গাইবান্ধায় শীতজনিত রোগে হাসপাতালে রোগীর ঢল, করিডর-সিঁড়িতে চলছে চিকিৎসা
গাইবান্ধায় তীব্র শীতের প্রভাবে ডায়রিয়া ও শীতজনিত রোগ যেন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বিশেষ করে শিশু রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকায় জেলা সদর হাসপাতালের শয্যা সংকট চরমে পৌঁছেছে। নির্ধারিত শয্যার তিন গুণ বেশি রোগী ভর্তি থাকায় করিডর, মেঝে, এমনকি সিঁড়িতেও চলছে চিকিৎসাসেবা। বাড়তি চাপ সামলে চিকিৎসক-নার্সদের হিমশিম অবস্থার পাশাপাশি অভিভাবকদের ভোগান্তিও চরমে উঠেছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্কতা মেনে চলার পরামর্শ দিলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জোরালো হচ্ছে জনমনে।
জানা গেছে, তীব্র শীত ও দিন-রাতের তাপমাত্রার পার্থক্যের কারণে গাইবান্ধায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে ডায়রিয়া ও অন্যান্য শীতজনিত রোগ। শুধু গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালেই প্রতি সপ্তাহে পাঁজ শতাধিক ডায়রিয়া ও শিশু রোগী ভর্তি হচ্ছেন। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে মাত্র ২০টি ও শিশু ওয়ার্ডে ২০টি শয্যা থাকলেও বর্তমানে প্রতিটি ওয়ার্ডে ৫০ থেকে ৬০ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এই চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
হাসপাতালের শিশু, কিশোর ও নবজাতক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. খাইরুন নাহার জানান, শীতকালে রোটা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যায়, যার ফলে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। তিনি শিশুদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, বাসি ও খোলা খাবার না খাওয়ানো এবং গরম কাপড় পরার পরামর্শ দেন।
হাসপাতালের সিনিয়র নার্স রাজিয়া সুলতানা বলেন, নির্ধারিত শয্যার তুলনায় রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। এত বেশি রোগীর চাপে সেবা দেওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর অবস্থাও একই রকম। অনেক শিশুকে প্রথমে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হলেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত জেলা হাসপাতালে ভর্তি করতে হচ্ছে। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরার পর অনেক শিশু আবারও আক্রান্ত হচ্ছে।
এক শিশুর অভিভাবক মোর্শেদা বেগম বলেন, ঠান্ডা লাগার পর তার সন্তানের পেটব্যথা ও বমি শুরু হয়। স্থানীয় চিকিৎসায় কাজ না হওয়ায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসতে বাধ্য হন। অন্য এক অভিভাবক শাহিন মিয়া বলেন, তার ছেলে জ্বর, সর্দি-কাশি এবং শ্বাসকষ্টে ভুগছে এবং তার আশেপাশের অনেক শিশুর একই সমস্যা দেখা দিয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে মোট ২৫০টি শয্যার বিপরীতে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ জনের বেশি রোগী ভর্তি রয়েছেন, যাদের মধ্যে শতাধিকই শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। এই সংকট মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে অতিরিক্ত শয্যা, ওষুধ ও চিকিৎসাকর্মী বৃদ্ধির দাবি উঠেছে স্থানীয় জনগণের মধ্য থেকে।