নদীগর্ভে শত শত ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি, আতঙ্কে ২০ হাজার মানুষ
পিরোজপুর সদর উপজেলার উপকূলীয় জনপদে কঁচা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে এলাকার মানচিত্র। দীর্ঘদিন ধরে নদীভাঙন অব্যাহত থাকার পাশাপাশি নদী তীরবর্তী বেড়িবাঁধগুলো সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যাওয়ায় দিন দিন ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি হারিয়ে যাচ্ছে নদীগর্ভে।
দেওনাখালী, কুমিরমড়া, বানেশ্বরপুর ও হুলারহাট এলাকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে ভাঙনের মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে, প্রতিদিনই নদীর পেটে হারিয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুম ও পূর্ণিমার সময় কঁচা নদী রুদ্ররূপ ধারণ করলে ভাঙন ভয়াবহ আকার নেয়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’ ও ‘আইলা’র পর ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধগুলো আর সংস্কার করা হয়নি। ফলে নদীভাঙন ও জোয়ারের পানিতে প্রতিবছর নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে যেমন চরম অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন কৃষকরা, তেমনি বাড়ছে মানবিক বিপর্যয়।
স্থানীয় এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘ছোটবেলায় দেখেছি বেড়িবাঁধ অনেক দূরে ছিল। এখন নদী ভেঙে আমাদের বাড়ির উঠানে চলে এসেছে। জোয়ারে পানি বাড়লে ঘরের ভেতরে পানি ঢুকে পড়ে। সিডরের পর থেকে আর কোনো স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ হয়নি।’
আরেক কৃষক জানান, ‘কৃষি জমিতে পানি উঠে যায়, আমরা কোনো ফসল ফলাতে পারি না। সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবি—দ্রুত টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ হোক।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, পিরোজপুর সদর উপজেলায় মোট ৫৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ইন্দুরকানী থেকে হুলারহাট পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁধ রয়েছে। বর্তমানে হুলারহাট অংশের প্রায় ২ কিলোমিটার বাঁধ ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী নুসাইর হোসেন বলেন,‘প্রাকৃতিক দুর্যোগে পিরোজপুরের অনেক বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো মেরামতের জন্য আমরা সম্পত্তি ৩০ কিলোমিটারের বেড়িবাদ পুনর্বাসনের জন্য একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সামনের অর্থবছরে জনগণের চাহিদার ভিত্তিতে বাঁধ কোন বাসন করব।’
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, বারবার আবেদন ও প্রকল্প প্রস্তাবনার পরও এখনো পর্যন্ত পাইলিং বা টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে বছরের পর বছর ধরে ভাঙনের শিকার মানুষগুলো নিজের ভিটেমাটি হারিয়ে পথে বসতে বাধ্য হচ্ছেন।
নদীভাঙনের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা পেতে হলে এখনই জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ ও টেকসই বাঁধ নির্মাণ প্রয়োজন। অন্যথায় অচিরেই পিরোজপুরের উপকূলীয় মানচিত্রে বড় পরিবর্তন ঘটতে পারে—এমন শঙ্কা ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্টদের।