স্নাতকোত্তর করেও মেলেনি চাকরি, এখন ‘এমএ পাশ লটারিওয়ালা’
রাস্তার ধারে ছোট একটি টেবিলে থরে থরে সাজানো লটারির টিকিট। টেবিলের তিন দিকে বড়বড় করে লেখা ‘এমএ পাশ লটারিওয়ালা তন্ময়’। এভাবেই পশ্চিবঙ্গের মুর্শিদাবাদের নওদার আমতলা বাজার এলাকায় লটারির টিকিট বিক্রি করছেন তন্ময় চুনারি। তার বাড়ি নওদার সাঁকোয়া এলাকায়।
লটারির টিকিট সাজাতে সাজাতে তন্ময় জানান, সপ্তম শ্রেণিতে ওঠার পরেই তার বাবার মৃত্যু হয়। বাড়িতে তখন মা, তিনি আর দাদা, বৌদি। দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোগাড় করতে সাইকেল দোকানে কাজ নেন কিশোর তন্ময়। পরে এক প্রকার স্কুলছুট হয়ে পড়েন। সংসারের হাল ধরতে তার দাদা জয়দেব চুনারি আমতলা বাজার এলাকায় টেবিল পেতে লটারির টিকিট বিক্রি শুরু করেন। ফের স্কুলে ভর্তি হন তন্ময়। ২০১১ সালে প্রথম বিভাগে মাধ্যমিক পাশ করেন। তার পর সংসারের খরচ জোগাতে কখনও রাজমিস্ত্রি, কখনও রংমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ, কখনও অন্যের জমিতে দিনমজুরিও করতে হয়েছে তাকে। এভাবে ২০১৮ সালে আমতলা যতীন্দ্র রাজেন্দ্র মহাবিদ্যালয় থেকে বিএ এবং গত বছর দূরশিক্ষায় বাংলা নিয়ে এমএ পাশ করেন তিনি।
তন্ময় জানান, রাজ্য পুলিশের এসআই, কনস্টেবল, কেন্দ্রে সিআইএসএফ থেকে ব্যাংক, রেলসহ একাধিক পরীক্ষায় বসেছেন তিনি। অনেক পরীক্ষায় প্রথম ধাপের লিখিত, শারীরিক পরীক্ষায় পাশ করার পরেও মেলেনি চাকরি। এ দিকে মাস কয়েক আগে হঠাৎই মৃত্যু হয় দাদা জয়দেবের। সংসারের ভার এসে পড়ে তন্ময়ের উপরে। অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা, ভাইপোর পড়াশোনাসহ চারজনের সংসার চালাতে দাদার মতোই লটারির টিকিট বিক্রি শুরু করেন তন্ময়।
আমতলা বাজার এলাকায় একটি নতুন টেবিল তৈরি করিয়েছেন। তাতে লেখা ‘এমএ পাশ লটারিওয়ালা তন্ময়’। আর তার পরেই তন্ময়কে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে বাজারের আনাচে-কানাচে। ক’দিন থেকে ভিড়ও বেড়েছে তার টেবিলের সামনে।
কিন্তু কেন লটারির টিকিট বিক্রির পেশা বেছে নিলেন? তন্ময় বলেন, যা অবস্থা, তাতে মিছিমিছি চাকরি পিছনে ছুটে বয়স নষ্ট হচ্ছে। টুকিটাকি টিউশন করে পকেট খরচই ওঠে না। তাছাড়া, দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে অন্য ব্যবসা করার মতো পুঁজি বা সামর্থ্য কিছুই নেই। আর লটারি বিক্রি সরকার স্বীকৃত, তা ছাড়া পুঁজিও লাগে না।
দিনভর লটারির টিকিট বিক্রি করে গড়ে আড়াই-তিনশো টাকা কমিশন পাচ্ছেন। তা দিয়েই কোনও রকমে চলছে চার জনের সংসার। তবে চাকরির জন্য হাল ছাড়েননি তন্ময়। পুলিশে বা সামরিক বাহিনীতে চাকরির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে কোনও সকালে দৌড় বাদ দেন না। দোকানে বসেও নিয়মিত বইয়ের পাতাতে চোখ বুলিয়ে নেন তন্ময়।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা