স্কুলের কমিটি নিয়ে দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব, প্রধান শিক্ষকের চেয়ার ঝুলছে গাছে
রাজশাহীর পবা উপজেলার বাগধানী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষ তালাবদ্ধ আর তার ব্যবহৃত চেয়ারটি বিদ্যালয়ের সামনের গাছে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্কুলের শিক্ষকরা।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, পরিচালনা কমিটির সভাপতির পদ নিয়ে স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে তিন দিন ধরে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে চারটি তালা ঝুলছে।
প্রধান শিক্ষক মঞ্জু মনোয়ারা অভিযোগ করেছেন, তাকে মারধর করা হয়েছে এবং কক্ষ থেকে বের করে দিয়ে চেয়ার বাইরে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন নওহাটা পৌরসভার সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা হাফিজুর রহমান। তিনি আত্মগোপনে যাওয়ার পর চলতি বছরের ৩ মার্চ নতুন সভাপতি হন বিএনপি-সমর্থিত মামুন-অর-রশিদ, যিনি নওহাটা পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে পৌর বিএনপির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নাজিম উদ্দিন মোল্লা সভাপতি পদে আগ্রহী ছিলেন। তিনি জানান, তিনি পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক মেয়র মোকবুল হোসেনের সমর্থক। তিনি নতুন কমিটিকে মেনে নেননি।
আরও পড়ুন: যমুনার সামনে থেকে সরে জনসভাস্থলে গেলেন আন্দোলনকারীরা
মঙ্গলবার (৬ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় পরিচালনা কমিটির সভা ডাকা হয়। জানানো হয়, সভায় পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলামের উপস্থিতির কথা থাকলেও সভা শুরুর আগেই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। ধাক্কাধাক্কি, গালাগালি ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ সময় প্রধান শিক্ষককে কক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হয় এবং চারটি তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। তার চেয়ার বাইরে ফেলে দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) দেখা যায়, সেই চেয়ার গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। শিক্ষকরা জানান, প্রথমে চেয়ারটি ডোবায় ফেলা হয়েছিল, পরে তা তুলে এনে গাছে টাঙানো হয়েছে।
ঘটনার পর প্রধান শিক্ষক মঞ্জু মনোয়ারা পবা থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। প্রদত্ত অভিযোগপত্রে উল্লিখিত অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন নওহাটা পৌরসভার বাসিন্দা আতাউর, বাগসারা উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক মকসেদ আলী, সাবেক কাউন্সিলর নাজিম উদ্দিন মোল্লা ও বাগধানী গ্রামের জমসেদসহ ১০-১২ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি।
দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে প্রধান শিক্ষক মঞ্জু মনোয়ারা বলেন, এটি বিএনপির দুই পক্ষের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। বিদ্যালয়ের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। তালার কারণে অফিসের সব কাজ বন্ধ। উপবৃত্তি, পরীক্ষার ফাইলসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজ আটকে আছে।
আরও পড়ুন: আ.লীগ নিষিদ্ধকরণে আইনের ব্যাখ্যা দিলেন আসিফ নজরুল
বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন উল্লেখ করে প্রধান শিক্ষক মঞ্জু মনোয়ারা আরও বলেন, ‘বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলেন, ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে। প্রতিটি শ্রেণিতে ৫০-৬০ জনের পরিবর্তে মাত্র ১০-১২ জন শিক্ষার্থী আসছে।
পরিচালনা কমিটির সভাপতি মামুন-অর-রশিদ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘ঘটনার সময় আমরা সেখানে পৌঁছানোর আগেই তালা লাগানো হয়েছিল।’
আরও পড়ুন: গুচ্ছের ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শেষ, প্রশ্ন দেখুন এখানে
অভিযোগ অস্বীকার করে নাজিম উদ্দিন মোল্লা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমি শুধু দেখতে গিয়েছিলাম। আমরা কোনো তালা লাগাইনি বা ভাঙচুর করিনি। প্রধান শিক্ষককে কেউ শিখিয়ে বলাচ্ছে।’
পবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ঘটনা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।