২৫ মার্চ ২০২২, ১৬:০৮

বাংলাদেশে ভবিষ্যতের সেরা ৫ পেশা

বাংলাদেশে ভবিষ্যতের সেরা ৫ পেশা  © সংগৃহীত

বাংলাদেশে বর্তমানে পেশা বা চাকরি নির্বাচনের ক্ষেত্রে সম্ভবত বেশিরভাগ মানুষই সরকারি চাকরিই পছন্দ করেন। দেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি বিবেচনা করলে সরকারি চাকরিই সবচেয়ে যুতসই বলে মনে হয়। আগামী দশকগুলোতে কোন পেশা বা কাজ বেশি গুরুত্ব পাবে সে বিষয়ে দেশের বিভিন্ন খাতের কয়েকজন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) তাদের মত দিয়েছে।

বিজনেস অ্যান্ড প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট, ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প

জেনেরিক ঔষধশিল্পে গত এক দশকে বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম নিয়ে কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতার হার বেড়ে গেছে। এ ধরনের পরিস্থিতিকে প্রাইস-ওয়ার বা মূল্য-যুদ্ধ বলা হয়। এসব ক্ষেত্রে একটি কোম্পানি তাদের কোনো পণ্য তাদের প্রতিযোগী কোম্পানির একই পণ্যের দামের চেয়ে কম দামে বিক্রি করে।

এ ধরনের কাজের মানসিকতা থাকলে একজন শিক্ষার্থীকে জীববিজ্ঞান ও রসায়নে ভালো করার পরামর্শ দিয়েছেন রেনাটা লিমিটেড-এর সিইও কায়সার কবির। যারা ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পে ক্যারিয়ারে সফলতার দেখা পেতে চান তাদেরকে বিভিন্ন বিষয় যেমন রোগ-প্রতিরোধবিদ্যা, জিনোম, ঔষধবিজ্ঞানসহ আরও অন্যান্য ক্ষেত্রে নিয়মিত আপডেটেড থাকতে হবে বলে জানান তিনি।

ডেটা অ্যানালিস্ট, কর্পোরেট সেক্টর

উন্নয়নশীল যেকোনো অর্থনীতির জন্য মার্কেটিং ও বিক্রয় দুটোর গুরুত্বই সবসময় বজায় থাকবে। ডিজিটাল মার্কেটিং বা সরাসরি মার্কেটিং, দুটোই যেকোনো ব্যবসার ক্ষেত্রে ভীষণ জরুরি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জন্য কনটেন্ট নির্মাণের মাধ্যমে টার্গেট অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছানোর মতো ডিজিটাল মার্কেটারের যেমন দরকার, তেমনিভাবে প্রয়োজন সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট-এরও।

কর্পোরেট সেক্টরের ক্ষেত্রে যেমন গতানুগতিক মার্কেটিং, বিক্রয়, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি ভবিষ্যতেও বহাল তবিয়তে টিকে থাকবে, তেমনিভাবে এ সেক্টরে বিশাল পরিমাণে ডেটা বিশ্লেষণ বা বিগ ডেটা অ্যানালাইসিস-এর গুরুত্বও ক্রমশ বৃদ্ধি পাবে।

আরও পড়ুন: ফেসবুক আইডির পাসওয়ার্ড হাতিয়ে নিচ্ছে পরিচিত যে অ্যাপ

বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুপালি চৌধুরী বলেন, ‘বিগ ডেটা অ্যানালাইসিস বড় প্রভাব ফেলবে। এ বিষয়ের পেশাদার ও দক্ষ মানুষদের চাহিদা বেড়ে যাবে বৈশ্বিকভাবে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ চাহিদা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাবে।’

ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং, রেডিমেইড গার্মেন্টস

বাংলাদেশে অধিকাংশ বড় পোশাক কারখানাগুলোতে আইই থাকলেও বেশিরভাগ কারখানাতেই এখনো এ পদের অস্তিত্ব নেই। কিন্তু বর্তমানে দৃশ্যপট এমন হলেও ভবিষ্যতে আইই হবে সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন পেশা।

স্প্যারো গ্রুপ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম জানান, বাংলাদেশে বর্তমানে দক্ষ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ার-এর সংকট চোখে পড়ার মতো। অনেক ক্ষেত্রেই ভারতীয় ও শ্রীলংকান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ার-এর ওপর নির্ভর করতে হয়।

শোভন মনে করেন, কেউ যদি এখন থেকেই এ পেশার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে, তাহলে ভবিষ্যতে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। তিনি প্রত্যাশা করেন সামনে দেশের গার্মেন্ট কারখানাগুলো বাংলাদেশি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ার দ্বারাই স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে।

রোবোটিকস প্রসেস অটোমেশন, ইনফরমশন টেকনোলজি

বর্তমানে যেভাবে প্রযুক্তির অগ্রগতি হচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতে তথ্য প্রযুক্তি (আইটি) খাতে কোন চাকরির চাহিদা বেশি হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

তবে আইটি প্রতিষ্ঠান রাইজআপ ল্যাবস-এর সিইও এরশাদুল হক মনে করেন, আইটি খাতে রোবোটিকস প্রসেস অটোমেশন (আরপিএ)-এর উচ্চ চাহিদা থাকবে।

এরশাদুল হকের মতে, শিক্ষার্থীদের একটি প্রযুক্তি বেছে নিয়ে সেটির ওপর কাজ করা উচিত। তাদের উচিত ওই প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা, প্রযুক্তিগুলোর সরাসরি সংস্পর্শে আসার চেষ্টা করা, বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে শেখা, বৈশ্বিক পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা ও খোঁজখবর রাখা, ওই প্রযুক্তির ওপর নিজেদের মনোযোগ ধরে রাখা ও প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট পড়াশোনা করা। আগামী পাঁচ থেকে দশ বছরে এ খাতের চাহিদা বাড়া শুরু হবে বলেই অভিমত তার।

প্রোডাক্ট ডিজাইন অ্যান্ড ফ্যাসিলিটেশন, কৃষি

কৃষিভিত্তিক স্টার্টআপ ই-খামার-এর উদ্যোক্তা ও সিইও দীপ্ত সাহা বাংলাদেশের কৃষিখাতকে চার অংশে ভাগ করেছেন। এগুলো হচ্ছে ইনপুট (বীজ, সার, কীটনাশক, চারা, যন্ত্রপাতি); অ্যাডভাইজরি (কৃষি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিস্তৃত সেবা, পশু-চিকিৎসা ইত্যাদি); অর্থনীতি (ধার, ঋণ, ভবিষ্যৎ চুক্তি); ও মার্কেট সুবিধা (যথাসময়ে ন্যায্যদামে ফসল বিক্রয়)।

এরকম একটি দৃশ্যপটে প্রোডাক্ট ডিজাইনার ও ফ্যাসিলিটেটরের পদ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দেবে বলে মনে করেন দীপ্ত সাহা।

কৃষি বিষয়ের শিক্ষার্থীদের সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার পরিচালনা করার জন্য আরও প্রাযুক্তিক জ্ঞানের প্রয়োজন হবে। এর পাশাপাশি এসব পেশায় কাজ করতে হলে বাজার পরিস্থিতি ও ভোক্তার আচরণ বুঝতে হবে। কোনো কৃষকই শুধু শুধু চোখ ধাঁধানো প্রযুক্তি আর বইয়ের লেকচার শুনে টাকা ঢালবে না।