২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৩৯

ভবন আর শব্দ দূষণে পালাচ্ছে শহরের পাখিরা

রাজশাহী শহরে উড়ছে পাখির ঝাঁক  © সংগৃহীত

রাজশাহী শহরে দিন দিন কমে যাচ্ছে গাছপালা ও সবুজ এলাকা। দ্রুত নগরায়ন, বহুতল ভবন নির্মাণ আর যানবাহনের অতিরিক্ত শব্দে পাখিদের স্বাভাবিক আবাসস্থল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এক সময় সকালবেলায় চড়ুই, দোয়েল ও বাবুইয়ের কিচিরমিচিরে মুখর থাকত শহর, এখন সেখানেই নীরবতা আর শূন্যতা বিরাজ করছে। শব্দ দূষণ ও খাবারের অভাবে পাখিরা ক্রমেই শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই গাছ লাগানো ও পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনা না নিলে রাজশাহীসহ অন্যান্য শহর থেকেও পাখিদের অস্তিত্ব পুরোপুরি হারিয়ে যেতে পারে।

শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে নগরীর জিরো পয়েন্ট, নিউ মার্কেট, রেলগেট, লক্ষ্মীপুর থেকে সাহেববাজার পর্যন্ত রাস্তার পাশে থাকা কিছু ছোট গাছে বাবুই পাখি গুলো গাছের ডালে বসে কেউ বা উড়তে দেখা যায়। কিন্তু শহরের আকাশে এখন আর দেখা মেলে না আগের মতো ঝাঁকে ঝাঁকে বিভিন্ন উড়ন্ত পাখিদের।

রাজশাহীর স্থানীয় বাসিন্দা ফরিদা আখতার বলেন, আমাদের শহরে এখন পাখি নাই বললেই চলে। আগে সকালে ঘুম ভাঙত চড়ুই আর বাবুই পাখির ডাক শুনে। এখন সেই শব্দ আর শোনা যায় না। যেসব পাখি এখনো আছে, তারা রাস্তার পাশে ছোট গাছে কষ্ট করে থাকে। কিন্তু শহরের শব্দে ওদেরও থাকা মুশকিল হয়ে পড়েছে। যদি তাদের নিরাপদ আশ্রয় না দেওয়া হয়, তারা একদিন পুরোপুরি হারিয়ে যাবে।

শিক্ষক মাইনুল ইসলাম বলেন, শহরে দ্রুত নগরায়নের ফলে গাছপালা কমে গেছে। নতুন ভবন হচ্ছে, কিন্তু কোথাও বড় গাছ লাগানো হচ্ছে না। পাখিদের আশ্রয় না থাকলে তারা স্বাভাবিকভাবেই শহর ছাড়বে। এখনই গাছ লাগানো শুরু না করলে রাজশাহী থেকে পাখিরা একসময় সম্পূর্ণ হারিয়ে যাবে।

স্থানীয় বাসিন্দা আজমত আলী যিনি শহরে ২৮ বছর ধরে নগরীর রেলগেট এলাকায় বসবাস করছেন, তিনি বলেন, আগে আমাদের বাড়ির সামনের গাছে শালিক, দোয়েল, চড়ুই, এমনকি বকও দেখা যেত। এখন শুধু মানুষ আর গাড়ি। গাছ কমে গেছে, বাতাসও আগের মতো লাগে না।

রাজশাহী কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শাহ মো. মাহবুব আলম বলন, শহরে  ফল দেয়া গাছ দিন দিন কমে যাওয়ার ফলে পাখিদের খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে যার ফলে পাখিরা এইসব ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। শব্দ দূষণ, ধুলাবালি কারণে তাদের প্রজনন কমে গেছে। এমনকি অনেক প্রজাতি এখন রাজশাহীর বাইরের গ্রামীণ এলাকায় চলে গেছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) রাজশাহী কমিটির সভাপতি মো. জামাত খান বলেন, দিন দিন রাত শেষ হলো মানুষের বসবাসের উপযোগী হারাচ্ছেন। আগে গাছ উজাড় করার কোন কাজ ছিল না এখন উন্নয়নের নামে অবৈধভাবে গাছ কাটা হচ্ছে যার ফলে এর প্রভাব পশুপাখি থেকে শুরু করে মানুষের উপর পড়ছে। যারা এ সকল গাছ কাটছে তাদের বিরুদ্ধে আইনুল ব্যবস্থা না দরকার। আর উন্নয়নের নামে যেসব গাছ কাটা হচ্ছে সেটা একটা প্রতারণা ছাড়া আর কিছু না। 

এই বিষয়ে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম কে একাধিক বার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

রাজশাহী সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার কাছে কেনো তথ্য নেই আমি ১ মাস আগে এখানে এসেছি যার ফলে আমি এই বিষয়ে বলতে পারছি না। প্রত্যেকটা প্রানি তার নিরাপদ আশ্রয় খোঁজে সেটা আছে কিনা সেটা দেখে, আবার সে খাবার, পরিবেশ এই সকল নিজিস গুলো থাকলে সেখানে পশু-পাখিরা থাকে। সাইন্টিফিক ডিটেলস ছাড়া তো আমি বলতে পারি না। এই গুলো নিয়ে যারা কাজ করে তাদের নিয়ে বসবো। সবগুলো পাখি দূরে থাকতে পছন্দ করে না। কিছু কিছু পাখি মানুষের খুব কাছে থাকতে চায়।