২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮:৪০

টঙ্গীতে কেমিক্যাল গুদামে অগ্নিকাণ্ডে চারজনের মৃত্যু, মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা

টঙ্গী পূর্ব থানা  © সংগৃহীত

গাজীপুরের টঙ্গীর সাহারা মার্কেট এলাকায় ফেমাস কেমিক্যাল লিমিটেডের গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে চারজনের মৃত্যুর ঘটনায় গুদাম মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা জোন-৩-এর উপসহকারী পরিচালক আব্দুল মান্নান বাদী হয়ে রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) টঙ্গী পূর্ব থানায় এ মামলা করেন।
 
মামলায় গুদামের চার মালিক ইসমাইল হোসেন (৪২), সোলাইমান (৩৫), তাজুল ইসলাম (৪০) ও রাকিবের (৩৮) নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করা হয়। তবে মামলার পর থেকেই নামীয় আসামিরা পলাতক রয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
 
গত সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সাহারা মার্কেট এলাকার ওই রাসায়নিক গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও প্রাণহানি ঠেকানো সম্ভব হয়নি। আগুন নেভাতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারান ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যারহাউস ইন্সপেক্টর খন্দকার জান্নাতুল নাঈম, ফায়ার ফাইটার শামীম আহমেদ ও নুরুল হুদা। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী দোকানের কর্মচারী বাবু হাওলাদার (২০) অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান।
 
দগ্ধদের সবাইকে উদ্ধার করে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। তবে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চারজনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় টঙ্গীজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
 
ফায়ার সার্ভিসের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, গুদামে বিপুল পরিমাণ দাহ্য কেমিক্যাল মজুদ ছিল। অগ্নিকাণ্ডে কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগুনে গুদামের পাশাপাশি আশপাশের কয়েকটি দোকানও পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
 
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, দুর্ঘটনার পর থেকে তারা এখনও স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা শুরু করতে পারেননি। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, অগ্নিকাণ্ডের সাত দিন পরও গুদাম থেকে বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হচ্ছে। এই গ্যাস মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ফলে ঘটনাস্থলের ১০০ মিটারের মধ্যে সাধারণ মানুষের চলাচলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এলাকা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
 
টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা শাহিন আলম বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গুদাম মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি ওহিদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছি।’
 
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকার মধ্যে অবৈধভাবে এসব কেমিক্যাল গুদাম পরিচালিত হচ্ছিল। প্রশাসনের তদারকির অভাবে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, প্রতিবারের মতো এবারও প্রভাবশালী মালিকরা পার পেয়ে যেতে পারেন।
 
টঙ্গীর এই অগ্নিকাণ্ডে চারজনের মৃত্যু, কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি এবং মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা আবারও প্রশ্ন তুলেছে—আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের ভেতরে বিপজ্জনক কেমিক্যাল গুদাম কীভাবে অনুমোদন পায় এবং কেন প্রশাসন আগে থেকে ব্যবস্থা নেয় না। পুলিশের দাবি, আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।