৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৩:৪৮

ধীর গতিতে হলেও খুলছে সরকারি চাকরির নিয়োগজট

অপেক্ষায় চাকরিপ্রত্যাশী যুবকেরা  © প্রতীকি ছবি

করোনা প্রকোপ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসায় খুলছে বিভিন্ন স্তরের সরকারি চাকরির নিয়োগজট। ধীর গতিতে হলেও আসতে শুরু করেছে নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। তবে বেশিরভাগ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে পদের চাহিদা খুবই কম। যাতে কিছুটা হতাশ চাকরীপ্রত্যাশী যুবকেরা।

করোনার কারণে সরকারি চাকরিতে বয়সসীমায় ছাড় দিলেও নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতায় অনুমোদিত পদের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ খালি রয়েছে। সর্বশেষ প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অনুমোদিত পদের সংখ্যা ১৮ লাখ ৮৫ হাজার ৮৬৮টি, শূন্যপদ ৩ লাখ ৮০ হাজার ৯৫৫টি। এর মধ্যে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ১৭ হাজার ৭৩৯টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে শূন্যপদ ৫ হাজার ৬৮টি। অধিদপ্তরগুলোতে ১৪ লাখ ৯ হাজার ৬২৬টি পদের বিপরীতে শূন্য ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৩৬টি। বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি, এইএনও ও এসি ল্যান্ড অফিসে ৪৭ হাজার ৩৩টি পদের বিপরীতে শূন্য ১৪ হাজার ৮৫১টি।

এছাড়া স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও করপোরেশনের অনুমোদিত ৪ লাখ ১১ হাজার ৪৭০টি পদের বিপরীতে শূন্য ১ লাখ ২৭ হাজার ৭০০। পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৬-২০১৭ সালে সর্বশেষ শ্রম জরিপের তথ্য অনুযায়ী দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৮০ হাজার।

প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথম (৯ম গ্রেড ও তদূর্ধ্ব) ও দ্বিতীয় শ্রেণির (১০ম গ্রেড) কর্মচারী বাছাই করে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এতে দুর্নীতি বা অনিয়মের অভিযোগ তুলনামূলক কম ওঠে। এসব পদে শূন্যপদের সংখ্যাও কম। তৃতীয় (১১ থেকে ১৬ গ্রেড) ও চতুর্থ শ্রেণির (১৭ থেকে ২০তম গ্রেড) কর্মচারী নিয়োগের দায়িত্ব স্ব স্ব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধিদপ্তরের হাতে।

এভাবে পৃথক নিয়োগ ব্যবস্থা থাকার কারণে নীচু পদের নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। যে কারণে যে কোনো প্রতিষ্ঠানে নিয়োগে ধীরগতি, মামলাসহ বিভিন্ন জটিলতার সৃষ্টি হয়ে বছরের পর বছর পদ খালি পড়ে থাকে। সম্প্রতি অস্বচ্ছতার অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ২ হাজার ৬৮৯ জনের একটি নিয়োগ বাতিল করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে প্রতিবছর সৃষ্টি হওয়া নতুন পদে নিয়োগ দেওয়ার ধীরগতিও শূন্যপদ বাড়ার আরেকটি কারণ বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ‘ধীরে চলো নীতি’ অনুসরণ করছে। জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কেন্দ্রীয়ভাবে এক জায়গা থেকে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগ নিশ্চিত করা গেলে একদিকে দুর্নীতি কমবে, অন্যদিকে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় গতি আসবে।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বুধবার বলেন, একজন সরকারি কর্মচারী দীর্ঘদিন সরকারকে সেবা দেন। এ কারণে অনেক যাচাই-বাছাই করে প্রার্থী বাছাই করা হয়। তিনি বলেন, সময় বেশি লাগলেও ৩০-৩৫ বছরের জন্য স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য কর্মী যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া উচিত নয়।

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফিরোজ মিয়া বলেন, প্রতিবছর কতজন চাকরিজীবী অবসরে যাবেন তা হিসাব করে আগে থেকে উদ্যোগ নিলে নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতা কমানো সম্ভব। তিনি বলেন, এখন প্রযুক্তির যোগ। একজন কর্মচারী চাকরিতে যোগ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তার অবসরের তারিখও নির্ধারণ হয়ে যায়। এই বিষয়ে পরিকল্পিত উপায়ে উদ্যোগ নেওয়া শুরু করলে সহজেই নিয়োগজট কেটে যাবে।

ছোট নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বেশি : সরকারি চাকরিতে নিয়োগে বড় যে কয়েকটি জায়াগা আছে তার মধ্যে অন্যতম ক্ষেত্র বাংলাদেশ রেলওয়ে। প্রতিষ্ঠানটিতে মোট পদ আছে ৪৭ হাজার ৩৬০টি। বর্তমানে শূন্যপদ আছে ২৩ হাজার ৩৪৩, যা মোট জনবলের প্রায় অর্ধেক। আগামী তিন বছরে ১৫ হাজার শূন্যপদে নিয়োগের পরিকল্পনা করছে রেলওয়ে।

এর মধ্যে চলতি মাসে সহকারী স্টেশন মাস্টার পদে মাত্র ২৩৫ জন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। রেল মন্ত্রণালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, চলতি বছরের শুরুর দিকে ১০-১২ হাজার জনবল নিয়োগের পরিকল্পনার কথা মন্ত্রী বলেছিলেন। নিয়োগ পরিকল্পনার মোট সংখ্যা সময়ে সময়ে বাড়ে-কমে কিন্তু বাস্তবে সেটার প্রতিফল দেখা যায় না। এদিকে আগামী তিন বছরে আরও প্রায় তিন হাজার চাকরিতে অবসরে যাবেন বলে জানা গেছে।

এছাড়া বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নিয়মিত প্রকাশ হচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে ওয়্যারলেস অপারেটর পদে ৬ জনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। আবেদনের শেষ দিন ২৫ অক্টোবর। বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিসে ডুবুরি পদে ১৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।

সরাসরি সাক্ষাৎকারে আগ্রহী প্রার্থীদের আগামী ৩ অক্টোবর বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা স্থানে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। বন অধিদপ্তরের ২১ জনকে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে জুনিয়র ওয়াইল্ডলাইফ স্কাউট পদে ৪ জন ও অফিস সহায়ক পদে ১৭ জনকে নেওয়া হবে।

আবেদন করা যাবে আগামী ২১ অক্টোবর পর্যন্ত। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায় মিলিয়ে ৯শ পদের মধ্যে প্রায় পৌনে ৩শ পদই শূন্য। গত রোববার সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটি শূন্যপদে জনবল নিয়োগে তাগিদ দিয়েছে বলে জানা গেছে।

মাঝারি আকারের দু-একটি বিজ্ঞপ্তিও এসেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে ২ হাজার ২২৩ জন নিয়োগ দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। ২৮টি জেলার প্রার্থীরা আগামী ১২ অক্টোবর পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন। বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে টিআরসি (ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল) পদে সারা দেশ থেকে ৩ হাজার জনকে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে পুলিশ অধিদপ্তর। এর মধ্যে নারী নিয়োগ পাবেন ৪৫০ জন, পুরুষ নেওয়া হবে ২ হাজার ৫৫০ জন। টিআরসি পদে আবেদনের সময় ৭ অক্টোবর পর্যন্ত।

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে অন্যান্য চাকরির বিজ্ঞপ্তি বন্ধ থাকলেও বিসিএসের ক্ষেত্রে নিয়মিত রাখার চেষ্টা করেছে সরকার। তাই এই চাকরির প্রার্থীরা বয়স ছাড় পাচ্ছেন না। আগামী নভেম্বরের দিকে ৪৪তম বিসিএস-এর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রস্তুতি নিচ্ছে পিএসসি। ইতোমধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে পদের চাহিদা জমা পড়ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। এবার অন্যান্য বারের চেয়ে বেশি পদে বিজ্ঞপ্তি আসতে পারে পিএসসি সূত্রে জানা গেছে।

এর আগে গত ১৯ আগস্ট বিসিএস ছাড়া অন্য সব সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা পার হওয়া প্রার্থীদের ২১ মাসের বয়স ছাড় দিয়েছে সরকার। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকাশিতব্য বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীদের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ২০২০ সালের ২৫ মার্চ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।