সীমান্তে গরু প্রবেশ, ঈদে লোকসানের শঙ্কা খামারিদের
আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন ফেনীর খামারিরা। তবে সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু প্রবেশ করায় স্থানীয় খামারিরা পড়েছেন লোকসানের শঙ্কায়। তারা জানান, বছরের পর বছর যত্ন করে গরু পালন করে লাভের বদলে উল্টো ক্ষতির মুখে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিজিবি সূত্রে জানা যায়, ফেনীর বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে গত মার্চ ও এপ্রিল মাসে অবৈধপথে ভারত থেকে আসা ১২৩ টি গরু আটক করা হয়েছে; যার আনুমানিক বাজারমূল্য ৬৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক খামারি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘ফেনীর পরশুরামের, ফুলগাজীর ও ছাগলনাইয়া উপজেলার কিছু এলাকা দিয়ে বছরজুড়ে ভারতীয় গরু প্রবেশ করে। এমনটি হতে থাকলে কোরবানির বাজারে আমাদের বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।’ এটি ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরও বাড়তি নজর দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক খামারি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘সারা বছর খরচ ও পরিশ্রম করে গরু পালন করি কোরবানির বাজারের জন্য। কিন্তু ফেনীর বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে নিয়মিত ভারতীয় গরু প্রবেশ করছে। এতে বাজারে আমাদের গরুর চাহিদা ও দাম দুটোই কমে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের মতো খামারিদের জন্য টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।’
আরও পড়ুন: বিদেশে উচ্চশিক্ষা: সাশ্রয়ী খরচ ও সহজে ভিসা সুবিধা প্রাপ্তিতে আদর্শ ৮ দেশ
এ ব্যাপারে বিজিবির ফেনী ব্যাটালিয়ন (৪ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমাদের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণ গরু রয়েছে। অবৈধভাবে সীমান্ত দিয়ে যেন কোনো গরু না আসে সেজন্য সীমান্তে বিজিবি সচেষ্ট রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী অবৈধভাবে ভারতীয় গরু প্রবেশ বন্ধে সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’
এদিকে গত বছরের আগস্টে ফেনীতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার ধকল কাটিয়ে আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে শেষ সময়ে পশু পরিচর্যার প্রস্তুতি নিচ্ছেন খামারিরা। প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্যমতে, প্রতিবছরের মতো এবারও স্থানীয় চাহিদার তুলনায় দেশে কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা বেশি রয়েছে। তবে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের আশঙ্কা করছেন, পশু খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির সরাসরি প্রভাব পড়বে কোরবানির বাজারে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় তথ্যমতে, জেলায় প্রতিবছরের মতো এবারও স্থানীয় চাহিদার তুলনায় পশু বেশি রয়েছে। এবার জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৮২ হাজার ৩৩৬টি। তারমধ্যে বাণিজ্যিক ও পারিবারিকভাবে লালনপালন করা হচ্ছে ৮৭ হাজার ২২৭টি গবাদি পশু। এরমধ্যে ৬৯ হাজার ৩৬০টি গরু, ১ হাজার ৬৬৭টি মহিষ এবং ১৩ হাজার ২৪৩টি ছাগল ও ৩ হাজার ১৪৭টি ভেড়া প্রস্তুত রয়েছে।
এর আগে গত বছর জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা ছিল ৮৭ হাজার ২০০টি। তারমধ্যে বাণিজ্যিক ও পারিবারিকভাবে লালনপালন করা হয় ৯০ হাজার ২৫০টি গবাদি পশু।
ফুলগাজীর মদিনা এগ্রোর স্বত্বাধিকারী মো. ইব্রাহিম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আগে প্রবাসে ছিলাম। এখন দেশে এসে ২০২১ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে গরু লালনপালন করছি। চলতি বছর খামারে প্রায় দুই শতাধিক গরু রয়েছে। সময়ের সঙ্গে গোখাদ্যের দাম অনেক বেড়েছে। সেই অনুযায়ী দামও কিছুটা বেশি হবে স্বাভাবিক।’
রিয়াদ এগ্রোর স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ রিয়াদ বলেন, ‘বন্যার কারণে গত বছর অনেক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। তবে এবার আমরা আগেভাগেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি। এখন শেষ সময়ে পশুদের পরিচর্যায় মনোযোগ দিচ্ছি। খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচ কিছুটা বেশি হচ্ছে, যা বাজারমূল্যে প্রভাব ফেলতে পারে। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি ক্রেতাদের কাছে ন্যায্য দামে ভালো মানের পশু পৌঁছে দিতে।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোজাম্মেল হক জানান, আসন্ন কোরবানিকে কেন্দ্র করে ফেনী জেলায় কোরবানির পশুর কোনো সংকট দেখা দেবে না। তালিকাভুক্ত প্রায় ৫ হাজার খামারির পাশাপাশি অনেকে ব্যক্তি উদ্যোগে কোরবানির পশু লালনপালন করছেন। তিনি বলেন, ‘ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে পেশাদার ও মৌসুমি কসাইদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং চামড়া সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।’
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে জানান, পশুর সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকায় এবারের কোরবানি বাজার খামারি ও ক্রেতা উভয়ের অনুকূলে থাকবে। পাশাপাশি সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে গরু আমদানি বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।