দখল-দূষণে বিলুপ্তির পথে পটুয়াখালীর শতবর্ষী খাস পুকুর
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর দেশের অন্যতম বৃহত্তম মৎস্যবন্দর হিসেবে পরিচিত। এ বন্দরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত শত বছরের পুরোনো খাস পুকুরটি বর্তমানে দখল ও দূষণের কারণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। একসময়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলেদের জন্য অপরিহার্য এই পুকুরটি আজ ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।
প্রাচীন এই জলাধারটি এক সময় গোসল ও রান্নার কাজে ব্যবহৃত হতো। লবণাক্ত নদীর পানি ব্যবহারের অযোগ্য হওয়ায় জেলেরা সমুদ্রে যাত্রার আগে এখান থেকেই ড্রামে পানি সংগ্রহ করতেন। স্থানীয়দের মতে, পুকুরটির পানি ছিল সুপেয় এবং এটি মহিপুর বাজারের পানির একমাত্র উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
তবে বর্তমানে পুকুরটি প্রভাবশালী মহলের দখলে চলে গেছে। চারপাশ ঘিরে গড়ে উঠেছে দোকানপাট, যেখানে প্রতিনিয়ত বর্জ্য ফেলে পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছে। এর ফলে শুধু জলাধারটি নয়, আশপাশের পরিবেশও মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. শাহ্ আলম মুন্সী জানান, “প্রায় শত বছর আগে খনন করা এই খাস পুকুরটি মহিপুরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতীক। একসময় এটি এলাকার পানীয় জলের প্রধান উৎস ছিলো। বর্তমানে এটি দখলদারদের কারণে সংকুচিত হয়ে পড়েছে।”
জেলে আব্দুল জলিল বলেন, “এই পুকুরটি আমাদের জীবনের অংশ ছিলো। এখন বিশুদ্ধ পানি পেতে আমাদের কষ্ট হয়। প্রশাসনের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
বাজারের ব্যবসায়ী মহিবুল্লাহ মোল্লা বলেন, “পুকুরটি ধ্বংস হওয়ায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এটি পুনরুদ্ধার করা হলে ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী উপকৃত হবে। এমনকি অগ্নিকাণ্ডের সময়ও এই পুকুরের পানি কাজে আসত।”
২০২০ সালের ২৬ জুলাই মহিপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের সভার রেজুলেশনসহ জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন পাঠানো হলেও এখনো পর্যন্ত কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইয়াসীন সাদেক বলেন, “উপজেলা প্রশাসন প্রকল্পের মাধ্যমে পুকুর খননের ব্যবস্থা নিতে পারে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করা হবে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম জানান, “মহিপুরের একটি পুকুর সম্প্রতি খনন করা হয়েছে। আপনি যে পুকুরের কথা বলছেন তা খতিয়ে দেখা হবে এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে খননের উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
সচেতন মহল মনে করছে, অবিলম্বে দখলদারদের উচ্ছেদ করে পুকুরটি পুনরুদ্ধার করা না গেলে মহিপুরের পরিবেশ ও জলবায়ুর ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তারা প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।