২৫ অক্টোবর ২০২৫, ২২:২২

এক হাতে জীবনযুদ্ধ, তবু হার মানেননি রুহুল আমিন

রুহুল আমিন  © টিডিসি

জন্ম থেকেই এক হাতে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জীবন শুরু হলেও হার মানেননি চাঁদপুরের কচুয়ার রুহুল আমিন। প্রতিকূলতা আর সীমাবদ্ধতাকে উপেক্ষা করে পরিশ্রম ও আত্মসম্মানকে হাতিয়ার করে তিনি গড়ে তুলেছেন নিজের জীবন। এক হাতে পণ্যের ব্যাগ, অন্য হাতে অদম্য সাহস নিয়ে প্রতিদিন ছুটে চলেন জীবিকার সন্ধানে—হয়ে উঠেছেন সমাজের জন্য এক অনুপ্রেরণার প্রতীক।

৯ বছর ধরে তিনি বিভিন্ন মার্কেটিং কোম্পানিতে কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমানে রুহুল আমিন কাজ করছেন কোকোলা ফুড কোম্পানির চাঁদপুর সদর উপজেলায় সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ (এসআর) হিসেবে। মাসিক বেতন মাত্র ১২ হাজার টাকা। এই অল্প আয়ে চলছে বৃদ্ধ বাবা, স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে তার সংসার।

রুহুল আমিন বলেন, ‘সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কাজ করি। রৌদ্র, বৃষ্টি, ক্লান্তি—সব উপেক্ষা করে পণ্য বিক্রি করি। কিন্তু দিন দিন খরচ বাড়ছে, বেতন বাড়ছে না। সংসার চালানো এখন অনেক কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।’

আগে প্রিন্স কোম্পানিতে চাকরি করতেন রুহুল আমিন। ভাইদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে ছোট, আর বড় দুই ভাই কৃষিকাজ করেন। শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও কখনো হাত পাতেননি কারো কাছে। গর্বভরে বলেন, ‘আমি ভিক্ষা করি না, আর কারো কাছে চাইতেও লজ্জা লাগে। তবে কেউ যদি নিজে থেকে সহায়তা করতে চান, সেটা আলাদা বিষয়। আমি শুধু নিজের পরিশ্রমে বাঁচতে চাই।’

তার স্বপ্ন—একটু আর্থিক সহায়তা পেলে ছোটখাটো ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হওয়া। যদি কেউ সহযোগিতা করে, তাহলে একটা ছোট দোকান দিতে পারতাম। সংসারটাও একটু ভালোভাবে চলত, —বললেন তিনি আশাবাদী কণ্ঠে।

রুহুল আমিনের জীবনে কষ্ট আছে, কিন্তু পরাজয় নেই। এক হাতে পণ্যের ব্যাগ, কলম আর মেমো, অন্য হাতে সাহস আর আত্মসম্মান নিয়ে ঘুরে বেড়ান চাঁদপুর শহরের অলিতে গলিতে।

সমাজে যখন অনেক সুস্থ মানুষও অলসতায় ভিক্ষা বেছে নেয়, সেখানে রুহুল আমিন যেন আলোর প্রদীপ। নিজের প্রতিবন্ধকতাকে শক্তিতে রূপ দিয়ে তিনি আমাদের শেখান—ইচ্ছা আর পরিশ্রম থাকলে অসম্ভব বলে কিছু নেই।

তার জীবনের লক্ষ্য স্পষ্ট করে বলেন, ‘আমি আমার দুই মেয়েকে মানুষ করতে চাই। ওদের যেন আমার মতো কষ্ট না হয়।’

এক হাতে কাজ করেও দুই হাতে স্বপ্ন গড়ার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন রুহুল আমিন। তিনি প্রমাণ করেছেন—প্রতিবন্ধকতা শরীরে নয়, মানসেই আসল শক্তি লুকিয়ে থাকে।