শিক্ষকতা ছেড়ে আমের ব্যবসা করছেন রাজশাহীর মেয়ে আফসানা
আফসানা নাটোরের রানি ভবানী কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন। এর পর থেকেই রাজশাহী শহরে বাস। ২০১৪ সালে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন রাজশাহী কলেজ থেকে।ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী আফসানা চাকরিও শুরু করেছিলেন ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে। পেশায় খ্যাতিও জুটেছিল, কিন্তু ভালো লাগেনি।
উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের অনলাইন পেজকে কৃষিপণ্যে সাজাতে গিয়ে নিজেও হয়ে গেছেন পাকা কিষানি। ২০১৬ সালে আম দিয়ে শুরু। এখন পণ্যতালিকায় জায়গা করে নিয়েছে কুমড়াবড়ি, মধু, শর্ষের তেল, ঘি, নারকেল তেল, খুলনার চুইঝাল, শ্রীমঙ্গলের চা-পাতা ও আত্রাইয়ের নন্দীগ্রামের খেজুর গুড়।
এ কাজের শুরুটা হয়েছিল প্রিয়জনকে উপহার পাঠানোর শখ থেকে। রাজশাহীর বাইরে থাকা স্বজন ও প্রিয় শিক্ষকদের আম পাঠাতেন আফসানা। একবার এক শিক্ষক পরামর্শ দিলেন, ‘এভাবে হয় না। এর চেয়ে তুমি উদ্যোক্তা হয়ে যাও। আমাদের খাঁটি জিনিস পাঠাও। তোমার ব্যবসা হবে। আমরা ভালো জিনিস খেতে পারব।’ সেই কথা মনে ধরে যায় আফসানার। স্কুলের চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে উদ্যোক্তা হয়ে গেলেন। আমের পাশাপাশি ক্রেতারা চাইলেন কুমড়াবড়ি। তিনি রাজশাহীর পবা উপজেলার দামকুড়া এলাকায় নারীদের একটি দল গঠন করলেন। বসে থেকে তাঁদের কাছ থেকে কুমড়াবড়ি তৈরি করে নেন। ক্রেতারা খেয়ে খুব খুশি।
এরপর এল খেজুর গুড়ের মৌসুম। ক্রেতারা গুড় চায়। এবার নিজ গ্রাম আত্রাই উপজেলার নন্দীগ্রামের গাছিদের সঙ্গে চুক্তি করলেন। দাম যা-ই হোক, আসল গুড় দিতে হবে। আফসানার ভেতরে কোনো হতাশা বাসা বাঁধার সুযোগ পায়নি। বললেন, প্রথম বছরে সাত লাখ টাকার শুধু গুড়ই সরবরাহ করেছেন।
একইভাবে চাহিদা এল ঘি, নারকেল তেল ও মধুর। খাঁটি ঘি তৈরির জন্য রাজশাহীর বাঘা, আড়ানী ও নাটোরের লালপুরে তিনি কারিগর ঠিক করেছেন। তাঁদের কাছ থেকে তিনি এক নম্বর ক্রিমটা সংগ্রহ করেন। এই ক্রিমের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়ে গেছে। যখন যেখানে এক নম্বর ক্রিম পান, সেখান থেকেই সংগ্রহ করেন। তা দিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাসায় বসে ঘি তৈরি করেন। একইভাবে তৈরি করেন নারকেল তেল। চা-পাতা পাঠানোর জন্য শ্রীমঙ্গলে রয়েছে নিজস্ব লোক। খুলনায় একটি দল রয়েছে, তারা নিয়মিত চুইঝাল পাঠায়। আর তিনি রাজশাহীতে বসে সারা দেশে সরবরাহ করেন। এভাবেই এখন তাঁর কিষাণীর নিয়মিত ক্রেতা ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে।
আফসানার বাসা রাজশাহী নগরের মহিষবাথান এলাকায়। বাবা, মা ও ছোট ভাই আদর আল আইয়ানকে নিয়ে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন। সেখান থেকেই তাঁর ব্যবসা পরিচালনা করেন। তাঁর বাড়ি নওগাঁর আত্রাই উপজেলার নন্দীগ্রামে। বাবা আনছার আলী আত্রাইয়ের একটি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে অবসর নিয়েছেন।
চাকরির আয়ের উৎস অনেকটা নিরাপদ হলেও আফসানা স্বাধীনভাবে এখন ব্যবসাটাই করছেন। ব্যবসার সফলতার ব্যাপারে কতখানি আশাবাদী? আফসানার দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা, ‘দুই শত ভাগ।’