যশোরের অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র হয়ে উঠছে কালেক্টরেট পুকুর
যশোর শহরের মানুষের জন্য অন্যতম বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে ঐতিহাসিক কালেক্টরেট পুকুর। রঙিন মাছ ও নৌকার সংযোজনে পুকুরটির সৌন্দর্য বেড়েছে অনেকগুণ। প্রতিদিন এই নয়নাভিরাম পরিবেশ উপভোগ করতে নানা বয়সী মানুষ ছুটে আসছেন এখানে। নাগরিক জীবনের কোলাহল থেকে কিছুটা স্বস্তি পেতে বিকেল বেলা শিশু-কিশোর, যুবক ও প্রবীণ সবাই ভিড় করছেন পুকুরপাড়ে। অনেকেই বলছেন, এটি এখন যেন যশোর শহরের একটি আধুনিক পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
জানা গেছে, ১৭৮৬ সালে যশোর কালেক্টরেটের যাত্রা শুরু হয়। দীর্ঘ দুই শতকের পথচলায় একাধিকবার রূপ বদলালেও এটি এখনো যশোর জেলার প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু। বর্তমান জেলা প্রশাসকের কার্যালয় বা কালেক্টর ভবন ঘিরেই গড়ে উঠেছে জেলার প্রধান দপ্তরগুলো। অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি নাগরিক কল্যাণে অতীতের অনেক জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। কয়েক বছর আগে যশোর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কালেক্টরেট পুকুর খনন ও সংস্কার করে পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তরের কাজ শুরু হয়। তবে বর্তমান জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলামের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পুকুরটি ফিরে পেয়েছে এক নতুন রূপ, যা এখন যশোরবাসীর অন্যতম দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে।
পুকুরটির চারপাশ কংক্রিট দিয়ে বাঁধানো হয়েছে। রয়েছে শানবাঁধানো দুটি সিঁড়ি। চারপাশে ঘাস লাগানো হয়েছে। অবমুক্ত করা হয়েছে আট হাজারের বেশি রঙিন মাছ। সেই সঙ্গে দর্শনার্থীদের বাড়তি আনন্দ দিতে পুকুরে চালু হয়েছে বোটিংয়ের ব্যবস্থা। ফলে প্রতিদিনই এখানে ভিড় করছেন শত শত মানুষ। কেউ কেউ স্রেফ বসে থেকে রঙিন মাছের খেলা দেখছেন, কেউবা নৌকায় চড়ছেন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে।
কালেক্টরেট পুকুরপাড়ে গাছতলায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বলেন, আদালতে কাজে এসেছিলাম, কাজ শেষ হতে আরও কিছুক্ষণ লাগবে। তাই পুকুরপাড়ে এসে একটু বসছি। খুব ভালো লাগছে। জায়গাটা একেবারে বদলে গেছে। চারপাশে নতুন করে রাস্তা হয়েছে, ঘাস লাগানো হয়েছে। সবচেয়ে ভালো লাগছে মাছগুলো দেখে।
সুমাইয়া নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, আগে এখানে পদ্মফুল ছিল, সঙ্গে রঙিন মাছও ছিল—তখন খুব সুন্দর লাগতো। এখন পদ্মফুল নেই, তবে বোট যোগ হয়েছে। রঙিন মাছও আছে। তাই এখনো সুন্দর। যদি আবার পদ্মফুল লাগানো হয়, তাহলে সৌন্দর্য আরও বাড়বে। কর্তৃপক্ষের উচিত এ বিষয়টিতে নজর দেওয়া।
সাহানা খাতুন নামে এক অভিভাবক বলেন, বাচ্চাদের নিয়ে প্রায়ই এখানে আসি। বসার জায়গা আছে, হাঁটার পথও সুন্দর। পুকুরের ধারে হাঁটতে হাঁটতে বাচ্চারা রঙিন মাছ দেখে খুশি হয়। এখন তো বোটও চালু হয়েছে, তাই তারা আরও বেশি আনন্দ পায়।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেন, আগে থেকেই কালেক্টরেট পুকুরটি যশোরবাসীর কাছে পরিচিত একটি জায়গা ছিল। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের আর্থিক সহায়তায় এটি সংস্কার করা হয়েছে। আগে পদ্মফুল রোপণ করা হয়েছিল, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা পুকুরের পাড়গুলো পুনর্নির্মাণ করেছি, ঘাস লাগিয়েছি। নতুন করে আরও রঙিন মাছ ছাড়া হয়েছে, বোট চালু করা হয়েছে। এখন প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এখানে আসছেন, সময় কাটাচ্ছেন, বিনোদন নিচ্ছেন। আমরা চেষ্টা করছি জায়গাটি আরও দৃষ্টিনন্দনভাবে রক্ষা ও পরিচালনা করতে।