০১ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৫৬

পর্যটকদের জন্য সেন্ট মার্টিন খুললেও ছেড়ে যায়নি কোনো জাহাজ

সেন্ট মার্টিন  © সংগৃহীত

দীর্ঘ নয় মাস পর অবশেষে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হলো দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন। আজ শনিবার (১ নভেম্বর) থেকে নির্দিষ্ট কিছু নির্দেশনা মেনে দ্বীপে প্রবেশ করতে পারবেন পর্যটকরা। প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এবার প্রশাসন আরও কঠোর অবস্থানে রয়েছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম বলেন, ‘পরিবেশ সংরক্ষণে জারি করা সরকারি নির্দেশনা কেউ অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পর্যটন ব্যবস্থাপনাকে নিয়ন্ত্রিত রাখতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি।’

এদিকে এবার থেকে নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করবে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে। টেকনাফ ঘাট থেকে কোনো জাহাজ ছাড়বে না বলে জানানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে।

নুনিয়ারছড়া বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে গিয়ে জানা যায়, রাত্রিযাপনে নিষেধাজ্ঞা থাকায় আজ কোনো জাহাজ দ্বীপের উদ্দেশে ছেড়ে যায়নি। তবে ইনানী পয়েন্ট থেকে জাহাজ ছাড়ার অনুমতি চেয়েছে জাহাজ কতৃপক্ষরা। অনুমতি সাপেক্ষে পরবর্তীতে জাহাজ ছাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। 

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, অবৈধ স্থাপনা, বেপরোয়া পর্যটন ও দূষণের কারণে সেন্ট মার্টিন একসময় মারাত্মক পরিবেশ সংকটে পড়ে। তবে পর্যটক চলাচল বন্ধ থাকায় গত নয় মাসে দ্বীপে জীববৈচিত্র্যের উল্লেখযোগ্য পুনরুদ্ধার হয়েছে। সৈকতে এখন আবার দেখা যাচ্ছে শামুক-ঝিনুক, লাল কাঁকড়া ও মা কাছিমের ডিম পাড়ার উপযোগী পরিবেশ।

সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, পর্যটকদের জন্য জারি করা হয়েছে ১২টি নির্দেশনা। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি হলো—
১. নভেম্বর মাসে শুধুমাত্র দিনের বেলা ভ্রমণের অনুমতি থাকবে।
২. ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে সীমিতভাবে রাত্রিযাপন করা যাবে।
৩. ফেব্রুয়ারি মাসে পর্যটক প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
৪. প্রতিদিন সর্বোচ্চ ২,০০০ পর্যটক প্রবেশ করতে পারবেন।
৫. সৈকতে রাতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি বা বারবিকিউ করা নিষিদ্ধ।
৬. কেয়াবনে প্রবেশ ও কেয়া ফল সংগ্রহ-বিক্রয় নিষিদ্ধ।
৭. কাছিম, শামুক-ঝিনুক, প্রবালসহ যেকোনো জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।
৮. মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ মোটরচালিত যান চলাচল বন্ধ থাকবে।
৯. পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বহন নিষিদ্ধ।
১০. ব্যক্তিগত পানির ফ্লাস্ক ব্যবহার উৎসাহিত করা হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসেবে, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে রয়েছে প্রায় ১,০৭৬ প্রজাতির জীববৈচিত্র্য, যার মধ্যে প্রবাল, শৈবাল, কাছিম, রাজকাঁকড়া, সামুদ্রিক মাছ, পাখি ও স্তন্যপায়ী প্রাণী অন্তর্ভুক্ত। অতিরিক্ত মানবচাপে এসব প্রাণপ্রজাতি দীর্ঘদিন ধরেই ঝুঁকিতে ছিল।

সরকারের আশা, নতুন নির্দেশনা মেনে নিয়ন্ত্রিত পর্যটন ব্যবস্থা কার্যকর হলে সেন্ট মার্টিন একদিন পরিবেশবান্ধব পর্যটনের আন্তর্জাতিক উদাহরণ হয়ে উঠবে।