চরাঞ্চলে বর্ষার উপহার শাপলা: সৌন্দর্যের পাশাপাশি জীবিকার ভরসা
ভোলার উপকূলজুড়ে এখন বর্ষার পানিতে সয়লাব। চারদিকে পানি, আর সেই পানিতে নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে বিল-জলাশয়। চরাঞ্চলের এই ভরা বর্ষায় ব্যস্ত হয়ে উঠেছে স্থানীয়রা। জীবিকার খোঁজে তারা ছুটছেন এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে।
জেলেদের পাশাপাশি এ সময় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বিলপাড়ের সাধারণ মানুষরাও। কারণ, বর্ষার পানিতে ফুটে উঠেছে প্রকৃতির এক অপার সৌন্দর্য—শাপলা ফুল। শুধু সৌন্দর্যই নয়, এই শাপলাই এখন হয়ে উঠেছে চরাঞ্চলের অনেক মানুষের জীবিকার অবলম্বন।
জানা গেছে, বৃষ্টিপাত বেশি হলে বিল-জলাশয়ে শাপলার পরিমাণও বাড়ে। চরফ্যাশন সদর কাঁচাবাজারে শাপলার ভালো চাহিদা থাকায় স্থানীয়রা প্রতিদিন ভোরে বেরিয়ে পড়েন শাপলা সংগ্রহে। এক আঁটি শাপলা বিক্রি হয় ১০ থেকে ১২ টাকায়। চাহিদা থাকায় বিক্রিও হয় ভালো, ফলে অনেকের আয়-রোজগারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ এখন শাপলা।
রসুলপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আবু তাহের, ভোরে নাস্তা করে হাতে বাঁশের ঝুড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন শাপলা তুলতে। শুকনো মৌসুমে সামান্য কৃষিকাজ আর বর্ষায় শাপলা বিক্রিই তার সংসারের অবলম্বন। তিনি জানান, প্রতিদিন ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত আয় হয় পাইকারি ও খুচরা বিক্রি মিলিয়ে।
আলী হোসেন, যিনি কাঁচা সবজি বিক্রেতা, বর্ষায় অতিরিক্ত আয় করতে শাপলা ও কচুর গাটি তুলে বাজারে বিক্রি করেন। দিনে প্রায় ২০০০ টাকার মতো শাপলা বিক্রি করে থাকেন তিনি।
উত্তর আইচা গ্রামের হারুন দালাল প্রতিদিন এক ব্যবসায়ীর কাছে প্রায় ১০০ আঁটি শাপলা সরবরাহ করেন, যা থেকে আয় হয় ৫০০–৬০০ টাকা। তবে তিনি বলেন, এত শাপলা তোলা বেশ কষ্টসাধ্য হলেও জীবিকার জন্য এই কষ্ট স্বীকার করতেই হয়।
শাপলা শুধু বিক্রির জন্যই নয়, অনেকের ঘরের খাদ্য তালিকায়ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে রয়েছে। এওয়াজপুর ইউনিয়নের সুমিত্রা রানি জানান, তার মেয়ে বরিশালে পড়াশোনা করে, আর সে শাপলা দিয়ে রান্না খুব পছন্দ করে। তাই কচুর গাটি, কলার মোচা ও শাপলা নিয়ে তৈরি খাবার মেয়ের জন্য পাঠানোর ব্যবস্থা করেন তিনি।
চরফ্যাশনের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘শাপলা কেউ চাষ করে না, বরং এটি প্রাকৃতিকভাবেই বর্ষার পানিতে বেড়ে ওঠে। কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন পড়ে না। তবে মাটির উর্বরতা ও পরিবেশ বজায় রাখতে না পারলে একসময় এই প্রাকৃতিক উপহার হারিয়ে যেতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুধু আহার বা জীবিকার উৎস হিসেবে নয়, শাপলা আমাদের জাতীয় ফুল। অতিরিক্ত সংগ্রহে এর প্রাকৃতিক বংশবিস্তারে বাধা যেন না পড়ে, সেদিকে সচেতন দৃষ্টি রাখা এখন সময়ের দাবি।’