০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২:১৮

ভারতীয় ভিসায় কড়াকড়ি, বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে চার মাসে যাত্রী কমল ৪ লাখ

বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে ভারতগামী যাত্রীরা  © টিডিসি

ভারতীয় ভিসা প্রাপ্তিতে কঠোর নজরদারি, নতুন শর্ত আর জটিলতা—সব মিলিয়ে চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে ভারতগামী যাত্রী পারাপারে নেমেছে বড় ধস। আগের বছরের তুলনায় এবার এ পথে যাত্রী কমেছে ৪ লাখের বেশি। চিকিৎসা, ব্যবসা ও পারিবারিক ভ্রমণে ভিসা জটিলতা সৃষ্টি করায় বাংলাদেশি যাত্রীদের ভ্রমণ প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে, কমেছে সরকারের রাজস্ব আয়ও। অন্যদিকে ভারতীয়দের বাংলাদেশ ভ্রমণে কোনো বাধা না থাকায় তাদের যাতায়াত স্বাভাবিক রয়েছে।

বেনাপোল বন্দর সূত্র জানায়, প্রতিবছর ভ্রমণ, ব্যবসা, চিকিৎসা ও শিক্ষার উদ্দেশ্যে এ চেকপোস্ট দিয়ে দুই দেশের মধ্যে ১৮ থেকে ২০ লাখ পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত করেন। এতে বাংলাদেশ সরকার ভ্রমণকর বাবদ প্রায় ১৫০ কোটি টাকা এবং ভারত সরকার ভিসা ফি বাবদ প্রায় ২০০ কোটি টাকা রাজস্ব পেয়ে থাকে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর মাসে বেনাপোল দিয়ে যাতায়াত করেছিলেন ৬ লাখ ৫ হাজার ৮১৮ জন যাত্রী। কিন্তু চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের একই সময়ে এই সংখ্যা নেমে আসে ২ লাখ ২ হাজার ৯৬৯ জনে। এতে ভারত সরকারের ভিসা ফি থেকে প্রায় ৪২ কোটি টাকা ও বাংলাদেশ সরকারের ভ্রমণকর থেকে ৩২ কোটি টাকা রাজস্ব কমে গেছে।

গত ৫ আগস্ট ভারতের সরকার পরিবর্তনের পর নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসায় নতুন শর্ত আরোপ ও মেয়াদ সীমিত করা হয়। ফলে চিকিৎসা, ব্যবসা ও পারিবারিক ভ্রমণ ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। তবে ভারতীয়দের বাংলাদেশে ভিসা পাওয়ায় কোনো বাঁধা না থাকায় তাদের যাতায়াত স্বাভাবিক রয়েছে।

বাংলাদেশি ভ্রমণকারী আতিয়ার রহমান বলেন, ভিসা পেতে এখন অনেক টাকা খরচ ও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে—ব্যবসা ও চিকিৎসা দুটিতেই ক্ষতি হচ্ছে। ভিসা-সংক্রান্ত কাজে নিয়োজিত হায়দার আলীর অভিযোগ, দালাল ছাড়া ভিসা পাওয়া যায় না। বহু সময় পাসপোর্টও ফেরত দিয়ে দেয় ভিসা না দিয়ে।

চিকিৎসা ভিসায় ভারত গিয়ে হয়রানির শিকার হন আব্দুল হান্নান। তিনি জানান, এক চিকিৎসকের নামে ভিসা থাকায় অন্য হাসপাতালে গেলে ফেরার সময় ইমিগ্রেশনে তিন ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। ভবিষ্যতে ভিসা বাতিলের হুমকিও দেওয়া হয়।

অন্যদিকে বাংলাদেশ ভ্রমণে আসা ভারতীয় নাগরিক সুরজিৎ সাহা ও রেখা সাহা বলেন, কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন থেকে স্বাভাবিক নিয়মেই সহজে ভিসা পেয়েছেন। কোনো দুর্ভোগ হয়নি।

বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) শামিম হোসেন জানান, ভিসা জটিলতার কারণে যাত্রী পারাপার ব্যাপকভাবে কমেছে, ফলে সরকারের রাজস্বও কমছে। গত সোমবার বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছেন মাত্র ৯৪০ জন যাত্রী এর মধ্যে ৫৯০ জন বাংলাদেশি এবং ৩৫০ জন ভারতীয়।