যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কে খানাখন্দ, জনদুর্ভোগ চরমে
পিচের ঢালাই উঠে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় খানাখন্দের। দিনদিন এসব খানাখন্দ বড় বড় গর্তে পরিণত হয়েছে। বৃষ্টি হলে এসব গর্তে হাঁটু পানি জমে থাকে। দেখে মনে হয় সড়কের বুকে যেন ছোটখাটো পুকুর। যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের পালবাড়ি থেকে কালীগঞ্জ পর্যন্ত সড়কে এমন বেহালদশায় পরিণত হয়েছে। সবচেয়ে ভয়ংকর খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে পালবাড়ি থেকে চুড়ামনকাটি পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার সড়কের। বৃষ্টি হলে কাঁদায় পিচ্ছিল, আর রোদে উড়ে ধুলার ঝড়। এই সড়কে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন হাজারো মানুষ। সড়কে বেহাল অবস্থার কারণে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটছে।
সরেজমিনের দেখা গেছে, পালবাড়ি থেকে চুড়ামনকাটি পর্যন্ত সড়কের একাধিক স্থানের খানাখন্দে প্রায় ইট বিছানো হয়। কিন্তু বেশিদিন স্থায়ী হয়না। বৃষ্টি হলে দুর্ভোগের শেষ নেই। মানুষ কষ্ট করে চলাচল করছে। এই অবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন। কেননা ব্যস্ততম এই মহাসড়কে প্রতিদিন শ’শ’ যাত্রীবাহী বাস, সিএনজি, ইজিবাইক, ভ্যান, রিকশা, নসিমন, করিমন, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, ট্রাকসহ নানা পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করে। বেনাপোল, ভোমরা ও মংলা বন্দরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মালামাল আসা যাওয়া করে এ সড়ক দিয়ে। চুয়াডাঙ্গা, আলমডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া মাগুরা, যশোর, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের যাত্রীরা এই সড়ক ব্যবহার করেন।
এছাড়া, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতের জন্য এটি একমাত্র সড়ক। অথচ ব্যস্ততম এই মহাসড়কে ইট, বালি, খোয়া ও পিচ উঠে বড় বড় খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতে গর্তে পানি জমে থাকে। ফলে গর্তের গভীরতা বোঝার উপায় থাকে না। ছোট-বড় সব ধরনের যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটার পাশাপাশি ঘটছে দুর্ঘটনা। তারপরও বাধ্য হয়ে এই সড়ক দিয়ে শত শত যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছে। বিশেষ করে মোটরসাইকেল ও ছোট যানবাহনগুলো দুর্ঘটনায় পড়ছে বেশি। অনেক বাস ও ট্রাক সড়কের গর্তের কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ছে।
চুড়ামনকাটি বাজারে কথা হয় রুপসা পরিবহনের চালক গোলাম কিবরিয়া ও গড়াই পরিবহনের চালক শফিয়ার রহমানের সাথে। তারা জানান, যশোর-খুলনা মহাসড়ক এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। যেখানে-সেখানে বড় বড় গর্ত। দেখে মনে হয় ছোট ছোট পুকুর তৈরি হয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই সড়কে চলাচল করতে হচ্ছে। সড়কটি দ্রুত সংস্কারের প্রয়োজন।
ট্রাক চালক আলমগীর ওরফে আলম ও শহিদ হোসেন জানান, যশোর-খুলনা মহাসড়ক সংস্কারের অভাবে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মাঝে মাঝে পিচের রাস্তায় ইটের সলিং বিছানো হলেও বেশিদিন টেকেনা। মহাসড়ক স্থানীয়ভাবে সংস্কার প্রয়োজন।
নড়াইল এক্সপ্রেস পরিবহনের বাস চালক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, বেহালদশা দেখে মনে হয়না এটা ব্যস্ততম মহাসড়ক। যশোরের রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। গাড়ি চালাতে অনেক কষ্ট হয়। সড়কের বুকে যেখানে সেখানে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে।
মোটরসাইকেল চালক আব্দুর রাজ্জাক জানান, সম্প্রতি এক রাতে মোটরসাইকেল চালিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে ফিরছিলেন। পথিমধ্যে ধর্মতলা এলাকায় পৌঁছালে মোটরসাইকেলের সামনের চাকা গর্তে পড়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। তিনি গুরুতর আহত হলেও প্রাণে বেঁচে গেছেন। গর্তে পানি থাকার কারণে তিনি গভীরতা বুঝতে না পেরে মোটরসাইকেল চালিয়ে দিয়েছিলেন। সিএনজি যাত্রী সোহাগ হোসেন, সালমা আক্তার ও রবিউল ইসলাম জানান, চুড়ামনকাটি থেকে পালবাড়ি পর্যন্ত যাওয়ার পথে ঝাঁকুনিতে কোমরের হাড় ব্যথা হয়ে যায়। দ্রুত সময়ে মহাসড়কের উন্নয়ন প্রয়োজন। মোটরসাইকেল চালক রাশেদুল ইসলাম, মিজানুর রহমান জানান, এই রাস্তায় একাধিক মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। বৃষ্টির পর রাস্তা স্লিপ হওয়ায় অনেকেই মোটরসাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সাহস দেখাচ্ছে না।
যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া জানান, বর্ষার কারণে যশোর -ঝিনাইদহ মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একাধিক স্থানে পিচ ও খোয়া উঠে গেছে। বড় বড় গর্ত হয়ে গেছে। মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টি চিন্তা করে মহাসড়কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশে ইটের সলিং বিছিয়ে দেয়া হচ্ছে। টেন্ডার ছাড়া স্থায়ীভাবে উন্নয়ন কাজ সম্ভব নয়।