মানবাধিকার সাংস্কৃতিক ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে দীপু চন্দ্র দাসকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে উত্তেজিত জনতা। পরে তার লাশ গাছে ঝুলিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই অপু দাস গত ১৯ ডিসেম্বর বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ১৫০ জনকে আসামি করে ভালুকা থানায় মামলা করে। ওই মামলায় র্যাব-পুলিশের সদস্যরা ইতিমধ্যে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ইতোমধ্যে এ আসামিদের বিরুদ্ধে ৩ দিন করে রিমান্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, নিহত দিপু চন্দ্র দাস জেলার তারাকান্দা উপজেলার মোকামিয়া কান্দা গ্রামের রবি চন্দ্র দাসের ছেলে। তিনি বিগত দুই বছর ধরে ভালুকার জামিরদিয়া পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড কোম্পানিতে কাজ করছিলেন।