০৩ জুন ২০২৫, ১৪:৩৬

বড় গরুর চাহিদা কম, লোকসানের শঙ্কায় রাজশাহীর খামারিরা

রাজশাহী সিটি গরুর হাট  © টিডিসি ফটো

ঈদুল আজহা যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই জমে উঠেছে রাজশাহীর গরুর হাট। প্রতিদিনই বাড়ছে গরুর আমদানি এবং ক্রেতার ভিড়। তবে বাজারে দেখা দিয়েছে এক ধরনের বৈষম্য—বড় গরুর চাহিদা তুলনামূলকভাবে কম, বিপরীতে মাঝারি আকৃতির গরুর চাহিদা বেশি। এতে করে লোকসানের আশঙ্কায় রয়েছেন বড় গরু পালনকারী খামারিরা।

রাজশাহীর সিটি হাট, নওহাটা ও কাটাখালীসহ বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখা গেছে, গত বছর যেসব বড় গরুর ব্যাপক কদর ছিল, এবার সেগুলোর প্রতি আগ্রহ খুব কম। দাম ও ব্যবস্থাপনার সুবিধার কারণে বেশিরভাগ ক্রেতা মাঝারি গরুর দিকেই ঝুঁকছেন।

একটি মাঝারি আকৃতির গরু যেখানে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে, সেখানে বড় গরুর দাম ২ লাখ বা তার চেয়েও বেশি ধরা হচ্ছে। অথচ একটি বড় গরু লালন-পালনে খরচ পড়েছে দেড় থেকে এক লাখ আশি হাজার টাকা পর্যন্ত। ফলে লাভের আশা দূরে থাক, মূলধনও ফেরত পাবেন কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় খামারিরা।

বাঘা উপজেলার খামারি মো. কালাম বলেন, “আট-নয় মাস ধরে বড় গরু লালন করেছি। খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। অথচ হাটে এসে দেখি কেউ ১ লাখ ৮০ হাজারের বেশি দিচ্ছে না। এত কষ্ট করে লোকসানে পড়ব ভাবিনি।”

কাকনহাটের তরুণ খামারি সজিব হোসেন জানান, “গত বছরের মতো লাভের আশায় গরু পালন শুরু করেছিলাম। কিন্তু এবার খাদ্যের দাম বেড়েছে, আর হাটে এসে দেখি বড় গরুর দিকে কেউ তাকায় না। মনে হচ্ছে, গরু বড় করাটাই যেন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

গরু ব্যাপারী আনিস রহমান বলেন, “বাজারে বড় গরুর তেমন চাহিদা নেই। মানুষ এখন হিসাব করে গরু কিনছে। মাঝারি গরুতে দাম ও পরিবহন খরচ কম। ফলে বড় গরুর বিক্রি ব্যাহত হচ্ছে।”

সিটি হাটের এজারাদার ইয়াজ রায়হান বলেন, “হাট এখন জমতে শুরু করেছে। রবিবার আনুমানিক ৫ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার গরু বিক্রি হয়েছে। মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি থাকায় সেগুলোই বেশি বিক্রি হচ্ছে।”

রাজশাহী বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. আনন্দ কুমার অধিকারী বলেন, “এ বছর গরুর দাম কিছুটা কম। মাঝারি গরু বিক্রি হচ্ছে বেশি, কারণ প্রতি কেজি মাংসের দাম পড়ছে ৭৫০–৮০০ টাকা। বড় গরুর ক্ষেত্রে ওজন অনুসারে দাম বেড়ে গিয়ে কেজিপ্রতি ১৫০০–২০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে যাচ্ছে। ফলে মানুষ বড় গরুর দিকে আগ্রহ হারাচ্ছে।”

তিনি আরও জানান, রাজশাহীতে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার কোরবানিযোগ্য গরু রয়েছে। এদের মধ্যে বড় গরুর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। তবে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় খামারিরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন।

ডা. আনন্দ আশ্বস্ত করে বলেন, “রাজশাহীর গরুর বাজারে এবার কোনো ভারতীয় বা বাইরের গরুর উপস্থিতি নেই। এখানকার গরুই ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ হচ্ছে। প্রায় ১৭ লাখ গরু ঢাকা পাঠানো হবে বলে আমাদের ধারণা।”