০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৩১

হাতি তাড়াতে বিদ্যুতের ফাঁদ, গরু আনতে গিয়ে যুবকের মৃত্যু; নারীসহ আহত ২

জাহেদ খান  © টিডিসি

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় হাতির আক্রমণ ঠেকাতে ধান খেত রক্ষায় দেওয়া বৈদ্যুতিক ফাঁদে আটকে জাহেদ খান (১৮) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আমির খান (২০) ও মেহেরুন্নেসা বাহান্নী (৩৫) নামের আরও দুজন আহত হয়েছেন। আহত আমির খান প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরলেও আহত নারী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানা গেছে।

সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৪টায় উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের খান বাড়ি দেয়াং পাহাড়ের এক্কুদ্দা এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত যুবক জাহেদ খান উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের খান বাড়ির আব্দুল হাফেজের ছেলে। ৪ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে জাহেদ সবার ছোট। সে পরিবারের খেত খামারের কাজ করত।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে হাতির আক্রমণ ঠেকাতে স্থানীরা এই পন্থা অবলম্বন করে আসছিলেন। রাতে বিদ্যুতের সংযোগ সচল রাখা হলেও দিনের বেলায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। তবে কেনই বা আজকে বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়নি সেটিই সবারই অজানা।

প্রত্যক্ষদর্শী নিহতের খালাতো ভাই মো. শাকিল বলেন, ‘প্রতিদিনের মতো আমার ভাই গরু দেখভালের জন্য বিলে আসে। এ সময় সে স্থানীয় জাফর মাস্টারের ছেলের লাগানো হাতির জন্য দেওয়া বৈদ্যুতিক ফাঁদে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। এ সময় তাকে উদ্ধার করতে গিয়ে আরও দুইজন আহত হয়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে উদ্ধার করে আনোয়ারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’

বৈদ্যুতিক সংযোগ দেওয়া বাড়িটিতে থাকা দিলুয়ারা বেগম বলেন, ‘এখানে আমরা থাকি না তবে আমাদের বাড়ি থেকেই বিদ্যুতের সংযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু কে বা কারা এই সংযোগ দিয়েছে আমি জানি না, আমার স্বামী মো. ইসহাক জানেন।’

স্থানীয় জাফর মাস্টারের ছেলে মাসুদ বিন জাফরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কোনো জমিতে আমরা বৈদ্যুতিক সংযোগ দিইনি। সংযোগ দেয়া জমিটি আমাদের নয়।’

বন বিভাগ বলছে, হাতির জন্য এ ধরনের ফাঁদ দণ্ডনীয় অপরাধ। জানতে চাইলে বাঁশখালী জলদি রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ বলেন, ‘হাতির আক্রমণ থেকে রক্ষার্থে এই ধরনের ফাঁদ ব্যবহার করা দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ধরনের কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে একই ঘটনায় বিকাল ৩টার দিকে উপজেলার বরুমচড়ায় পাকা দেওয়াল নির্মাণকাজ করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে হানিফ (২০) নামের আরেক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। সে উপজেলার বরুমচড়া ইউনিয়নের ভরাচর গ্রামের হায়দার আলীর বাড়ির আবু তাহেরের ছেলে। ২ ভাইয়ের মধ্যে সে ছোট।

নিহতের মামা জসিম সাওদাগর বলেন, ‘রাজমিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালাত আমার ভাগিনা। প্রতিদিনের মতো স্থানীয় একটি বাড়ির দেয়াল নির্মাণ করতে গিয়ে বৈদ্যুতিক তারের সঙ্গে লোহার পিঞ্জিরা লেগে আহত হন তিনি। পরে আনোয়ারা মেডিকেলে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’

এ বিষয়ে আনোয়ারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মুনতাছির জাহেদ বলেন, ‘ঘটনার পর তাদের হাসপাতালে আনা হলেও এর আগে তাদের মৃত্যু হয়।’

এ বিষয়ে আনোয়ারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনির হোসেন বলেন, “বৈরাগের ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আলামত সংগ্রহ করেছে। মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হবে। এছাড়া বরুমচড়ার ঘটনাটি শুনেছি। এ ঘটনায় তদন্ত করা হচ্ছে।’