১৯ জুলাই ২০২৫, ০৯:৪৪

যশোরে অতিবৃষ্টিতে বীজতলা নষ্ট, আমন ধানের চারা সংকটের কৃষক

অতিবৃষ্টিতে বীজতলা নষ্ট  © সংগৃহীত

যশোরে টানা কয়েকদিনের ভারি বৃষ্টিপাতে অধিকাংশ নিচু জমিতে আমন ধানের বীজতলা তলিয়ে গেছে। ধানের চারা পচে নষ্ট হয়ে গেছে। যার ফলে  এ মৌসুমে ধানের চারা সংকট দেখা দিয়েছে। কৃষকরা বলছেন, সঠিক সময়ে চারা পাওয়া না গেলে, আমন মৌসুমে ধান চাষে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হয়ে পড়বে।

জানা গেছে, বর্তমানে চলছে রোপা আমন ধান রোপনের ভরা মৌসুম। যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি, কাশিমপুর, হৈবতপুর, দেয়াড়াসহ জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে মাঠের পর মাঠ কৃষক চরম ব্যস্ত সময় পার করছেন আমন ধান রোপনের জন্য। ট্রাক্টর বা লাঙল দিয়ে জমি তৈরি, আগাছা পরিস্কার, সার বোনা, জমির আইল কেটে ধান লাগাবার উপযোগী করাসহ সকল প্রস্তুতি প্রায় শেষ করেছেন। এ কাজে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খেয়ে না খেয়ে ক্ষেতে সময় পার করছে তারা। তবে ধান রোপনের শুরুতে চারা সংকটর পড়েছেন কৃষক। টানা কয়েকদিনের ভারি বৃষ্টিতে কৃষকের বীজতলা এখনো পানি নিচে। অধিকাংশ বীজতলায় পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। সেই কারণে মূলত ধানের চারা সংকটে পড়েছেন কৃষকেরা। পানিতে জমি ডুবে থাকার কারণে যশোরের বিখ্যাত এড়লের বিল, বদধানার বিল, ছোট বিল, বিখ্যাত হরিণার বিলসহ ডোবা নালাতে এবার আমন রোপন সম্ভব হবে না।

সদরের চুড়ামনকাটি  ইউনিয়নের কৃষক বেলাল হোসেন জানান, অতি ভারী বৃষ্টিতে আমন ধানের বীজতলা পানির নিচে তলিয়ে থাকার কারণে অধিবাংশ চারা পচে গেছে। ফলে যতটুকু জমিতে ধান চাষ করবো সে পরিমাণ চারা আমার উৎপন্ন হবে না। যদি নষ্ট না হতো তাহলে অনেক চারা বিক্রি করা যেতো। এখন আমাকে চারা কিনে ধান রোপন করতে হবে। কিন্তু কোথাও চারার সন্ধান পাইনি।

চৌগাছা উপজেলার স্বরূপদা ইউনিয়নের কৃষক কবির মিয়া বলেন,  ১৫ কেজি ধানের বীজতলার পুরোটা নষ্ট হয়ে গেছে বৃষ্টিতে তলিয়ে। তার দেড় বিঘা জমি এখনো পানির নিচে। যে জমিতে ধান লাগানো সম্ভব না। তিনি বহু জায়গায় অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও বাকি জমিতে ধান লাগানোর জন্য চারার সন্ধান মিলাতে পারেননি। অধিকাংশ কৃষকের মতে বীজতলা পানিতে ডুবে অর্ধেক বা পুরোটা নষ্ট হয়ে গেছে। বিল, খাল বা নিচু এলাকাতে যে সকল কৃষক বীজতলা তৈরি করেছিলেন তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বেশি।

কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্থানীয় কৃষি অফিসকে এলাকার রোপা আমন বীজতলার ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে দ্রুততম সময়ে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করে কৃষদের এ সংকট থেকে উত্তরণের ব্যবস্থা করতে হবে।

কৃষি বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, আমন চাষের জন্য উপযুক্ত সময় আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। এর মধ্যে যদি কৃষকরা চারার ব্যবস্থা করতে না পারেন, তাহলে তাদের পুরো মৌসুমটাই ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। অনেক কৃষক বিভিন্ন জায়গা থেকে চারা সংগ্রহের চেষ্টা করছেন, যার ফলে চারার দামও বাড়তি।

যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোশাররফ হোসেন বলেন,  অনেক কৃষক ঝুঁকি নিয়ে নতুন বীজতলা তৈরির কথা ভাবছেন। অনেকে তৈরি করে বীজ ফেলেছেন। চারা হয়ে গেলে রোপা আমন একটু দেরিতে বা নাবিতে উঠবে। এ অবস্থায় দ্রুত সরকারি সহায়তা ও বিকল্প বীজতলা গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে । এটা না করলে  আমন মৌসুমে কৃষকের ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হতে পারে। সাথে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না।ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন দেশের কৃষক। এই সংকট কেবল কৃষকের ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, বরং দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্যও হুমকি। তাই এখনই প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে  কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছে কৃষি অফিস।