বেড়েই চলেছে বেকারত্বের সংখ্যা
করোনা মহামারিতে স্থবির হয়ে পড়েছে ব্যবসা, শিক্ষা ও অর্থনীতির মত বড় বড় খাতগুলো। একেরপর এক লকডাউনে সবচেয়ে বেশি বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে চাকরির বাজার। সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রয়েছে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া। এরমধ্যে অনেক কোম্পানি তাদের পুরাতন কর্মীদের ছাঁটাইও করেছে। ফলে বেড়েই চলেছে কর্মহীনদের সংখ্যা।
অন্যান্য বছরের তুলনায় করোনায় এ দেড় বছরে চাকরি কমেছে প্রায় ২৯ শতাংশ, এ বছর শেষে যা ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। অন্যদিকে, অনেক চাকরিপ্রার্থীর বয়সও শেষ হয়ে যাচ্ছে এ করোনা মহামারীতে। যার ফলে চাকরিপ্রার্থীদের হতাশা ও মানসিক চাপ বেড়েই চলেছে।
সর্বশেষ ২০১৭ সালে শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী ছয় কোটি ৩৫ লাখ। আর তাদের মধ্যে কাজ করে ছয় কোটি আট লাখ নারী-পুরুষ। কর্মক্ষম থেকে কর্মরত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাদ দিলে বেকারের সংখ্যা ২৭ লাখ। করোনাকালে যে লাখ লাখ মানুষ কাজ হারিয়ে নতুন করে বেকার হয়েছে তাতে বেকারত্বের হিসাব ভয়াবহ অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। শ্রমবাজার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দেশে চাকরির যে বাজার, তাতে প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা ৪৭ শতাংশ গ্র্যাজুয়েটের চাকরি পাওয়ার সুযোগ হয় না।
চাকরিপ্রার্থীদের বড় দুশ্চিন্তার কারণ সরকারি চাকরির নিয়োগ ও নির্বাচনী পরীক্ষা স্থগিত হয়ে থাকা। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, দেশে মাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী তরুণের এক-তৃতীয়াংশ বা ৩৩.৩২ শতাংশই পুরোপুরি বেকার। আর ১৮.১ শতাংশ পার্টটাইম বা খণ্ডকালীন কাজে নিয়োজিত। এই পরিস্থিতিতে সরকারি-বেসরকারি কোনো সংস্থার চাকরির বিজ্ঞপ্তি না থাকা এবং আগের চাকরির পরীক্ষাগুলোও অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত থাকায় শিক্ষিত বেকারদের ভবিষ্যৎ পড়েছে চরম অনিশ্চয়তায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড ক্রিমিনাল জাস্টিস বিভাগের অধ্যাপক জিয়া রহমান বলেন, আমরা একটি কঠিন সময় পার করছি। ঘরবন্দি মানুষের কোনো সামাজিকতা নেই। এতে মানুষের মনে ব্যাপক চাপ পড়ছে। বেকারত্ব, আয় কমে গেলে মানুষ অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। মানসিক ডিপ্রেশন, সাইকোপ্যাথ, এলিয়েনেশন কাজ করবে, স্পৃহা হারিয়ে গেলে মানুষ কোনো না কোনোভাবে নেতিবাচক কাজ করবে। তাই বেকারদের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে, দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ানো, হস্তশিল্প, কারখানার চাকরি, দরজির কাজ এবং হালকা প্রকৌশলের মতো ক্ষেত্রে সাধারণত তরুণীদের কর্মসংস্থান হতো। কিন্তু এই খাতগুলোই মহামারিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। খাতগুলোকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা খুব কঠিন ও সময়সাপেক্ষ, তাই করোনাকাল শেষেও তরুণীদের জন্য চাকরিতে ফিরে আসতে অসুবিধা হবে।
বেসরকারি চাকরির পাশাপাশি সরকারি চাকরিতেও নিয়োগ কমে গেছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে ১৮ লাখ ৮৫ হাজার ৮৬৮টি অনুমোদিত পদ রয়েছে। এসবের বিপরীতে ১৫ লাখ চার হাজার ৯১৩ জন বর্তমানে কর্মরত। শূন্য আছে তিন লাখ ৮৭ হাজার ৩৩৮টি পদ। বর্তমানে শূন্যপদের মধ্যে ৪৬ হাজার ৬০৩টি প্রথম শ্রেণির, ৩৯ হাজার ২৮টি দ্বিতীয় শ্রেণির, এক লাখ ৯৫ হাজার ৯০২টি তৃতীয় শ্রেণির এবং ৯৯ হাজার ৪২২টি চতুর্থ শ্রেণির।
‘চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ চাই’ নামের একটি প্ল্যাটফর্মের কেন্দ্রীয় টিমের সদস্য তানভীর হোসেন বলেন, করোনার দেড় বছরে মাত্র একটা বিসিএস পরীক্ষা হয়েছে। বড় চাকরির বিজ্ঞপ্তি নেই বললেই চলে। এই সময়ে প্রায় দেড় লাখ উচ্চশিক্ষিত চাকরিপ্রার্থী তাদের বয়স হারিয়েছেন। সরকারের কাছে করোনাকালীন প্রণোদনা হিসেবে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ বছর করার দাবি জানাচ্ছি।